‘চাঁদাবাজি-সিন্ডিকেট বন্ধ ছাড়া রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’
প্রকাশ:
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:১১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্য মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন পথে পথে চাঁদাবাজি, অযৌক্তিক শুল্ক আরোপ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে ধাপে ধাপে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলের আইকন ভবনে রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্য মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই, নিত্যপণ্যসামগ্রী উৎপাদক ও আমদানিকারকরা ছাড়াও যেখানে অংশ নেন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এ সময় চাঁদাবাজি, অযৌক্তিক শুল্ক আরোপ ও সিন্ডিকেট বন্ধ না করা গেলে রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে এবারের রমজানে নিত্যপণ্যের ওপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও ন্যায্য মুনাফা করতে হবে। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম যাতে অস্বাভাবিক না হয়, সেজন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীর পক্ষে এফবিসিসিআই কথা বলবে না জানিয়ে এরপর তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। কৃত্রিম সংকট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদা চাইলে এফবিসিসিআই'র হটলাইনে কল করে তথ্য দিলে তা সরকারকে জানানো হবে। রমজানে বাজার তদারকির বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পুলিশ দিয়ে বাজার তদারকির দরকার নেই। বাজার কমিটির নেতারা করলেই হবে। পণ্যের মূল্য তদারকি না করলে ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে। ফলে প্রতিটি বাজার কমিটিকে নিজে থেকেই এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসময় রমজান উপলক্ষে পণ্যের যথেষ্ট মজুত আছে বলে জানান তারা এবং বলেন, এবারের রমজানে দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। নৈতিকতা না থাকলে সেমিনার করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার। আর কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, পণ্য বহনকারী ট্রাক থেকে কয়েক ধাপে চাঁদা নেওয়া হয়। ট্রাক থেকে পণ্য আড়তে নেওয়া, আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের গন্তব্যে যাওয়া পর্যন্ত স্তরে স্তরে চাঁদা দিতে হয়। এসব কারণে দাম বেড়ে যায়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথা উল্লেখ করে কাপ্তানবাজার আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি আবদুল মান্নান খান বলেন, বাজারে পণ্য এলে কিছু লোক দাম ঠিক করে দেন। সে দামেই বেচাকেনা হয়। দোকানিরাও মূল্যতালিকা ঝোলান না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, এটা স্পষ্ট। কৃষক কখনও দায়ী নন, আগে সিন্ডিকেট ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, রমজানে ডিমের চাহিদা কমে যায়। মুরগি তো ডিম দিতে থাকে। যোগান বেশি হওয়ায় ডিম নষ্ট হয়। রোজার সময় চাহিদার অতিরিক্ত ডিম হিমাগারে রাখার ব্যবস্থা করলে, পরে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। নতুবা রোজার পরে ডিমের দর নাগালে রাখা মুশকিল হবে। চাঁদাবাজি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সমর্থন করে এফবিসিসিআই পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, রাস্তায় পুলিশ, নেতা, মেয়র, জেলা প্রশাসক, শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা, ট্রাকে পণ্য বোঝাই-খালাসসহ সবখানে চাঁদাবাজি হয়। এ বিষয়ে তথ্য চাইলে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করতে পারবেন। চাঁদাবাজি বন্ধ ছাড়া দাম কমবে না। ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিলাসপণ্যের ক্যাটেগরিতে হওয়ায় খেজুর আমদানিতে এখনও উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান। কাস্টমস ইচ্ছামতো খেজুরের আমদানি মূল্য বেশি ধরে শুল্ক ধার্য করছে। গত চার-পাঁচ মাস অনুরোধ জানানোর পর শুল্ক কমানো হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এখনও ১১০ টাকার খেজুরে ১৪০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। এদিকে মাংস নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির দিকে ইঙ্গিত করে রোজার জন্য গরুর মাংস আমদানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম এরই মধ্যে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এটি নিয়ে যেন কোনও তেলেসমাতি না হয়। নির্বাচনের আগে হওয়া ৬৫০ টাকা কেজির গরুর মাংস হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। মসলার দামও অস্বাভাবিক। রোজার জন্য গরুর মাংস আমদানির অনুমতি ছাড়া বাজার স্বাভাবিক হবে না। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না অভিযোগ করে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলার ১১০ টাকা নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে ১২০ টাকার বেশি। তিনি বলেন, একদিকে দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে; অন্যদিকে বলা হয় শুল্ক, কর না দিলে উন্নয়ন হবে কীভাবে? পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আদায় করা হয়। এটি সরকারের দ্বিমুখী আচরণ। মসলায় অস্বাভাবিক কর আরোপ করা হয়েছে। চিনি আমদানিতে ৬৫ পয়সা শুল্ক কমিয়েছে। তাতে কী লাভ হয়েছে? এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত আছে। তবে এলসির ক্ষেত্রে ডলারের দর কারও কাছ থেকে ১২০, ১২৪ আবার কারও কাছ থেকে ১২৫ টাকা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তদারকি দরকার। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে রোজায় পণ্যের সংকট থাকবে না। দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিনিধি সারোয়ার জাহান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনিকে নিত্যপণ্য উল্লেখ করলেও এনবিআর সেটির ওপর বিলাসপণ্যের মতো শুল্ক আরোপ করেছে। হাআমা/ |