যেসব কারণে ‘ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ’ সমাজের জন্য হুমকি
প্রকাশ:
১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৬:০৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
|| হাসান আল মাহমুদ || সম্প্রতি ‘ট্রান্সজেন্ডার’ নামে একটি অদ্ভূত মতবাদ প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ মতবাদের অধিকারীদের উপস্থিতি জানান দিতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের কাছে নানারকম দাবিও তারা উত্থাপন করছে। শুধু কর্মসংস্থানের দাবি নয়, জাতীয় সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চায় তারা। ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ কী? ইংরেজি শব্দ Transgenderism) এর বাংলা অর্থ হচ্ছে রূপান্তরকামিতা। রূপান্তরিত লিঙ্গ হলো সেসব ব্যক্তি, যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তবে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়। এই মতবাদ বলে, কোন পুরুষের যদি 'নিজেকে নারী বলে মনে হয়', তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন নারী হিসেবেই তাকে বিবেচনা করতে হবে। সেই পুরুষ শারীরিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হোক, তিন বাচ্চার বাপ হোক, কিছু আসে যায় না তাতে। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ বলে, ‘কোন নারীর নিজেকে যদি পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে হয় ১০০% সুস্থ। নিজেকে পুরুষ মনে করা নারী যদি সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেটা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, 'পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে'! এই মতবাদ অনুযায়ী কোনো বালকের যদি 'মনে হয়' সে বালিকা অথবা কোনো বালিকার যদি মনে হয় সে বালক, তাহলে এই 'মনে হওয়া'র ভিত্তিতে সেই বালক কিংবা বালিকাকে চাহিবামাত্র হরমোন ট্রিটমেন্ট আর বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে কাটাকুটি করে নিজের শরীরকে বদলে ফেলার 'অধিকার' দিতে হবে। তার এই 'মনে হওয়া'র চিকিৎসা করা যাবে না, বরং বদলে দিতে হবে শরীরকে। একজন সমাজসচেতন গবেষক জানান, ‘ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের বক্তব্য এতোটাই বিচিত্র, এতোটাই বিদঘুটে যে প্রথম শোনার পর কেউ বিশ্বাসই করতে পারে না আদৌ এমন কোনো মতবাদ থাকতে পারে। অনেকে মনে করেন হয়তো কোনো কারণে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। হয়তো এটা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন। হয়তো এটা মানবিক বিবেচনা আর অধিকারের বিষয়। হয়তো লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চাওয়া, নিজেদের বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেওয়া মানুষের শারীরিক কোনো সমস্যা আছে।’ এ মতবাদের প্রধান দাবি যেভাবে চলছে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রচার-প্রসার বাংলাদেশে ট্রান্সডেন্ডার গত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ দৈনিক প্রথম আলোতে ‘নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শারমিন আক্তার ঝিনুক নামে এক নারীর কথা বলা হয়েছে। এই মহিলা শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু 'অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট' হওয়ার কারণে তিনি 'নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত' হয়েছিলেন। নতুন নাম নেন জিবরান সওদাগর। জিবরান বলেন, 'আমি একজন নারী ছিলাম। মাসিকসহ সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি অন্য ছেলে বা পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়েছি। স্কুল ড্রেস ওড়না পরা বা মেয়েদের মতো পোশাক পরা পছন্দ করতাম না। এক সময় এক মেয়ের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। চার বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটা চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়, আমি যদি পুরুষ হতাম তাহলে সে এভাবে চলে যেত না। এছাড়া আরো অনেক পুরুষ নারীতে ও নারী পুরুষে রূপান্তরিত হতে দেখা গেছে নানা মাধ্যমে। দেশে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় আইন তিনি বলেন, ‘সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এক বছরের মধ্যে আইনটি করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকার চায় এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় হোক। তাই এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এখন কিছু পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের কাজ বাকি আছে। একই সঙ্গে তিনি এই আইনটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য এই কমিটিকেই একটি বিধি করার সুপারিশ করেন। কারণ আইন হলেও আইনের বিধি না থাকলে আইন কার্যকর হয় না।’ ‘ট্রান্সডেন্ডার’ আতংকের কেন তাদের বক্তব্য, ‘আমরা যখন প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে ভাবছি, ওরা তখন সামনের দশটা ধাপ ভেবে রেখেছে। বছরখানেকের মধ্যে হয়তো আমাদের এ বাংলাতেই ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের বৈধতা দেওয়া হবে। বিষাক্ত এ মতবাদ গ্রাস করে নেবে আমাদের সমাজকে। ফলে সমাজে ট্যান্সজেন্ডারবাদের হুমকি নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজসচেতন ব্যক্তিবর্গ। তাদের মতে, এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি করছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা।’ এছাড়া, ‘সাধারণ মানুষের তুলনায় এদের মধ্যে ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যার আশংকা থাকে বলে জানা গেছে একটি জরিপ থেকে। ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলাম যা বলে ট্রান্সজেন্ডার তথা যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে মর্মে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আল্লাহ সেসব মানুষদের উপর অভিসম্পাত করেছেন যারা তাঁর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনে’। -বুখারী, হাদীস নং ৪৮৮৬ সম্পূর্ণ সুস্থ শরীর নিয়ে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করে, বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরে, অনুকরণ করে এবং 'লিঙ্গ পরিবর্তন করে তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ -সুরা নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯ কেএল/ |