|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||
(সূরা ইয়াসীন, সূরা সাফফাত, সূরা ছদ ও সূরা জুমার)
সময়ের প্রবাহে আমরা আজ আল-কুরআনের আরও গভীরে প্রবেশ করছি, যেখানে মহান আল্লাহর কুদরত, তাওহিদের সুসংবাদ, নবীদের জীবনসংগ্রাম ও পরকালের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।
২০ তম তারাবির তেলাওয়াতের মধ্যে সূরা ইয়াসীন, সূরা সাফফাত, সূরা ছদ এবং সূরা জুমারের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহ রয়েছে, যেখানে সত্য-মিথ্যার চিরন্তন সংঘাত, কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ উঠে এসেছে।
১. সূরা ইয়াসীন (২৮-৮৩) – আল্লাহর নিদর্শন ও পুনরুত্থান
কাফেরদের শাস্তি ও অতীত জাতিদের শিক্ষা (২৮-৩২)
- আল্লাহ সেই শহরের অধিবাসীদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যারা তাঁর রাসূলদের অস্বীকার করেছিল।
- অতীতের অনেক জাতি এই একই ভুল করেছে এবং তারা আল্লাহর শাস্তির শিকার হয়েছে।
আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর অসীম কুদরত (৩৩-৫০)
- আল্লাহর সৃষ্টি, বিশেষত উদ্ভিদ, বৃষ্টি, দিন-রাতের পরিবর্তন, সূর্য-চন্দ্রের গতি—এসবের মাধ্যমে তাঁর অসীম শক্তি প্রকাশ পেয়েছে।
- মানুষের উচিত এই নিদর্শনগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া।
কিয়ামত ও পুনরুত্থান (৫১-৮৩)
- একবার কিয়ামত সংঘটিত হলে মানুষের আর ফেরার সুযোগ থাকবে না।
- আল্লাহর এক নির্দেশেই সমস্ত মৃত পুনরুত্থিত হবে।
- মানুষ কেয়ামতের দিন নিজেদের কর্মফল ভোগ করবে, আর আল্লাহর শক্তি ও জ্ঞান নিয়ে কোনো সন্দেহ রাখা যাবে না।
২. সূরা সাফফাত (১-১৮২) – ঈমানদার ও কাফেরদের পরিণতি
ফেরেশতাদের শপথ ও তাওহিদের ঘোষণা (১-১০)
- ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ পালন করেন এবং তাঁর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেন।
- যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তারা ব্যর্থ হবে।
নবীদের ঘটনা ও ঈমানদারদের পুরস্কার (১১-৮২)
- নূহ (আ.), ইবরাহিম (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.), ইলিয়াস (আ.) ও ইউনুস (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
- তারা সবাই আল্লাহর ওপর নির্ভর করতেন এবং কষ্টের পর বিজয় পেয়েছিলেন।
- সত্যের অনুসারীদের জন্য রয়েছে জান্নাত, আর সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও দয়ালু হওয়া (৮৩-১৮২)
- নবী ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন।
- যারা আল্লাহর পথে অবিচল থাকবে, তারা চূড়ান্তভাবে সফল হবে।
৩. সূরা ছদ (১-৮৮) – নবীদের ধৈর্য ও আল্লাহর ন্যায়বিচার
সত্যের বিরোধিতা ও নবীদের ধৈর্য (১-২৬)
- মক্কার কাফেররা কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে সত্য ধ্বংস হয় না।
- দাউদ (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে তাঁকে সুবিচার ও ধৈর্যের মাধ্যমে নেতৃত্বের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল।
নবীদের পরীক্ষা ও তাদের বিজয় (২৭-৬৪)
- সুলাইমান (আ.), আইয়ুব (আ.), ইবরাহিম (আ.), ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইদরিস (আ.)-এর ধৈর্য ও পরীক্ষা বর্ণিত হয়েছে।
- তারা সবাই আল্লাহর ওপর নির্ভর করেছিলেন, আর আল্লাহ তাদের পরীক্ষার পর সম্মানিত করেছেন।
সত্য ও মিথ্যার চূড়ান্ত পরিণতি (৬৫-৮৮)
- আল্লাহই চূড়ান্ত বিজয়ী, আর শয়তান ও তার অনুসারীরা পরাজিত হবে।
৪. সূরা জুমার (১-৩১) – তাওহিদ ও পরকালের বিচার
খালিস ইবাদত ও আল্লাহর ক্ষমা (১-২১)
- মানুষের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর ওপর নির্ভর করা।
- যারা আল্লাহর কাছে খাঁটি অন্তরে ফিরে আসবে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাত।
কিয়ামতের ভয়াবহতা ও মুমিনদের সুসংবাদ (২২-৩১)
- কিয়ামতের দিন কাফেররা আফসোস করবে, কিন্তু তখন আর তাদের কোনো উপায় থাকবে না।
- মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুখবর দেওয়া হয়েছে।
মূল শিক্ষা ও বার্তা:
- আল্লাহর নিদর্শনগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
- নবীদের ধৈর্য ও আত্মত্যাগ আমাদের জন্য আদর্শ।
- তাওহিদ ও খাঁটি ইবাদতই পরকালের সাফল্যের চাবিকাঠি।
- কিয়ামত ও পুনরুত্থানের প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখা উচিত।
উপসংহার:
এই পারায় নবীদের জীবন, ঈমানদার ও কাফেরদের পরিণতি, আল্লাহর কুদরত, কিয়ামতের ভয়াবহতা ও মুমিনদের জন্য সুসংবাদ তুলে ধরা হয়েছে। নবীদের জীবনী থেকে আমরা দেখি কীভাবে তারা ধৈর্য ও ঈমানের দ্বারা বিজয়ী হয়েছেন, আর কাফেরদের পরিণাম কীভাবে শাস্তিমূলক হয়েছে। এই অংশ আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করার, আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হওয়ার এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত থাকার তাগিদ দেয়। এসব থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে যেন আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে পারি, আমিন!
লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর
হাআমা/