ইরানে পরপর দুটি বিস্ফোরণ, নিহত শতাধিক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ১০:৪৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ইরানের ইসলামি রেভ্যুলেশনারি গার্ডের অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার সোলেইমানির সমাধির কাছে দুটি বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৯৫ জন নিহত হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোলেইমানি হত্যার চতুর্থ বার্ষিকীতে এই ঘটনা ঘটেছে।

কেরমান শহরের সাহেব আল-জামান মসজিদের কাছে একটি মিছিলে বিস্ফোরণ ঘটলে আরো কয়েক হাজার লোক আহত হয়। ভিডিওতে রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে ঘটনাস্থলে ছুটতে দেখা যায়।


স্থানীয় সময় বুধবার সোলেমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইরানের দক্ষিণপূর্বের নগরী কেরমানে তাঁর কবরের পাশে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে জানায় ইরানি কর্তৃপক্ষ। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সময় কাসেম সোলেইমানির ছবি সমন্বিত ব্যানারসহ একটি মিছিলে বিশাল জনতা অংশ নিয়েছে। এরপরেই একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং আতঙ্কিত হয়ে সবাইকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রথম বোমাটি স্থানীয় সময় দুপুর ৩টার দিকে কেরমানের পূর্ব উপকণ্ঠে সাহেব আল-জামান মসজিদের পাশে গার্ডেন অফ শহীদ কবরস্থান থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে বিস্ফোরিত হয়েছিল।


দ্বিতীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে প্রায় ১৫ মিনিট পরে এবং কবরস্থান থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে। 
কেরমান প্রদেশের গভর্নর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে বলেছেন, দুটি বিস্ফোরণই নিরাপত্তা চেকপোস্টের বাইরে ঘটেছে এবং কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে বোমার কারণে বিস্ফোরণগুলো হয়েছিল। তবে তিনি বলেন,  ‘দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে নাকি আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।’

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কট্টরপন্থী তাসনিম সংবাদ সংস্থা এর আগে সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছিল,‘বোমা রাখা দুটি ব্যাগ রিমোট কন্ট্রোলোর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটনো হয়েছিল।


’ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ইসনা বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ‘আমরা কবরস্থানের দিকে হাঁটছিলাম। তখন একটি গাড়ি হঠাৎ আমাদের পিছনে থেমে যায় এবং বোমা বিস্ফোরিত হয়। আমরা শুধুমাত্র বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি এবং লোকজনকে পড়ে যেতে দেখেছি।’
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাহরাম ইনোল্লাহি বলেছেন, ‘বিস্ফোরণে ৯৫ জন নিহত হওয়া ছাড়াও ২১১ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে ২৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদ বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। এ হামলার পেছনে কারা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘এই সন্ত্রাসী হামলার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’ ৪২ বছরের মধ্যে এটি ইরানে ঘটা সবচেয়ে মারাত্মক হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। 

প্রাথমিকভাবে মৃতের সংখ্যা ১০৩ বলে জানানো হয়েছিল। এরপর ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা সংশোধন করে বলেছেন, ‘কিছু নাম দুর্ঘটনাক্রমে দুবার নিবন্ধিত হয়েছিল।’ বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহ করা হচ্ছে আরব বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো সুন্নি জিহাদি গোষ্ঠী এই কাণ্ড ঘটাতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে তারা।

বুধবার সন্ধ্যায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইরানি জাতির শত্রুরা আবারও বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে এবং কেরমানে বিপুল সংখ্যক মানুষকে শহীদ করেছে। যারা নিরপরাধের রক্ত নিজেদের হাতে লাগিয়েছে এবং এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে তারা অবিলম্বে দৃঢ় এবং ন্যায্য শাস্তির মুখোমুখি হবে।’ তিনি আরো বলেন, “তাদের জানা উচিত, এই বিপর্যয়ের কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই বোমা হামলাকে ইরান বিদ্বেষী অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত কাজ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ইইউ বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানী জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে ‘নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন।

২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেমানি নিহত হয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ড্রোন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সোলেইমানিকে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা গত দুই দশকে শত শত আমেরিকান বেসামরিক নাগরিক এবং সেনাদের হত্যা করেছে। তবে সোলেইমানিকে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে দেখা হত। 

সূত্র: বিবিসি

এনএ/