লক্ষ্মীপুর আলেম-উলামার ঘাঁটি : মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২৩, ০২:৩৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

হাবিব মুহাম্মাদ 
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি 

বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মুমতাজ (স্টার মার্ক) প্রাপ্ত এবং মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে লক্ষ্মীপুরের মেধাবী তরুণ আলেমদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম আলোর দিশারী ফাউন্ডেশন।

৭০ টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় চার শত কৃতী শিক্ষার্থী ও সীরাত কুইজ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের হাতে মূল্যবান  বই, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং একটি মূল্যায়ন সার্টিফিকেট  তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। 

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর পাবলিক লাইব্রেরি ও  টাউন হল  মিলনায়তনে সংগঠনটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আমীর জিহাদীর সঞ্চালনায়  কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিন্তাবিদ, লেখক, গবেষক এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার প্রধান পরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুফতি আমিনী রহ.এর জামাতা মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী।  

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত  ছিলেন লক্ষ্মীপুর চরমটুয়া মারাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের, টুমচর কামিল মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা হারুন আল মাদানী,লুধুয়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস আবু নাসের আব্দুল্লাহ, রায়পুর বেফাক  সভাপতি মাওলানা নুরুল আমিন কাসেমী। মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক, নোমান সিরাজী, মুফতি হাবিবুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাইনুদ্দিন ও কবি মুজতবা আল মামুন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী হাফেজ্জী হুজুর,বটতলীর জনাবওয়ালা, রায়পুরের মাওলানা আব্দুল্লাহ সহ বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ করে  বলেন, লক্ষ্মীপুর আলেম-উলামার ঘাঁটি। আমাদেরকে তা ধরে রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, গতানুগতিক আলেম নয় আমাকে বিশেষ  ব্যক্তি হতে হবে। উদাসীনতা ছাড়তে হবে। দৈনন্দিন কাজ দৈনিক সম্পাদন করতে হবে। কর্মট ও উদ্যমী হতে হবে। 

মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী বলেন, মেধা, দরদ ও ফিকির এই তিন গুণ আমাদেরকে অর্জন করতে হবে। এই গুণের অভাবে আজ আমাদের অনেক নেতা থাকা সত্বেও আমরা নেতৃত্ব শূন্য। বস্তুবাদি সমাজের বিপরীতে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে আগে নিজেকে যোগ্য করে  গড়ে তুলতে হবে। শুধু পঠন-পাঠন নয় বরং তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে।  গতানুগতিক নয় বরং নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সৎ - সাহসী ও যোগ্য লোক তৈরি করার জন্য গঠনমূলক কাজ করতে হবে।

মাওলানা আবু তাহের বলেন, পরীক্ষায় স্টার মার্ক পাওয়া একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং ভালো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নিজের পাঠ্যসূচীকে মূল্যায়ন করে তা ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। হীনম্মন্যতা নয় বরং নিজের উপর আস্থা ও মনবল শক্ত রাখতে হবে। 

শাইখুল হাদিস হারুন আল মাদানী বলেন, সাদাসিধা জীবন যাপন করতে হবে। পোষাকের চাকচিক্য আমাদেরকে দামী বানাবে না বরং কুরআনের ইলমই আমাদেরকে দামী বানাবে। আমাদের পূর্বসূরিরা চলে যান কিন্তু তাদের শূন্যস্থান পূরণ হয়না। আমাদেরকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। 

মাওলানা আবু নাসের আব্দুল্লাহ বলেন, নিচের শিক্ষাবর্ষগুলোতে প্রচুর কৃতি শিক্ষার্থী থাকে কিন্তু সঠিক তত্ত্বাবধান না থাকার কারণে পরবর্তীতে তারা হারিয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেককে একজন মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে থেকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। 

মাওলানা নুরুল আমিন কাসেমী বলেন, আজকে রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী,হুসাইন আহমদ মাদানী,কাসেম নানুতবী নেই। আমাদেরকে তাদের যোগ্য উত্তরসূরী হতে হবে। মুসলিম উম্মাহর বৃহৎস্বার্থে  নিজেদের মাঝে কোন্দল ভুলে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। 

অধ্যক্ষ মাইনুদ্দীন বলেন, বেফাক কৃতি শিক্ষার্থীদেরকে বহুদূর এগিয়ে যেতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। শুধু ধর্মের জ্ঞানে সীমাদ্ধ না থেকে অন্যান্য জ্ঞানও আমাদেরকে  অর্জন করতে হবে। 

কবি মুজতবা আল মামুন বলেন, আলেমগণ দ্বীনের কর্ণধার। একজন আলেমের পদস্খলন হলে বহু মানুষের পদস্খলন হবে। বিজাতীদের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে সমাজের মানুষকে তা হতে সতর্ক করতে হবে। 

নোমান সিরাজি বলেন, বিগত দিনের তুলনায় লক্ষ্মীপুরে বেফাক কৃতি  শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। আগামীতে তা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। 

বহু পরিশ্রমে অর্জিত হয় শ্রেষ্ঠত্ব। আর সেই শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন পেয়ে উচ্ছাসিত হয়েছেন কৃতি  শিক্ষার্থীরা। সংবর্ধনা পেয়ে  আলোর দিশারী ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।  এই সামন্য পুরস্কার যেন তাদেরকে আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায়।

 এনএ/