এক বছরে হাদিসের কিতাব থেকে কতটা উপকৃত হতে পারছে তাকমীলের ছাত্ররা
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৮:৪৩ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| কাউসার লাবীব ||

কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) বিভাগে মাত্র এক শিক্ষাবর্ষে পড়ানো হয় কুতুবে সিত্তাহ’সহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি হাদিসের কিতাব। কিতাবগুলো হলো- সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবি দাউদ, সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ, শরহু মায়ানিল আছার (তাহাভী শরীফ), মুয়াত্তা মালেক ও মুয়াত্তা মুহাম্মদ।

ইসলামি গবেষকদের মতে হাদিসের এই কিতাবগুলোতে ইসলামের প্রায় বিষয়েরই সমাধান নিহিত। তাই পবিত্র কুরআনের পরে ওলামায়ে কেরামের কাছে এই কিতাবগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবগুলো মাত্র এক শিক্ষাবর্ষে পড়ানোর ফলে কওমি শিক্ষার্থীরা কতটা উপকৃত হতে পারছে এ থেকে? যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী উপকৃত হতে না পারে তাহলে এর কারণ কী? এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম দেশের দুই শিক্ষাবিদ আলেমের সঙ্গে।

এ বিষয়ে রাজধানীর জামিআ ইকরা বাংলাদেশের রঈস মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ বলেন, আমার মতে বর্তমান সময় ও শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বিবেচনায় তাকমীলের সময়টাকে বৃদ্ধি করা দরকার। এটা এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা যেতে পারে।

‘সময় বাড়ানোর পাশাপাশি সিলেবাসে কিছু বৃদ্ধি করা খুব প্রয়োজন। বর্তমান কিতাবগুলোর সঙ্গে উলুমুল হাদিস ও রিজালে হাদিসের কিছু কিতাব সংযুক্ত করলে ছাত্ররা এই কিতাবগুলো থেকে আরো বেশি উপকৃত হতে পারবে।’ -যোগ করেন তিনি

তার আরেকটি প্রস্তাব হলো, উস্তাদদের মাঝে তাকমীলের পাঠ্য কিতাব ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়বস্তুও ভাগ করে দেওয়া।

তিনি বলেন, বছরের শুরুতে যখন উস্তাদদের মাঝে কিতাব ভাগ করা হয় তখন বিষয়গুলোকেও নির্দিষ্ট করে ভাগ করে দেওয়া প্রয়োজন। যেমন, রফউল ইয়াদাইন, কেরাত খলফাল ইমাম, আমিন বিল জেহের ইত্যাদি আলোচনা সুনানে সবকিতাবেই আছে। তাই একেক কিতাবের উস্তাদদেরকে একেক বিষয় নির্ধারণ করে দিলে একই আলোচনা তাকরার হবে না। ছাত্ররাও কম সময়ে বেশি উপকৃত হবে।

তিনি জানান, আমার কিছু বন্ধু সাউথ আফ্রিকাতে বেশ বড় বড় কিছু মাদরাসা পরিচালনা করে থাকে। তারা কিতাবের পাশাপাশি বিষয় ভাগ করে তাকমীলের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করে। আমি দেখেছি, এর ফলে তারা বেশ উপকৃত হচ্ছে।

এদিকে এক বছরের দাওরার এতো বড় বড় কিতাব পড়ানোর কারণে ছাত্ররা হাদিসের কিতাব থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী ফায়দা অর্জন করতে পারছে কী না? জানতে চাইলে রাজধানীর মসজিদে আকবর কমপ্লেক্স এর মুহতামিম মুফতী দিলাওয়ার হোসাইন বলেন, আমাদের নজরিয়া হল, আকাবিরের নকশে কদম থেকে দূরে না সরা। আমাদের আকাবিররা তো দাওরায়ে হাদিস এক বছরেই পড়ে এসেছে। বড় বড় যারা আলেম হয়েছেন এক বছর পরেই হয়েছেন। এখন হবে না কেন! চাইলে এখনো হবে।

তার বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার কামিলকে  দুই বছর তো করা হয়েছে। এর ফলে কতটুকু ফায়দা হয়েছে। আমার জানামতে কিছুই হয় নাই। আমাদের ছেলেরা এক বছরে যতটুকু পড়ে তারা কি ততটুকু দুই বছরের করতে পারে। পারেনা। তাহলে কি লাভ হলো। কওমি মাদ্রাসায়ও যদি দুই বছর করা হয় এমনই হবে। লাভ নাই। তাই আমার খেয়াল এক বছরই ভালো।

‘দুই বছর না করে মেশকাতে নুখবাতুল ফিকার অথবা মুকাদ্দামাতুশ শায়খকে যদি ভালোভাবে পড়ানো হয় তাহলে ছাত্ররা দাওরায় আরো বেশি উপকৃত হবে।’ –যোগ করেন এই শিক্ষাবিদ

তার মতে, বর্তমানে আমরা গড়ে সব ছাত্রকে দাওরায় ভর্তি করে ফেলি। সে দাওরার যোগ্য কি যোগ্য না, সেটা দেখি না। ওইটা খেয়াল করা দরকার। যোগ্য ছাত্রদের যদি দাওরায় ভর্তি করানো হয় এবং ওস্তাদরা যদি খেয়াল করে পড়ায় তাহলে ইনশাআল্লাহ এক বছরই ছাত্রদের জন্য যথেষ্ট হবে।

দীর্ঘ সময় ধরেই তো এক শিক্ষাবর্ষে এই কিতাবগুলো পড়ানো হচ্ছে তাহলে এখন কেন সময় বাড়ানোর প্রশ্ন উঠছে? এমন প্রশ্ন করা হলে মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ দাওরায় ইস্তেদাদ ছাড়া ছাত্র ভর্তির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগে যারা দাওরা পড়তে আসতো তারা বয়স ও ইলমে অনেকটা পরিপক্ক হয়ে পড়তে আসতো। যেকোনো কারণেই হোক এখন আগের মতো ইস্তেদাদওয়ালা ছাত্ররা আসে না। অথচ দাওরার জন্য কমপক্ষে এতোটুকু যোগ্যতা থাকা আবশ্যক যে সে ইবারত পড়তে পারবে এবং এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারবে।

‘এসব কারণে অনেক সময় ক্লাসে এখন তরজমা এবং শাব্দিক বিশ্লেষণও করতে হয়। যার ফলে লম্বা একটা সময় এসবে চলে যায়; যা আগেকার সময়ে যেত না। এই সব দিক লক্ষ্য রেখে এক বছরের জায়গা দুই বছর করা দরকার।’ –মত দেন তিনি

কেএল/