তালিবে ইলমদের প্রতি কিছু মূল্যবান নসিহত: মুফতি তাকি উসমানী
প্রকাশ:
১৩ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:৪৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
||মুফতি তাকি উসমানী|| যাহেরি তালিমের সঙ্গে বাতেনি তরবিয়ত জরুরি- তালিমের সঙ্গে তালিবে ইলমদের দ্বীনি ও আখলাকি তরবিয়তও অত্যন্ত জরুরি। তাই ইলম হাসিলের পাশাপাশি আমল-আখলাকের সংশোধন করাও নিজেদের দায়িত্ব জ্ঞান করুন। এ ব্যাপারে কোনো রকম অবহেলা করা যাবে না। কোথাও গাফলতি হলে আসাতিযায়ে কেরাম যে তাম্বীহ করবেন তা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। তাকবিরে উলার সঙ্গে বা-জামাত নামায আদায় করার ইহতিমাম করুন। তালিবে ইলমদের অভ্যস্ত হতে হবে, চলতে-ফিরতে কোনো না কোনো যিকির যেন তাদের মুখে থাকে। বিশেষত- سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلهِ، وَلَا إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ. পাশাপাশি দরূদ শরীফ অধিক পরিমাণে পাঠ করবে। সোহবতে আহলুল্লাহর ইহতিমাম ইসলামি সমাজের একটি মৌলিক নীতি- الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ. ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’ এটাকে স্বভাবজাত নীতিতে পরিণত করার জন্য তালিবে ইলমদের বিশেষভাবে চেষ্টা করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধাচরণ কিছুতেই বরদাশত করা হবে না। তালিবে ইলমদের যেহেনে যেন আহলুল্লাহর সোহবতের গুরুত্ব বদ্ধমূল হয়। এ কথা তাদের ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে, আহলুল্লাহর সোহবত ব্যতীত মানুষ সাধারণত প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহমুখিতা! মাদরাসাসমূহের প্রাণ- দ্বীনি মাদারিসের খেদমত করা একদিকে যেমন অনেক বড় নিয়ামত এবং সওয়াবের বিষয়, অপরদিকে তা বহুত বড় যিম্মাদারিও বটে। এ রাস্তায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যা হাসিমুখে মোকাবেলা করার জন্য আসবাবে যাহেরা (বাহ্যিক উপায়-উপকরণ) যতটা অবলম্বন করা জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি ‘রুজূ ইলাল্লাহ’ তথা আল্লাহমুখী হওয়া। এটা মাদরাসাসমূহের প্রাণ। আরবি কিতাবাদি ও শুরূহাত মুতালায় অভ্যস্ত হওয়া- সরফ ও নাহুর তামরিন ও ইজরার আলোকে কিতাব হল্ করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। উস্তাযের সামনে ইবারত পড়ে নিজের ভুলগুলো শোধরাতে হবে এবং সঠিক বিষয়টা কাওয়ায়েদের আলোকে বুঝতে হবে। ছাত্রদের আরবি হাশিয়া বা আরবি শরাহ মুতালায় অভ্যস্ত হতে হবে। আজকাল উর্দু শরাহ ও তাকরিরগুলো ছাত্রদের মূল উৎস পর্যন্ত পৌঁছার যোগ্যতাকে অনেক দুর্বল করে দিচ্ছে। এজন্য তাদের আরবি কিতাবাদি মুরাজাআত ও মুতালায় অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। তালিবে ইলমদের একাগ্রতা জরুরি- তালিবে ইলমদের এই হাকিকতটাও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, ইলমে দ্বীন কোনো অংশীদার বরদাশত করে না (ইলম চায় না, ইলম তলবের সাথে সাথে তালিবুল ইলমের মাঝে অন্য কিছুরও তলব থাক)। ইলম হাসিলের জন্য নিজেকে পুরোপুরি ইলমের হাওয়ালা করে দিতে হবে। الِعلْمُ لَايُعْطِيْكَ بَعْضَه حَتَّى تُعْطِيَه كُلَّكَ. ‘ইলম তার অংশবিশেষও তোমাকে দেবে না, যতক্ষণ না তুমি তোমার সবটুকু ইলমকে দিয়ে দেবে।’ সেজন্য ছাত্ররা পূর্ণ একাগ্রতার সঙ্গে মুতালাআ ও তাকরার করবে এবং সম্পূর্ণ মনোযোগসহকারে দরস শুনবে এবং বুঝবে। যতক্ষণ কোনো বিষয় বুঝে না আসবে ততক্ষণ যেন একজন তালিবে ইলমের মন স্থির না হয়। সেটা না বোঝা পর্যন্ত তার মন ব্যাকুল থাকবে। অপ্রয়োজনীয় দেখা-সাক্ষাৎ, গল্পগুজব এবং মোবাইল ব্যবহার তালিবে ইলমদের জন্য বিষ। এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকতে হবে। ইত্তিবায়ে সুন্নত ও আখলাকি সিফাতের ইহতিমাম- তালিবে ইলমদের ইত্তিবায়ে সুন্নতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। ইবাদাতের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, উত্তম আখলাক, ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকা, তাওয়াযু ও বিনয়, ধৈর্য ও সহনশীলতা, নির্মুখাপেক্ষিতা ও সংযম, সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতা- এগুলো অত্যন্ত উঁচু স্তরের সুন্নত। এগুলোর গুরুত্ব যেন তালিবে ইলমদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং এসব বিষয়ে যেন তারা কোনো ধরনের অবহেলা না করে। শৃঙ্খলা ও পরিপাটি দ্বীন ও সুন্নতের অনেক বড় দাবি। তাই সর্বাবস্থায় ছাত্ররা নিজেদেরকে এক বিশৃঙ্খল দলে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখবে এবং নামাজের বাইরে অন্যান্য সময়েও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার অনুশীলন করবে। সূত্র : মাসিক বেফাকুল মাদারিস (পাকিস্তান), জুমাদাল আখিরা ১৪৪৩ হি. এনএ/ |