সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬


৯ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা হূদ ১-১২৩ ও সূরা ইউসুফ ১-৫২ পর্যন্ত)

কুরআনের প্রতিটি আয়াত আল্লাহর অপার জ্ঞানের উৎস, যা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়। নবম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূরার আলোচনার সাক্ষী হব—সূরা হূদ এবং সূরা ইউসুফ।

এই অংশে অতীত জাতিদের ধ্বংস, নবীদের ধৈর্য ও ত্যাগের গল্প, এবং আল্লাহর বিধানের অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, হূদ (আ.) থেকে শুরু করে লূত (আ.) ও শু'আইব (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কাহিনি আমাদের জন্য এক বিশাল শিক্ষা বহন করে। অন্যদিকে, সূরা ইউসুফ আমাদের ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের এক অনন্য উদাহরণ উপহার দেয়।

১. সূরা হূদ (১-১২৩) নবীদের ঘটনা ও আল্লাহর বিধান

কুরআনের গম্ভীরতা ও সতর্কবার্তা (১-২৪)

  • কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এক স্পষ্ট ও গভীর গ্রন্থ।
  • মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করা হয়েছে এবং কুফরের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
  • যারা দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় এবং আল্লাহর পথ ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে।

অতীত জাতিদের শিক্ষা ও নবীদের দাওয়াত (২৫-১০০)

  • নূহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), লূত (আ.) এবং শু'আইব (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
  • কুফর ও অবাধ্যতার কারণে এসব জাতি কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল, তার বিবরণ এসেছে।
  • নবীরা সত্যের পথে অবিচল থেকেছেন এবং ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

সবক ও উপদেশ (১০১-১২৩)

  • আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাঁর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখতে হবে।
  • নবীজি (ﷺ)-কে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে, যেমন পূর্ববর্তী নবীরা করেছিলেন।
  • ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিদের জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

২. সূরা ইউসুফ (১-৫২) ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর পরিকল্পনার মাহাত্ম্য

ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্ন ও ভাইদের ষড়যন্ত্র (১-২০)

  • ছোটবেলায় ইউসুফ (আ.) এক অলৌকিক স্বপ্ন দেখেন, যা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছিল।
  • তাঁর ভাইয়েরা ঈর্ষাবশত তাঁকে কূপে ফেলে দেয় এবং বাবা ইয়াকুব (আ.)-কে মিথ্যা বলে।
  • এক কাফেলা তাঁকে কূপ থেকে উদ্ধার করে এবং মিশরে এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি তাঁকে ক্রয় করে নেয়।

পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া ও কারাবরণ (২১-৫২)

  • মিশরের শাসকের স্ত্রী তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয়, কিন্তু তিনি ধৈর্য ও সততার পরিচয় দেন।
  • মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
  • কারাগারে তিনি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করেন এবং রাজা তাঁর ব্যাখ্যায় মুগ্ধ হন।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • তাওহীদ ও আল্লাহর বিধানের প্রতি অবিচল থাকতে হবে।
  • নবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ঈমান মজবুত করতে হবে।
  • ধৈর্য ও সততা সবসময় কল্যাণ বয়ে আনে, যেমন ইউসুফ (আ.)-এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।
  • আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোত্তম, এবং তিনি বিশ্বাসীদের পরীক্ষার মাধ্যমে উন্নত করেন।
  • অতীত জাতিদের ধ্বংসের কারণ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

উপসংহার:

এই তেলাওয়াতের অংশে নবীদের দাওয়াত, সত্য ও ধৈর্যের পরীক্ষা, মিথ্যার পরিণতি এবং আল্লাহর পরিকল্পনার মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা আমাদের শেখায় যে, ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস সবসময় কল্যাণ বয়ে আনে। এই আয়াতগুলো আমাদের জানিয়ে দেয় যে, যারা সত্যের পথে অবিচল থাকে, আল্লাহ তাদের কখনোই পরিত্যাগ করেন না। নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবনী প্রমাণ করে যে, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত সম্মান ও কল্যাণ বয়ে আনে। আসুন, আমরা এই শিক্ষাগুলো আত্মস্থ করে নিজেদের জীবন পরিচালিত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন—আমিন!

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর  

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ