মো. সাখাওয়াত হোসেন
ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি

রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘চন্দনা কমিউটার ট্রেন’ ফরিদপুর রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে আবারো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ফরিদপুরের স্থানীয় জনগণ।

এসময় তারা রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের গতিরোধ করে বিক্ষোভ এবং কাফনের কাপড় শরীরে জড়িয়ে রেল লাইনে শুয়ে ট্রেনের গতিরোধ করে।

আজ শনিবার ভোরে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি করে ফরিদপুরের সর্বস্তরের জণগণ।

রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে আসা চন্দনা কমিউটার ট্রেন ভোর সাড়ে ৫টায় ফরিদপুর এসে পৌঁছালে ট্রেনটির গতিরোধ করে স্থানীয়রা। ফরিদপুর রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবী জানিয়ে এসময় তারা কাফনের কাপড় পরে রেললাইনে শুয়ে পরে বিক্ষোভ করতে থাকে।

বিক্ষোভের মুখে পড়ে ট্রেনটি প্রায় ৪০ মিনিট ফরিদপুর স্টেশনে অবস্থান করে। পরে ট্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবস্থানকারীরা সরে গেলে ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। এই সময়ের মধ্যে ট্রেনের যাত্রাবিরতি (স্টপেজ) না দেওয়া হলে লাগাতার কর্মসূচীর ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান তারা। এর আগে একই দাবীতে গত ৫ মে ট্রেন চালুর দিনও স্টপেজের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন স্থানীয়রা।

বিক্ষোভকারীরা জানান, বর্তমান সরকারের সাফল্যের আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন দুটি কমিউটার ট্রেন চালু। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, ফরিদপুরের উপর দিয়ে গেলেও ফরিদপুর রেলস্টেশনে কোন স্টপেজ রাখা হয়নি। এতে ফরিদপুরের চাকুরীজীবিরাসহ সাধারণ যাত্রীরা সুলভে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অনতিবিলম্বে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এই চন্দনা কমিউটার ট্রেনের স্টপেজের দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরো বলেন, গত ৫ মে ট্রেন চালুর দিনে স্টপেজের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। আজ আবারো কর্মসূচী পালন করেছি আমরা, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্টপেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা না হলে লাগাতার কর্মসূচী শুরু করা হবে।

এবিষয়ে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের পরিচালক রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুতই স্থানীয়দের দাবীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মূলত একটি ট্রেন দুটি ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হবে দুটি রুটে দুটি নামে। রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি এসে ভাঙ্গায় যাত্রবিরতি নেবে। সেখানে ইঞ্জিন বদলে আবার ঢাকা যাবে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস’। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চন্দনা এক্সপ্রেস’।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন পদ্মা সেতু ও মাওয়া স্টেশন হয়ে ৯টার মধ্যে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছাবে। এর আগে ট্রেনটিই রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৫টায়। সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেনটি কমলাপুর থেকে আবারো একই রুটে ফিরে আসবে। কর্মজীবী যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনে চড়ে স্বল্প খরচে বাড়ি থেকে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবেন।

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এই কমিউটার ট্রেন ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসনের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এই ট্রেনে শোভন চেয়ারে শিবচর থেকে ঢাকার ভাড়া ২০৫ টাকা এবং ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ২২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা পথে বাণিজ্যিকভাবে নতুন করে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে ৪মে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম এমপি।

তবে ফরিদপুর রেলস্টেশনে কোন যাত্রাবিরতি না থাকায় এ নিয়ে ফরিদপুরের রেলযাত্রীদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এনএ/