রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ।। ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৯ রমজান ১৪৪৬


৭ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা আল-আনফাল ৮:৪১ – সূরা আত-তাওবা ৯:৯২ পর্যন্ত)

পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতেই রয়েছে মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা, উপদেশ ও শিক্ষার অফুরন্ত ভাণ্ডার। সপ্তম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা এমন কিছু আয়াত পাব, যেখানে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্র, যুদ্ধের বিধান, মুসলমানদের বিজয়, মুনাফিকদের কপটতা এবং সত্যিকারের ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।

এই অংশে বদর যুদ্ধের বিজয়, গনীমতের সম্পদ বণ্টনের বিধান এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির ঘোষণা এসেছে। বিশেষ করে, সূরা আত-তাওবাতে মুনাফিকদের পরিচয়, তাদের প্রবঞ্চনা ও তাদের পরিণতির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সত্যিকারের মুমিনদের আত্মত্যাগ, তওবা ও আল্লাহর সাহায্যের প্রতি নির্ভরতার বিষয়টি গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে।

১. সূরা আল-আনফালের সমাপ্তি (৮:৪১-৭৫) যুদ্ধনীতি ও ইসলামের সাফল্য

গনীমতের সম্পদ বণ্টনের বিধান (৪১)

  • বদর যুদ্ধের গনীমতের সম্পদ কীভাবে বণ্টন করা হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • জানানো হয়েছে যে গনীমতের এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, রাসূল (ﷺ), আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত।

বদর যুদ্ধের বিস্তৃত বিবরণ (৪২-৫১)

  • বদর যুদ্ধের দিন মুসলমানদের সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর বিশেষ সাহায্য আসার কথা বর্ণিত হয়েছে।
  • মুসলমানদের মনে রাখা উচিত যে, আসল বিজয় আসে আল্লাহর অনুগ্রহে, নিজের কৌশল বা শক্তি দিয়ে নয়।
  • ফেরেশতাদের আগমন এবং কাফেরদের বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

মুসলমানদের জন্য উপদেশ ও কাফেরদের জন্য সতর্কবাণী (৫২-৭৫)

  • মুনাফিক ও কাফেরদের প্রবৃত্তির কথা বলা হয়েছে—তারা চিরকাল সত্যের বিরোধিতা করবে।
  • মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং দৃঢ়ভাবে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে।
  • মুসলিমদের ঐক্য ও আনুগত্যের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।

২. সূরা আত-তাওবার প্রথম অংশ (৯:১-৯২) তওবা, যুদ্ধনীতি ও সত্যের পরীক্ষার বর্ণনা

মুশরিকদের প্রতি ঘোষণাপত্র (১-৬)

  • যারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সম্পর্ক মুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন।
  • মুশরিকদের জন্য চার মাস সময় নির্ধারণ করা হয়, এরপর তারা যদি ইসলাম গ্রহণ না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
  • তবে যারা বিশ্বস্তভাবে চুক্তি রক্ষা করেছে, তাদের সঙ্গে মুসলমানরা ন্যায়বিচার করবে।

ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি (৭-২৯)

  • কাফের ও মুনাফিকরা কিভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে।
  • যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও আত্মরক্ষার বিধান তুলে ধরা হয়েছে।
  • যেসব লোক মসজিদুল হারামে প্রবেশ নিষিদ্ধ তাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

জিহাদ ও ইসলামের রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ (৩০-৪১)

  • মুনাফিকরা যুদ্ধ থেকে পলায়ন করত এবং অজুহাত দেখাত, তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।
  • ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মুনাফিকদের চরিত্রচিত্রণ ও তাদের প্রতারণা (৪২-৭২)

  • মুনাফিকরা কীভাবে ইসলামের নামে ভণ্ডামি করত, তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
  • তারা যুদ্ধের সময় নানা অজুহাত তৈরি করত, আল্লাহ তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
  • প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, যারা আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত।

যুদ্ধের ব্যাপারে মুসলমানদের পরীক্ষা ও নবীজির দয়া (৭৩-৯৩)

  • নবী (ﷺ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তিনি কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে কঠোর হন।
  • তাবুক অভিযানে মুনাফিকরা অংশ না নিয়ে নানা বাহানা দেখিয়েছিল, তাদের নিন্দা করা হয়েছে।
  • তবে যারা সত্যিকার কোনে ওজরের কারণে যুদ্ধে যেতে পারেনি, তাদের প্রতি নবীজির (ﷺ) দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • গনীমতের সম্পদ বণ্টনের বিধান।
  • যুদ্ধে সফলতার জন্য তাকওয়া ও আল্লাহর সাহায্যের গুরুত্ব।
  • মুনাফিকদের প্রতারণা ও তাদের চিহ্নিত করার উপায়।
  • তওবার গুরুত্ব ও যুদ্ধের সময় সত্যিকারের মুমিনদের পরীক্ষা।
  • ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সবসময় প্রস্তুত থাকা জরুরি।

উপসংহার:

এই অংশে আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানদের বিজয়ের নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়াতগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতের ধর্ম নয়; এটি ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। বদর যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলমানরা যেন আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আর মুনাফিকদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে তাদের থেকে সাবধান থাকে। পাশাপাশি, ইসলামের রক্ষার জন্য জান-মাল দিয়ে প্রস্তুত থাকা জরুরি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করার, এর শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গঠনের এবং এই শিক্ষাগুলো উপলব্ধি করে তাঁর পথে দৃঢ় থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ