আমরা টিকাদানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি : শেখ হাসিনা
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:০২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ইতোমধ্যে আমরা পোলিও নির্মূল করেছি। মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করেছি। টিকাদানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। টিকাদান কার্যক্রম সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেয়েছে, আমরা যথাযথ তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে, করোনা মোকাবিলায় সবকিছু বিনা পয়সায় করে দিয়েছি। সেখানে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।।

রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ২য় জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলন-২০২৩ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যাতে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে ওঠে, তার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালের সব যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স, বিশেষ করে শিশুদের চিকিৎসার জন্য ট্যাক্স একেবারে শূন্য করে দেই। বেসরকারি উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হয় সেজন্য তাদের উৎসাহিত করি। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দেই। যার জন্য সারা বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে।


শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সারাটা জীবন আমার বাবা সংগ্রাম করেছিলেন। সে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছি। তার সেই স্বপ্নপূরণই আমার একমাত্র লক্ষ্য। 

তিনি বলেন, কুষ্ঠ রোগ নির্মূল  করা যে সম্ভব এই সম্মেলন মধ্য দিয়ে আমাদের জ্ঞান অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করব। আমরা যে কি কি কাজ করেছি সেগুলো প্রচারে সুযোগ পাচ্ছি। প্রথমবার যখন আমরা সরকারে আসি তখন স্বাস্থ্য সেবার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেই।

সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ সালের সরকারে এসে বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট আমরা প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। তার কার্যক্রম শুরু করি।

শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করবো সেই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রায় দশ হাজারের মতো ক্লিনিক আমরা নির্মাণ করি, এর মধ্যে ৪০০০ চালু করি। এক বছরের মধ্যে এর সাফল্য প্রায় ৭০ ভাগ। মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কারণ বিনা পয়সা সেখানো ওষুধ দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আসতে পারেনি। তখন বিএনপি ক্ষমতা আসে।  প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া, সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দিকে বিশেষ নজর দেই। আমি ধন্যবাদ জানাই জাতিসংঘকে, জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ তাদের সম্মতিতে কমিউনিটি ক্লিনিককে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রণমূলক পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চিন্তাটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ছিল। এটা আমি নিজেই লিখেছিলাম। আমাদের স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন মোহাম্মদ আলী সাহেব, তার বাড়ি নরসিংদীতে। আমি তাকে দিয়ে বলি যে আমার এ ধরনের একটা ধারণা আছে, এটা কার্যকর করা যায় কি না, যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিয়ে যাচাই করে দেখবেন। প্রায় ছয় মাসের ওপরে তিনি এটা নিয়ে কাজ করেন। এটা নিয়ে আলোচনায় হয়, তারপরে আমরা এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সবগুলো থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি অনেক কুষ্ঠ রোগী মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একটা সুর করে ভিক্ষা চাইতে আসতো। যেকোনো অকেশনে তারা আমার কাছে আসতো। আমি তাদের কখনো অবহেলা করিনি। তারা এলে বসাতাম, খাদ্য দিতাম। তাদের আমি নগদ টাকা দিয়েও সহযোগিতা করতাম। কথা দিয়েছিলাম যে সরকারে যেতে পারলে তাদের জন্য ব্যবস্থা করব। সে ব্যবস্থাটা করেছি। কারণ, তারা এক ধরনের প্রতিনিধিত্ব জীবনযাপন করে।

স্বাস্থ্যকর্মী-ডাক্তার-নার্সসহ, বিভাগ, সংস্থা, সেই সঙ্গে সব নাগরিককে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবহেলা না করে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানাই প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, এরা আমাদের সমাজের অংশ পরিবারের অংশ একটা বাচ্চা শিশু যদি হিজড়া বা প্রতিবন্ধী হয় তার বাবা মা ফেলে দিতে পারে না। ফেলে দেওয়া উচিত না। আমরা কেন ফেলে দেব? তারা সম্পদেরও অংশীদার, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মেও আছে। কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া, স্বাস্থ্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

এনএ/