অবৈধ সোনার চালান ধরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে জোড়া খুন! 
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:২৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ৫ কিলোমিটার জুড়ে বাঘাডাঙ্গা গ্রাম। গ্রামটিতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসবাস। যেখানে বেশির ভাগ মানুষেরই পেশা কৃষি।

তবে গ্রামের বেশ কিছু মানুষ চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে গরু চোরাচালান করতেন, এখন সবাই সোনা চোরাচালান করেন বলে জানা গেছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) গুলি করে দুজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সোনার চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। সোনার অবৈধ চালান ধরিয়ে দেওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে হঠাৎ স্বর্ণ চোরাচালানকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সোনার চালান আটকের পর বিষয়টি দৃশ্যমান হয়। সর্বশেষ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) মহেশপুর উপজেলার মাটিলা সীমান্ত থেকে ৪০টি স্বর্ণের বার জব্দ করে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি। এসময় রিমন হোসেন নামের একজনকে আটক করা হয়।

পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০০১ সালের পর থেকে শুধু বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে চোরাচালানের সময় বিএসএফের গুলিতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজিবির দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মহেশপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ৩০৪টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। যেখানে ৩৮ কেজি ৪০ গ্রাম ওজনের ওই সোনার বাজারমূল্য আনুমানিক ২৬ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এ সময় আটজন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১২টি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের থেকে জানা যায়, স্বর্ণের অবৈধ চালান ধরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে, উপজেলার বাঘাডাঙ্গা বাজারে বেশকিছুদিন আগে ইব্রা-আকালে (তরিকুল ইসলাম) দুজন মিলে শামীম ও মন্টুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। ওই মারামারির ঘটনায় শামীমের মাথা কেটে যায়। ওই ঘটনায় ইব্রা ও আকালের বিরুদ্ধে মামলা হলে দুজনকে বেশকিছু হাজতবাস করতে হয়। জেল থেকে বের হয়ে ইব্রা ও আকালে বাড়িতে আসার পর শমীম ও মন্টুসহ লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা করে। এসময় হামলা থেকে বাঁচার জন্য অবৈধ অস্ত্র (আগ্নেয়াস্ত্র) তাদের দিকে তাক করে প্রথমে সতর্ক করে। তারপরও শামীম, মন্টু যখন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন তখন তারা গুলি করেন। ওই গুলিতে শমীম ও মন্টু মারা যান।

শামীমের চাচাতো ভাই মান্নান জানান, ২ মাস আগে বিজিবির হাতে স্বর্ণের একটি চালান ধরা পড়ে। গ্রামের আকালে (তরিকুল ইসলাম) ওই স্বর্ণের চালান ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ করে অন্য কারবারিরা। এ নিয়ে বাঘাডাঙ্গা বাজারে মারামারির ঘটনাও ঘটে। ওই মারামারিতে আকালেরা শামীমকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ওই ঘটনা এখনো মিমাংসা হয়নি। বুধবার শামীমরা আকালেদের বাড়িতে যায় প্রতিশোধ নিতে। এসময় ইব্রারা প্রকাশ্যে গুলি করে। এতে শামীমের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় এবং মন্টুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান  জানান, আমাদের প্রাথমিক ধারণা স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। যার কারণে দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

তিনি জানান, নিহত শামীমের ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তসহ জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

এনএ/