মধ্যরাতে ছাত্রীকে চা খেতে ডাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজন সাহা
প্রকাশ: ০৫ মার্চ, ২০২৪, ০৮:২০ সকাল
নিউজ ডেস্ক

ছাত্রীকে মধ্য রাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অঙ্ক বোঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, মেসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিওর লিংক শেয়ার করার মতো নানা অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।

আরও জানা গেছে, জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানকে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে জানালে, তিনি ভুক্তভোগীকে উল্টো একাধিক শর্ত দেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলতানার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।

গতকাল রোববার (৩ মার্চ) ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘২০১৯ সালে প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহা স্যার আমাকে নানা ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথম দিকে ভালো মেসেজই দিতেন, তাই আমি বিষয়টাকে এড়িয়ে চলেছি। নানান সময়ে নানান কথায় একটু খটকা লাগলেও আমি ইগনোর করেছি। ভেবেছি, স্যার মনে হয় আমাকে স্নেহ করেন এই কারণে মেসেজ দেন। এভাবে চলে আসে ২০২১ সাল। ২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখে রাত ১টা বেজে ৩৩ মিনিটে উনি আমাকে মেসেজ দেন, “আসেন চা খাই।” আমি ফরমালি উত্তরে বললাম, “স্যার অবশ্যই, এনিটাইম।” উনি রিপ্লাইয়ে বললেন, “আমি যদি বলি এখনই?” আমি উত্তরে বললাম, “এখন তো পসিবল না স্যার। অনেক রাত হয়ে গেছে।” পরে উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন, “না এখন না।’”

শিক্ষকের এমন সব অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ওই ছাত্রী নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা, নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায়, আটকে যায় থিসিস পেপারসহ আরও অনেক একাডেমিক বিষয়াবলি। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোগান্তি।

সর্বশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খোলেন ভুক্তভোগী, সাংবাদিকদের জানান দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময় ভোগান্তির শিকার হওয়ার ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক ধাপে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।

এই ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানাজানি হলে দীর্ঘ সময় ধরে নীরবে নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে অন্তত পনেরো জন ছাত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের আপত্তিকর কথোপকথন। একপর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে ছয় দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তাঁরা। ছয় দফা দাবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পেশ করেন। যেখানে তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষকদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি করেন।

দাবিগুলো হলো— অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকরিচ্যুত করা; অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা; শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; অনতিবিলম্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা; ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা এবং ৪৮ ঘণ্টার দাবি মধ্যে বাস্তবায়ন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে অফিসে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রেজুয়ান শুভ্র বলেন, ‘তাঁদের (শিক্ষার্থীদের) যে অভিযোগ, তাঁরা এটি বিভাগ বরাবর জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তবে সেটা তাঁরা করেননি। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ কই? অভিযোগ করলে হবে না, এর সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলে–মেয়েরা এসেছে, আমি আগামীকাল ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাআমা/