শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ ।। ৭ চৈত্র ১৪৩১ ।। ২২ রমজান ১৪৪৬


২১ তম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা জুমার, সূরা মু’মিন ও সূরা হা-মীম সাজদাহ)

আল-কুরআনের তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতায় আমরা আজ একবিংশতম তারাবির অংশে প্রবেশ করছি, যেখানে মহান আল্লাহর কুদরত, তাওহিদের মহিমা, কিয়ামতের ভয়াবহতা ও ন্যায়বিচারের সুস্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে। এই অংশে সূরা আজ-জুমার, সূরা আল-মু’মিন এবং সূরা ফুসসিলাতের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হবে। এখানে আলোচিত হয়েছে সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন সংঘাত, কাফেরদের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর শিক্ষা, আল্লাহর অসীম দয়া এবং আখিরাতের প্রতিদান।

১. সূরা জুমার (৩২-৭৫) আল্লাহর ন্যায়বিচার ও কিয়ামতের দৃশ্য

সত্য গোপনকারীদের শাস্তি (৩২-৩৫)

  • যারা সত্যকে গোপন করে ও আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
  • কিন্তু যারা সত্যের অনুসরণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা ও জান্নাত।

কিয়ামতের ভয়াবহতা ও আল্লাহর রহমত (৩৬-৪৮)

  • কাফেররা কিয়ামতের দিন নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবে, কিন্তু তখন আর কোনো উপায় থাকবে না।
  • আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অসীম দয়ালু, যদি তারা আন্তরিকভাবে তাঁর দিকে ফিরে আসে।

জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র (৪৯-৭৫)

  • জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, যা কাফেরদের জন্য নির্ধারিত।
  • অন্যদিকে, জান্নাতের সুখময় পরিবেশ ও মুমিনদের সম্মানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
  • অবশেষে, এই সূরা ঘোষণা করে যে চূড়ান্ত বিচার কেবল আল্লাহর হাতে।

২. সূরা মুমিন (১-৮৫) মুমিন ও কাফেরদের পরিণতি

আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার ঘোষণা (১-২০)

  • আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু, কিন্তু যারা তাঁর পথে ফিরে আসে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি।
  • ফেরাউন ও মুসা (আ.)-এর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ঈমানদার ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি স্পষ্ট হয়েছে।

ঈমানদারদের বিজয় ও কাফেরদের ধ্বংস (২১-50)

  • ইতিহাসের বহু জাতি সত্য প্রত্যাখ্যান করার ফলে ধ্বংস হয়েছে।
  • কাফেররা নিজেদের সম্পদ ও ক্ষমতার ওপর গর্ব করেছিল, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

পরকালের প্রতিদান ও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব (৫১-৮৫)

  • কিয়ামতের দিনে প্রত্যেককে তাদের কর্ম অনুসারে প্রতিদান দেওয়া হবে।
  • নবীদের সত্যতার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে এবং শয়তানের ধোঁকায় না পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

৩. সূরা হা-মীম সাজদাহ / ফুসসিলাত (৪১:১-৪৬) কুরআনের মহান বার্তা ও শাস্তির সতর্কবাণী

কুরআনের মাহাত্ম্য (১-১২)

  • কুরআন মানুষকে পথ দেখানোর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর শিক্ষা গ্রহণ করাই প্রকৃত জ্ঞান।
  • যারা এটিকে অস্বীকার করে, তারা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

অতীত জাতিদের পরিণতি ও আল্লাহর কুদরত (১৩-৩৬)

  • আ’দ ও সামূদ জাতির শাস্তির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
  • সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, আর যারা ধৈর্য ধরে, তারা আল্লাহর রহমত লাভ করবে।

আখিরাতের প্রতিদান (৩৭-৪৬)

  • আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিবরণ এবং আল্লাহর শক্তির নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে।
  • কিয়ামতের দিন সবকিছুর ফয়সালা করা হবে, আর তখন আর কারও জন্য ক্ষমার সুযোগ থাকবে না।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • সত্যের ওপর অবিচল থাকা ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ।
  • তাওহিদে অবিচল থাকা ও কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করা অপরিহার্য।
  • কিয়ামতের দিন প্রত্যেকের কর্মের হিসাব নেওয়া হবে।
  • অতীত জাতিদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

উপসংহার:

এই পারায় আল্লাহর অসীম দয়া, তাওহিদের গুরুত্ব, কিয়ামতের ভয়াবহতা, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ এবং অতীত জাতিদের ধ্বংসের কারণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এসেছে। এই আয়াতগুলো আমাদের আত্মসচেতন করে তোলে, আল্লাহর পথে অবিচল থাকার তাগিদ দেয় এবং আখিরাতের সফলতা অর্জনের দীক্ষা দেয়। এগুলো আমাদের জন্য শিক্ষা, যাতে আমরা সঠিক পথ গ্রহণ করি এবং আখিরাতের সফলতা লাভ করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন!

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ