ইসলামি গানের গীতিকার সিফাতের পথচলার গল্প
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৬:১১ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

মামুমুদুল হাসান ।। 

যুবায়ের সিফাত একজন নাশীদ শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। ইতোমধ্যে নিজের লেখা এবং সুর করা বেশ কয়েকটি গান দর্শকদের মন জয় করেছেন। যে ইসলামী সঙ্গীতগুলো আমরা ইউটিউবে শুনে থাকি, এমন অনেক গানের কথা-ই তার লেখা।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন দত্তকুশা গোয়াল পাড়া নামের একটি ছোট্ট গ্রামে তার জন্ম। শৈশব থেকেই বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানে নাশিদ গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ কর‍তেন। বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইসলামী সংগীত গাইতেন। তার গাওয়া ইসলামী সংগীত, হামদ ও নাত তন্ময় হয়ে উপভোগ করতেন দর্শক-শ্রোতারা।

যুবায়ের ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক মানের নাশিদ শিল্পী হওয়া এবং সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। লিখেছেন একাধিক জনপ্রিয় গান।

যুবাইরের ভাষায়, ছোটবেলায় গানের গলা ভালো ছিল তার। বিভিন্ন সময়ে মাহফিলসহ নানান জায়গায় গান গেয়ে শ্রোতাদের বাহবা কুড়িয়েছেন তিনি। সঙ্গীতের সেই চর্চা আজ অবধি চলছে। এখন গান লেখাও হয়, কিছু গান সুরও করেছেন।ইউটিউবে একটা নিজস্ব চ্যানেল রয়েছে Jubair Sifat নামে।

যুবায়েরের গল্পের শুরুর জীবনে হিফজ শেষ করে যখন সে উচ্চতর শিক্ষার জন্য রাজধানী ঢাকায় আসে, তখন থেকে সঙ্গীতের চর্চা শুরু হয় হাতেকলমে। কওমি মাদরাসা থেকে বিশুদ্ধ ইলম চর্চার পাশাপাশি ডেমরার দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যয়নরত তিনি। পাশাপাশি চলছে সংগীতচর্চা।

২০১৬ সালে ইয়া রব্বানা নামের একটি মৌলিক গানের মাধ্যমে সবার সামনে উঠে আসে তার প্রতিভার গল্প। যুবায়েরের নিজের লেখা লিরিক ও সুর এবং সুমধুর কণ্ঠের মাধুরিতে দর্শকদের মন জয় করে গানটি। এরপর ইসলামী সঙ্গীতাঙ্গনে প্রফেশনালি তার পথচলা শুরু হয়।

যুবায়ের সিফাত বলেন, গান গাইতে গাইতে গান লেখার প্রতি একটা অনুরাগ ভেতরে সবসময় কাজ করত। লেখালেখির চর্চা কিন্তু ছিল সেই হিফজখানা থেকেই। অবুঝ অবুঝ কবিতা লিখতাম, ছড়ার মতো করে ছন্দ লিখতাম।

২০১৬ সালে সম্ভবত প্রথম একটা গান লিখে এবং নিজেই সুর করে বড়দের নজরে আসি। এরপর থেমে থাকেনি কোনকিছু। ব্যস্ততা বেড়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি সঙ্গীতটাকে জীবনের আরেকটা উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছি। সকলের দোয়া ও আল্লাহ তায়ালর মেহেরবানীতে এ পথেই নিজেকে আলোকিত করতে চাই।

যুবাইরের গান লেখা, সুর করা কিংবা মাঝেমাঝে গলা মিলিয়ে গাওয়ার কাজটা এখনও গতিময়। এ পর্যন্ত তার লেখা ইসলামি সংগীতের সংখ্যা প্রায় দেড়শ'র অধিক। তার লেখা প্রকাশিত জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ফরিয়াদ,আসসালাম হাবিবি, লা শারিকাল্লাহ, অনুভবে শুধু তুমি, ইয়া গফুর, লাকাল হামদু, ২১ আমার, সালাতে এসো, ক্বলবি মুহাম্মাদ, ত্যাগের ফুল,রাসূলের প্রেম,নাবিয়্যুল আম্বিয়া, শেষ প্রহর ইত্যাদি। নিজেই সুর দিয়ে গেয়েছেন ইয়া রব্বাল আলামিন, মাদিনাওয়ালা, প্রিয় নাবি আল আরাবি, রমাদান ফরিয়াদ, ইয়া রব্বানা, হাবিবাল কলবির মতো দর্শকপ্রিয় অনেক গান।

তিনি একাধারে নাশিদ আর্টিস্ট, গীতিকার,সুরকার ও একজন লেখক। তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। ইসলামী সঙ্গীত ও কবিতা লেখালেখি করার জন্য পেয়েছেন শেখ রাসেল পুরষ্কার ২০১৩। তার প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক কবিতার সংখ্যা প্রায় ৫০০ এর অধিক। বে কিছু কবিতা মলাটবদ্ধ হয়েছে ৬ টি যৌথ কাব্যগ্রন্থে।

এ ছাড়াও যুবায়ের প্রতিবছর বিটিভি, দিগন্ত টিভি, এটিএন বাংলাসহ একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে দর্শক-শ্রোতাদের ইসলামী সংগীত উপহার দেন। ২০২১ সালে প্রিয়জন সাংস্কৃতিক সংসদ আয়োজিত কোরানের আলো–২০২১-তে চ্যাম্পিয়ন হন।

যুবায়েরের ভাবনায়, ইসলামি গানের জন্য দরকার মানসম্মত লিরিক ও মৌলিক সুর। বর্তমানে এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে ভালো ভালো অনেক কাজ হচ্ছে।ইসলামি সঙ্গীতকে সার্বজনীন করতে উন্নতমানের ভিডিও নির্মাণ, মানসম্মত লিরিক ও সুর নিয়ে অনেকে কাজ শুরু করেছেন। কারণ, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের ইসলামি সঙ্গীতের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, নাশিদের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বান জানানো। আমি মনে করি ইসলামী সংগীত ইসলামী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে। নোংরা সংস্কৃতির মোহে পড়ে যায়। ইসলামী সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি মানুষের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা। আমিও এই কাজের ছো্ট্ট অংশ হয়ে থাকতে চাই।

আরএম/