আরব দেশগুলোর ঐক্য ছাড়া ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি আসবে না
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:০১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ‘সংঘাত’ দুই সপ্তাহ পেরিয়েছে। সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা তত বাড়ছে। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় কীভাবে বিরতিহীন বোমাবর্ষণ করে আসছে, বিশ্ব তা দেখছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক অঘটন ঘটেছে আল-আহলি আরব হাসপাতালে। গত মঙ্গলবারের সেখানে এক হামলায় পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসাপ্রার্থীর পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থী বাস্তুহারা মানুষও ছিল। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় মানবিক সংকটে গাজার প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির তীব্র সংকটে দিনাতিপাত করছে।

এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলো যখন গাজায় হামলা বন্ধে চাপ বৃদ্ধি করছে, ইসরায়েলি বাহিনী তখন ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরাশক্তিগুলো উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই এ অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর বাড়তি দায়িত্ব বর্তেছে। ২০১২ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে স্পষ্টত অসম্ভব মনে হলেও শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক চাপেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল। ওই সময় বিভিন্ন আরব দেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত গাজা সফর এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করায় পরিস্থিতির পাল্টে যায়। গাজা থেকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কড়া বার্তা পাঠানোয় ফিলিস্তিনে হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।

এক দশক আগের সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। সে জন্য চলমান সংঘাতে আঞ্চলিক সব শক্তির ঐকমত্য এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা তুরস্কসহ বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দেয়। তুরস্ক এখন অন্যতম আঞ্চলিক খেলোয়াড়। দেশটি এ সংঘাতের প্রভাবে লেবানন, মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সংঘাত নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

গত সপ্তাহে তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। তাদের উদ্যোগে এটা স্পষ্ট যে, সংঘাত অবসানের পথে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৈশ্বিক শক্তিগুলো এগিয়ে না এলেও আঞ্চলিক শক্তিগুলো সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরায়েলের পক্ষে। রাশিয়া এ জন্য খুশি যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সমর্থক চীন। এর পরও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক যেহেতু বাড়ছে, সে জন্য চীন স্পষ্ট অবস্থান নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।

এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও তাদের মতো অবস্থান গ্রহণ করেছে। সে জন্যই চলমান সংঘাতে তাদের প্রতিক্রিয়া খুব জোরালো হচ্ছে না। ফলে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, জর্ডান, মিসর (গাজার সীমান্ত) এবং লেবাননের হিজবুল্লাহকে নিয়ে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজার যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করতে চায় তুরস্ক। অন্তত এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আগেই এটি শেষ হওয়া জরুরি। সে জন্য তুরস্ক হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হচ্ছে। বুধবার সৌদি আরবের আমন্ত্রণে গাজার সংকটাপন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জেদ্দায় জরুরি বৈঠক করেছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি। ওই বৈঠকের ফাঁকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সৌদি আরব ও কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। ওআইসির বৈঠকে ফিদান তিনটি মূল বিষয়ের ওপর জোর দেন– গাজায় শান্তির জন্য নতুন মেকানিজম বা ব্যবস্থাপনা; মুসলিম বিশ্বের ঐক্য; গাজাবাসীর জন্য অবিলম্বে পানি, বিদ্যুৎ ও জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা।

সৌদি আরব সফরের আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান লেবানন গিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক বাহিনী উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে তিনি মিসর সফর করেছেন। লেবানন ও মিসর চলমান সংঘাতের একেবারে নিকটবর্তী। আঞ্চলিক সংঘাতে তারাই প্রথম প্রভাবিত হবে। ফিদানের সফরের লক্ষ্য সম্ভবত এই বার্তা দেওয়া– সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মোকাবিলায় তুরস্ক প্রস্তুত। ওদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় প্রতিবেশী হিসেবে মিসর, লেবানন ও জর্ডান নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে। জানা গেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কায় লেবাননের মধ্যপ্রাচ্য এয়ারলাইন্স তাদের কয়েকটি বিমান তুরস্কে রাখছে। এদিকে হাকান ফিদান জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব করে তুলতে ফিলিস্তিন-ঘনিষ্ঠদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

চলমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে গাজায় মানবিক ট্র্যাজেডির অবসান ঘটানো। এই যুদ্ধ আবারও স্পষ্ট করে দিচ্ছে– ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধান ছাড়া এ অঞ্চলের প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, শেষ পর্যন্ত সংঘাত থামানো। ফিলিস্তিনের জনগণ এবং সাধারণভাবে এ অঞ্চলের মানুষের স্বার্থেই এটি জরুরি।

সিনেম সেনজিজ: তুরস্ক-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ।           

সুত্র: আরব নিউজ

এনএ/