পিঁয়াজ সিন্ডিকেট: এক রাতেই দাম দ্বিগুণ
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৮:৫৫ সকাল
নিউজ ডেস্ক

সিন্ডিকেটের কারণে ফের বেড়ে গেছে পিঁয়াজের দাম। ভারতের পিঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর থেকে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। এক রাতের ব্যবধানে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পিঁয়াজ দ্বিগুণ দামে ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতীয় পিঁয়াজ কেজিতে ৮০-৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। এদিকে পিঁয়াজের দাম বেশি রাখায় সারা দেশে ১৩৩ ব্যবসায়ীকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে পিঁয়াজের অস্বাভাবিক দামের চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, শুক্রবার থেকেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পিঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে শুক্রবার ১২০ টাকা ধরে পিঁয়াজ কিনেছেন অনেকেই। আর গতকাল দেশি পিঁয়াজ ২১০ টাকার নিচে কোথাও পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও কেজিতে দাম চেয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা। রাজধানীর  মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট, কারওয়ানবাজার, শ্যামবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে দেখা  গেছে পিঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখি দাম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। এ জন্য পাইকাররা দেশি পিঁয়াজ ছাড়ছেই না। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে ভোরে যে দাম ছিল, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ৯টায় তা মণপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা বেড়েছে। বিকাল নাগাদ বাজারে পিঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যায়।

রায়েরবাগ বাজারের বিক্রেতা আলি নূর বলেন, ভোরে শ্যামবাজার থেকে বহু কষ্টে দুই মণ ভারতীয় পিঁয়াজ এনেছি। পাইকারিতে কিনেছি ৭ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। আনতে খরচ পড়ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি না করলে লোকসান হবে।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী স্মৃতি বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, শ্যামবাজারে পাইকারিতে দেশি পিঁয়াজের মণ ৮ হাজার ৮০০ এবং ভারতীয় পিঁয়াজ ৭ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় দাম বেড়েছে। একদিন আগেও আমরা প্রতি কেজি পিঁয়াজ পাইকারিতে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন সেটা ২২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মুড়িকাটা পিঁয়াজ বাজারে সম্পূর্ণরূপে উঠলে কমতে পারে দাম বলেন ওই ব্যবসায়ী।
শ্যামবাজারের রাজিব বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রদেশ পোদ্দার বলেন, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলারেই বন্দর দিয়ে পিঁয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। ভারতের পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পিঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানান তিনি। রায়েরবাগে বাজার করতে আসা ক্রেতা হানিফ মোহাম্মদ বলেন, বাজারে দেশি পিঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না। আর ভারতের পিঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুই দিন আগেও দেশি পিঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। দেশি পিঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মন মতো করে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে, কোথাও মনিটরিং হচ্ছে না। এদিকে পিঁয়াজের দাম বেশি রাখায় সারা দেশের ১৩৩ ব্যবসায়ীকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সারা দেশে ভোক্তা অধিদফতরের ৫৭টি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অধিদফতরের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান অধিদফতর।

প্রসঙ্গত, নিজেদের বাজারে পিঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী মার্চ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন ভালো না হওয়ায় ভারত নিজেদের বাজারে পিঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পিঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

এনএ/