ফকীহুল মিল্লাতের পাঁচটি মৌলিক অবদান
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৫:০৬ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ

দেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ ও বিদগ্ধ আলেম ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ.। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর ছাত্র বা মুরিদ নই। তবে আমি তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। মহব্বত করতাম। তাঁর সম্পর্কে আমার ক্ষুদ্র মতামত বা মূল্যায়ন হিসেবে আমি পাঁচটি কথা বলব।

এক. বাংলাদেশে ফিকহে হানাফির ওপর গবেষণামূলক অধ্যয়ন কাজে তাঁর অবদান অপরিসীম। ফিকহে হানাফিকে রিসার্চমূলক অধ্যয়ন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন দেশে আগে থেকেই চলে আসছে। আমাদের বাংলাদেশে এই বিষয়ে তিনিই পাইওনিয়র ছিলেন। পাইওনিয়র মানে যারা কোনো মহৎ কাজের সূচনা করেন এবং অতি দূর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারেন। ফিকহে হানাফিকে গবেষণামূলকভাবে উপস্থাপন, তার উসুল, ফুরু ও তার মাহাত্ম্য উম্মতের সামনে সুন্দরভাবে পেশ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেক।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ হানাফি ফিকহের অনুসারী। এদের কাছে ফিকহে হানাফির দর্শন, দৃষ্টিকোণ, অবস্থান, বিশালত্ব, ব্যাপকতা, গভীরতা, পারঙ্গমতা, বাস্তবতা এবং অন্যান্য ফিকহের তুলনায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এ বিষয়গুলো আমাদের দেশের লোকজনের খুব বেশি জানাশোনা ছিল না। আলেমদের কাছে স্বল্পসংখ্যক ছিল। ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের অভিরুচি অনুযায়ী তুলে ধরা, আলোচনা করা, বিভিন্ন সেমিনারে এগুলোকে টেনে আনা এই চর্চাটা আগে ছিল না। ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ.-এর একান্ত পরিশ্রম, চিন্তা ও তাঁর উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশে ফিকহে হানাফি একটা গবেষণামূলক ভিত্তি লাভ করে। এটা ফকীহুল মিল্লাতের অন্যতম অবদান।

দুই. শিরক ও বিদআতের প্রতিরোধ বাংলাদেশে আহলে হক উলামায়ে কেরাম দীর্ঘদিন থেকে করে আসছেন। এটা আমাদের দেশে জরুরি ও স্থায়ী কাজ। এদেশের লোকজন ধার্মিক। এরা আশেক। পীর-মাশায়েখকে খুব মহব্বত করে। এটা তো একটা ভালো দিক। উলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখকে মহব্বত করা দোষণীয় নয়। বরং আল্লাহওয়ালা বুজুর্গানে দীনকে মহব্বত করা প্রশংসনীয় গুণ। সাধারণ মানুষের এই দুর্বল দিকটাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্ধ মহল বড় বড় মাজার ও ওরস সাজিয়ে সাধারণ মানুষের এই দুর্বলতাকে ভুল পথে ব্যবহার করছে। এজন্য আমাদের দেশে হক্কানি আলেমরা সেই পূর্বকাল থেকে যেভাবে তাসাউফের মেহনত করছেন, পাশাপাশি সমান্তরালে শিরক-বিদআত প্রতিরোধের মেহনতও তাঁরা অব্যাহত রেখেছেন।

হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান রহ. আমাদের আহলে হক উলামায়ে কেরামের এই মেহনতটায় একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন। সারাদেশে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের শিরোনামে প্রতি বছর বিভিন্ন জেলায় আন্তর্জাতিক মাহফিল করতেন। যা সাধারণ মুসলমানদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ ছিল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। চট্টগ্রামকে শিরক-বিদআতের আখড়া বলা যায়। আর সেখানে তিনি দেশ-বিদেশের আহলে হক উলামায়ে কেরামকে যেমন পাকিস্তানের মাওলানা আব্দুল মাজিদ নাদিম রহ., মাওলানা মুফতী তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহসহ বড় বড় গবেষক আলেমকে দাওয়াত করে আনতেন। সাধারণ মানুষ সবাই তো আর মূর্খ নয়। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করা হতো, এই মাজারপূজা, ছোটখাট জিনিস নিয়ে একজন অন্যজনকে কাফের বলা শরিয়ত নয়। এগুলো ‘খোরাফাত’। সঠিক আকিদা, হক্কানিয়ত, ইশকে রাসুল, ইশকে ইলাহ এগুলো কাকে বলে বড় বড় আলেমদের মাধ্যমে ইসলামি মহাসম্মেলনে মানুষকে বুঝিয়েছেন। শিরক-বিদআত প্রতিরোধের যে আন্দোলন আমাদের দেশে উলামায়ে কেরাম বরাবর করে আসছেন আমার মতে এই আন্দোলনে মুফতী আব্দুর রহমান রহ. একটা নতুন মাত্রার সংযোজন করেছেন এবং এটা এখনও অব্যাহত আছে। যারা যুগসচেতন আলেম তারা চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য যুগের চাহিদা অনুসারে নতুন নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। এই সংযোজনের মাধ্যমেই কোনো আন্দোলন ক্রমাগত অব্যাহত থাকে, থেমে যায় না। আমার মনে হয় এটা হজরত মুফতী সাহেবের দ্বিতীয় কৃতিত্ব।

 

তিন. আমাদের দেশে গাইরে মুকাল্লিদ লোকদের একটা মূর্খতাজনিত আচরণ বরাবর দেখে আসছি। গাইরে মুকাল্লিদের ফেতনা আমাদের দেশে আগে খুব বড় ছিল না। হিন্দুস্তানের বিভিন্ন স্থানে ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর কেন যেন গাইরে মুকাল্লিদরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গাইরে মুকাল্লিদ সালাফি ও আহলে হাদিস তাদের আমরা বাতিল মনে করি না। কিন্তু বেয়াদব মনে করি। আকিদার ক্ষেত্রে এদের ভ্রান্তি আছে মনে করি না, তবে এরা জাহেল, মূর্খ।  স্থান কাল পাত্র বোঝে না। ফিলোসফি বোঝে না। তারা স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধিকেও কাজে লাগাতে রাজি না। ওরা কিছু ভুল করে। এই ভুলগুলো তাদের মূর্খতার ফসল। গাইরে মুকাল্লিদরা যেন উম্মতের মধ্যে ফেতনার সূচনা না করতে পারে, উম্মতকে যেন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে না দেয় এর জন্য হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান রহ. অনেক অবদান রেখেছেন। আল্লাহর শোকর, বিশেষ করে ফিকহে হানাফির যৌক্তিকতা, এর হক্কানিয়তকে খুব গবেষণামূলকভাবে তিনি তাঁর সহকর্মীবৃন্দ, নিজের  গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিষ্য-শাগরিদদের দ্বারা পারঙ্গমতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এটা তাঁর বড় অবদান।

একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার আমি মদিনা মুনাওয়ারায় ইতেকাফে ছিলাম। তখন হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেবও মসজিদে নববীতে ইতেকাফে ছিলেন। আমি সংবাদ পেয়ে দেখা করতে গেলাম। বসে বসে দুজনে খুব খাতির জমিয়ে আলাপ হলো। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি আমাকে একটু ভিন্ন নজরেই দেখলেন। তিনি আমাকে নিজের কাছে বসালেন। আমিও তাঁকে অনেক বড় আলেম হিসেবে জানতাম। মদিনা শরিফের কিছু আলেমের কথা বললাম যে, তাঁরা এক রাকাতের বিতর পড়েন। হানাফি মাজহাবকে তারা বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। আমার কথা শুনে তিনি খুব উত্তেজিত হয়ে গেলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বললেন- ইতারা কয়দিনের আলেম? ইতারাতো মাত্র ৫০ বছরের আলেম। আঁরা ৫০০ বছরের আলেম। আঁরার লগে মোকাবেলা করিত্তইলে ইতারা আরো সাড়ে চারশ বছর লেখাপড়া করন পরিব।’ তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত কথায় বোঝালেন যে, এরা এখনও প্রাইমারি স্কুল অতিক্রম করেনি। মাত্র ৫০ বছরের রিসার্চ ওয়ার্কিং তাদের হাতে। হিন্দুস্তানি আলেম, দেওবন্দওয়ালা ও কওমিওয়ালারা হাজার বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে এসেছে। এরপর তিনি আমাদের বললেন, এখানে সৌদি সরকারের ছত্রছায়ায় আহলে হাদিস বা সালাফিরা হানাফিয়তকে নির্মমভাবে সমালোচনা করে। এরা মুনাজারা বা বাহাসে আসার হিম্মত রাখে না। ইলমি মুনাজারায় আসার মতো হিম্মত তাদের কারও নেই। মিসরের আলেমরা তাদের বহুবার বলেছেন, তোমরা ইলমি মুনাজারায় আসো। হিন্দুস্তানি আলেমরাও বলেছেন ইলমি মুনাজারায় আসো। কিন্তু তারা এতে সম্মত হয় না। আমরা হজের জন্য, ওমরার জন্য সেখানে যাই, এজন্য এতো কথা বলি না। এই সুযোগে তারা নিজেরদের বেটাগিরি প্রকাশ করে। মজলিসে বসলে জওয়াব দেওয়ার মতো হিম্মত তাদের নেই।

মূলত মুফতী আব্দুর রহমান রহ. গাইরে মুকাল্লিদদের মূর্খতাজনিত আচরণগুলো মক্কা-মদিনায় বসেও শক্তভাবে মোকাবেলা করেছেন। এটা ইলমিভাবে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান।

 

চার. ইসলামি শিক্ষা বিস্তার, বিশেষ করে ইসলামের বিভিন্ন দিক, যেমন অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং সেক্টরেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। মুফতী তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহ বলেন, ইসলামি ব্যাংক শতভাগ শরয়ি ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো আছে এ কথা আমরা বলি না। আমরা বলব, যুগের চাহিদা অনুসারে, সময়ের দাবি অনুসারে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইসলামের আওতায় প্রতিষ্ঠিত করে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়েজ, বরং একে উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন এই ব্যবসা-বাণিজ্যকে বর্তমান যুগে অন্যদের সঙ্গে তুলনামূলক প্রতিষ্ঠিত রাখা এবং প্রতিযোগিতার বিশেষ মুসলিম ব্যবসায়ীদের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই ব্যাপারে আমাদের ফিকির করা, গবেষণা করা, নতুন পথ যাকে শরিয়ত সমর্থন করে, এমন পথ আবিষ্কার করা, এর জন্য শ্রম দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একটা সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বরং পুরো পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানের মতো ছিল না। বর্তমান সাইন্স ও টেকনোলজির বিশ্বে সারা পৃথিবী একটা পরিবার। এখানে আমাদের টিকে থাকতে হলে, আমাদের সমাজ, কালচার, সোসাইটি, ইউনিটি, মুসলিম মুয়াশারা এগুলোকে সুরক্ষা দিতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক দিগন্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় স্পষ্ট করতে হবে। সহজ করতে হবে। চলনযোগ্য করতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকার উপযোগী করতে হবে। আবার শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে যাওয়া যাবে না। আল্লাহ পাক অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আমানতদারির সঙ্গে রাস্তা পরিচ্ছন্ন করার এই মেহনত ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ. আমাদের দেশে সূচনা করে গেছেন। পরবর্তীকালে মুফতী দেলোয়ার হোসাইন সাহেব, মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ সাহেব-সহ আরও অনেকে এই ব্যাপারে মেহনত করে যাচ্ছেন। বহু মারকাজ, বহু ইফতা, বহু গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান কওমি মাদরাসায়, সরকারি মাদরাসায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান রহ. যে অবদান রেখেছেন, আমি মনে করি শিক্ষা আদর্শ ও কালচারাল প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এটা তাঁর নতুন মাত্রা। এ ক্ষেত্রে তিনিও পাইওনিয়র হিসেবে আছেন।

 

পাঁচ. সব কাজের পাশাপাশি তাসাউফকেও তিনি ইলমি আকার ও ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে গেছেন। কিন্তু তাঁর এই কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তবে কারও কাজই সম্পন্ন হয় না। কেয়ামত পর্যন্ত এই কাজ চলতে থাকবে। হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব তাসাউফকে ইলমি আকৃতিতে আনার জন্য কাজ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের মরহুম ছোলতান আহমদ নানুপুরী রহ., কুতবুল আলম মাওলানা জমিরুদ্দীন নানুপুরী রহ., পটিয়ার মাশায়েখগণ, হজরত গাঙ্গুহির খলিফা হাটহাজারীর মাওলানা জমিরুদ্দীন রহ. ওনারাও অনেক অবদান রেখেছেন। হজরত গাঙ্গুহির খোলাফা ও শাগরিদদের মাধ্যমে তাসাউফের একটা ভুবন চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। এটাকে ইলমি নুরানিয়ত দান করার জন্য হজরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব রহ. চেষ্টা করেন। শেষ সময়ে তিনি তো হারদুয়ির হজরতের খেলাফত লাভ করেন। যাত্রাবাড়ীর হজরত আল্লামা মাহমুদুল হাসানসহ তিনি ইশাআতে সুন্নাহর একটা নতুন মাত্রা বাংলাদেশে দাওয়াতুল হকের শিরোনামে শুরু করেন। দাওয়াতুল হকের কাজটা প্রধানত যাত্রাবাড়ীর হুজুর করলেও ফকীহুল মিল্লাত ইলমিভাবে তাসাউফকে তুলে ধরার একটা বিরাট আয়োজন করেছেন। এটা তাঁর অন্যতম অবদান।

আমি মনে করি, ফিকহে হানাফির ওপর গবেষণামূলক অধ্যয়ন কাজের সূচনা, শিরক-বিদআতের প্রতিরোধে নতুন মাত্রার সংযোজন, গাইরে মুকাল্লিদদের মূর্খতাজনিত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উম্মতের প্রতি তাঁর সাবধানতা, ইসলামি শিক্ষা সংস্কৃতি ও কালচারাল প্রোগ্রাম বিশেষত ব্যাংকিং ক্ষেত্রে তাঁর অবদান, তাসাউফকে ইলমিভাবে প্রতিষ্ঠিতকরণের মেহনত এসব ক্ষেত্রে তিনি অনন্য অবদানের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আল্লাহ তাঁর মিশনগুলো সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে চালু রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শায়খুল হাদিস, তেজগাঁও রেলওয়ে মাদরাসা, ঢাকা

হুআ/