ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ: কী বলছেন বিজ্ঞ আলেমগণ
প্রকাশ:
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৬:০১ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
|| হাসান আল মাহমুদ || পশ্চিমা বিশ্বের ওপর রাজত্ব কায়েম করে গড়ে ওঠা 'ট্রান্সজেন্ডারবাদ' নামে একটি মতবাদ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সভ্য সমাজের জন্য। বিভিন্ন দেশে এ মতবাদে আক্রান্ত হয়ে তৈরী হচ্ছে সামাজিক চরম বিশৃঙ্খলা। এই মতবাদ বলে, কোন পুরুষের যদি 'নিজেকে নারী বলে মনে হয়', তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন নারী হিসেবেই তাকে বিবেচনা করতে হবে। সেই পুরুষ শারীরিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হোক, তিন বাচ্চার বাপ হোক, কিছু আসে যায় না তাতে। ট্রান্সজেন্ডারবাদ বলে, ‘কোন নারীর নিজেকে যদি পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে হয় ১০০% সুস্থ। নিজেকে পুরুষ মনে করা নারী যদি সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেটা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, 'পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে!’ ইংরেজি শব্দ Transgenderism বা বাংলায় রূপান্তরকামিতা এই মতবাদ অনুযায়ী ‘কোনো বালকের যদি 'মনে হয়' সে বালিকা অথবা কোনো বালিকার যদি মনে হয় সে বালক, তাহলে এই 'মনে হওয়া'র ভিত্তিতে সেই বালক কিংবা বালিকাকে চাহিবামাত্র হরমোন ট্রিটমেন্ট আর বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে কাটাকুটি করে নিজের শরীরকে বদলে ফেলার 'অধিকার' দিতে হবে। তার এই 'মনে হওয়া'র চিকিৎসা করা যাবে না, বরং বদলে দিতে হবে শরীরকে।’ এমন অদ্ভূদ মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে বাংলাদেশেও আল্লাহর দেয়া সৃষ্টি পরিবর্তন করে বিকৃত ধরণের রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর তাদেরকে প্রমোট করে যাচ্ছে কিছু রুচিহীন মিডিয়াসহ এক শ্রেণির অসাধুপায়ীরা। এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বিজ্ঞ আলেমসমাজ। তাঁরা ট্রান্সজেন্ডারকে হারাম ঘোষণা করে সমাজিকভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান। জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়ার প্রধান মুফতি বহুগ্রন্থ প্রণেতা মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার বিলকুল হারাম। আল্লাহ বলেছেন- ‘লা তাবদিলা লিখলকিল্লাহ’। আল্লাহ যাকে যেভাবে বানাইছেন, তাতে পরিবর্তন সাধন করা শরিয়তে বিলকুল হারাম। এজন্য নারীদের বেশ কেউ ধারন করবে না, ভাববভঙ্গি নিবে না। এবং নারীরাও পুরুষের বেশ ধারন করবে না ও পুরুষের ভাবভঙ্গি নিবে না।’ ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক রোগ আখ্যায়িত করে এই প্রবীণ আলেম বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার একটি সামাজিক রোগ। এ রোগ বৃদ্ধির প্রবণতা সমাজের জন্য চরম ক্ষতিকর ও বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়ার একটা পশ্চিমা চক্রান্ত। আমাদের দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিককেই দায়িত্ব এ চক্রান্তকে সামাজিকভাবেই প্রতিরোধ করা।’
তিনি বলেন, ‘পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবার কারণে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। নাক কেটে কানের স্থানে প্রতিস্থাপন করা যেমন, লিঙ্গ পরিবর্তনের ধারণাটি একই রকম প্রকৃতি বিরুদ্ধ বিষয়।’ বাংলাদেশে যেন এই ব্যাধি ঢুকতে না পারে সে আহ্বান জানিয়ে গবেষক এই আলেম আরো বলেন, ‘ইসলাম বা সাধারণ বোধ বুদ্ধি কোনো দিক থেকেই এটা সমর্থন যোগ্য নয়। ব্যক্তি স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে পশ্চিমারা এটাকে বৈধ করতে চাচ্ছে। আত্মহত্যার স্বাধীনতাও চায় অনেকে, মানুষকে আল্লাহর বন্দেগি থেকে মুক্ত করে ফ্রিডম দেওয়া হলে এক পর্যায়ে আত্মহত্যার স্বাধীনতা চেয়ে বসে। তাই হয়েছে। আমাদের দেশে যেন এই ব্যাধি ঢুকতে না পারে, সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।’
২. শরিয়া আইন, এমনকি প্রচলিত আইন কার্যকর করা কঠিন হবে। ৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি ও মুছলাহ (অর্থাৎ সৃষ্টি পরিবর্তন) পরিবর্তনের অন্যায় পথ খুলে যাবে। ৪. সমকামিতার মত চরম মানবতাবিরোধী অপরাধের পথ সুগম করে দিবে এবং এর ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ৫. নারী ও পুরুষের একে অপরের সাথে সাদৃশ্য থাকা আইনত বৈধ হবে। যা সম্পূর্ণ ধর্ম ও বিজ্ঞান বিরোধী চিন্তাধারা। ৬. অশ্লীলতা ও অশ্লীলতার প্রচারণা বেড়ে উঠবে। ৭. উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এছাড়া ৮. ধর্ম ও রাষ্ট্র-সমাজে নারী পুরুষের জন্য বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন হাজার বিষয়াদি রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় দেখা দিবে। এ সময় তিনি রাষ্ট্র-সমাজ ও পরিবার ব্যবস্হা ভেংগে পড়ার সমূহ আশংকা তৈরী হবার কথা ব্যক্ত করে তার প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মুসলিম বিশ্ব ও অন্যান্য ধর্মের রাষ্ট্র সমূহের মত বাংলাদেশের সরকার ও নাগরিক সমাজের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের এই নিকৃষ্ট মানবতা ও ধর্ম বিরোধী পদক্ষেপকে দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। অন্যথায়, আমাদের সমাজে অসংখ্য অপরাধের আইনী ভিত্তি সৃষ্টি করে রাষ্ট্র-সমাজ ও পরিবার ব্যবস্হা ভেংগে পড়ার সমূহ আশংকা তৈরী হবে।’ এনএ/ |