রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ ।। ৯ চৈত্র ১৪৩১ ।। ২৩ রমজান ১৪৪৬


২২ তম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

 (সূরা হা মীম সাজদাহ, সূরা শূরা, সূরা যুখরুফ, সূরা দুখান, সূরা জাসিয়া ও সূরা আহকাফ)

আলহামদুলিল্লাহ, কুরআনের ধারাবাহিক তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। আজকের তারাবিতে আমরা এমন কিছু আয়াত শ্রবণ করব, যেখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অসীম কুদরত, অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির শিক্ষা, কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ তুলে ধরেছেন।

কুরআন শুধু তেলাওয়াতের জন্য নয়, বরং তা আমাদের জন্য জীবনসংহিতা, হিদায়াতের আলো। এই পারার আয়াতগুলোর মধ্যে রয়েছে সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব, নবি-রাসূলদের সংগ্রাম, কাফেরদের অবাধ্যতার পরিণতি এবং মুমিনদের প্রতিদান। একই সঙ্গে রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও শাস্তির সুস্পষ্ট বর্ণনা, যা আমাদের আমল সংশোধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

১. সূরা হা মীম সাজদাহ (৪৭-৫৪) কিয়ামত, সত্য ও পথভ্রষ্টতার পরিণতি

কিয়ামতের নির্ধারিত সময় একমাত্র আল্লাহ জানেন (৪৭-৫০)

  • মানুষ কিয়ামতের সময় জানতে চায়, কিন্তু এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে।
  • লোকেরা যখন বিপদে পড়ে, তখন আল্লাহকে ডাকে, কিন্তু স্বচ্ছলতা ফিরে পেলে তাঁকে ভুলে যায়।

ঈমানদার ও কাফেরদের পার্থক্য (৫১-৫৪)

  • সত্যের পথে যারা চলে, তারা আল্লাহর রহমত লাভ করবে।
  • কাফেররা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, ফলে তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
  • কুরআন যে এক মহাসত্য, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

২. সূরা শূরা (১-৫৩) তাওহিদ, ওহী ও ন্যায়বিচারের বার্তা

আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও কুরআনের মাহাত্ম্য (১-১৪)

  • কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যাতে মানুষ সঠিক পথ পায়।
  • অতীতের নবীদের জাতিগুলো বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, তাই আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য ওহী পাঠিয়েছেন।

তাকদির, রহমত ও ইনসাফ (১৫-৩৩)

  • আসমান-জমিনের সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার অধীন।
  • যারা দুনিয়ায় অন্যায় করে, তারা পরকালে কঠিন শাস্তি পাবে।
  • প্রকৃতি ও জীবনচক্রের মধ্যে আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন বিদ্যমান।

নবী ও উম্মতের দায়িত্ব (৪৪-৫৩)

  • নবীর দায়িত্ব হলো শুধু মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করা।
  • যে কেউ ঈমান গ্রহণ করে, তার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
  • আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কেউ সঠিক পথ পেতে পারে না।

৩. সূরা যুখরুফ (১-৮৯) মূর্তিপূজা, নবীদের সংগ্রাম ও পরকালের বাস্তবতা

কুরআনের সত্যতা ও মুশরিকদের যুক্তিহীনতা (১-৩৯)

  • কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ, যাতে মানুষ সহজেই বুঝতে পারে।
  • মুশরিকরা নবীদের সঙ্গে বিদ্রূপ করেছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে।

ফেরাউনের উদ্ধত আচরণ ও শাস্তি (৪০-৭৩)

  • মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে ফেরাউন তার অহংকার ও অবাধ্যতার কারণে ধ্বংস হয়েছে।
  • জান্নাত ও জাহান্নামের পার্থক্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

৪. সূরা দুখান (১-৫৯) কিয়ামত, শাস্তি ও পরিত্রাণের বার্তা

কিয়ামতের ভয়াবহতা (১-২৯)

  • কাফেররা আখিরাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
  • ফেরাউন ও তার সেনাদের ধ্বংসের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতের প্রতিদান (৩০-৫৯)

  • যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে, তারা চিরস্থায়ী শান্তিময় জীবনে প্রবেশ করবে।
  • জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ও জান্নাতের অফুরন্ত সুখ-শান্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

৫. সূরা জাসিয়া (১-৩৭) আল্লাহর নিদর্শন, পরকাল ও বিচারের ঘোষণা

প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর নিদর্শন (১-১৫)

  • আকাশ, জমিন, পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র—সবই আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ।
  • সত্য গ্রহণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, আর মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরাদের জন্য রয়েছে শাস্তি।

কিয়ামতের দিন কাফেরদের পরিণতি (১৬-৩৭)

  • কাফেররা যেদিন কিয়ামত প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তারা চূড়ান্ত অনুতপ্ত হবে।
  • আল্লাহর বিধান মেনে চলার মাধ্যমেই প্রকৃত সাফল্য অর্জিত হয়।

৬. সূরা আহকাফ (১-২০) অতীত জাতিদের ধ্বংস ও হিদায়াতের আহ্বান

হুদ (আ.) ও আদ জাতির ধ্বংস (২১-২৬)

  • ‘আদ জাতির ক্ষমতা ও শক্তি ছিল, কিন্তু তারা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংস হয়েছে।
  • অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিয়ামতের ভয়াবহতা ও নেক আমলের গুরুত্ব (১৫-২০)

  • নেক আমল ও তাকওয়ার ওপর মানুষের পরকালের প্রতিদান নির্ভরশীল।
  • দুনিয়ায় যারা অন্যায় করবে, তারা কিয়ামতের দিনে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • আল্লাহর কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যা মানুষকে তাঁর প্রতি ইমান আনতে আহ্বান জানায়।
  • অতীতের নবীগণের জাতিগুলোর ধ্বংস হওয়া ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
  • তাকওয়া অবলম্বনকারী মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুখকর জীবন অপেক্ষা করছে।
  • কিয়ামতের দিন প্রতিটি মানুষ তার কৃতকর্মের প্রতিদান পাবে।

উপসংহার:

এই পারায় আল্লাহর অসীম কুদরত, অতীত জাতিদের ধ্বংসের শিক্ষা, পরকালের ভয়াবহতা ও জান্নাত-জাহান্নামের বাস্তবতা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আসুন, আমরা কুরআনের এই আয়াতগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করি, আমাদের জীবনে প্রয়োগের সংকল্প গ্রহণ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে নিজেকে উৎসর্গ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই শিক্ষাগুলো অন্তরে ধারণ করে সত্য পথে চলার তাওফিক দান করুন, আমিন!

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ