নাঈমুর রহমান নাঈম
দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনেক তরুণের শেষ হয়েছে শিক্ষাজীবন। তাকমিল শেষ করা মানে শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক সমাপ্তি। শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক সমাপ্তির পর ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করেন অনেকে। তাদের জন্য অবসর সময়ে একটি লাভজনক ক্যারিয়ার হতে পারে প্রুফরিডিং। দক্ষতার সাথে কাজ করলে সুন্দর ক্যরিয়ার গড়ার অপার সম্ভাবনাও রয়েছে এই পেশায়।
প্রুফরিডিং হলো কোনো লেখা বা নথির ভুল সংশোধনের প্রক্রিয়া। এতে বানান, ব্যাকরণ, বিরামচিহ্ন, বাক্যগঠন, টাইপোগ্রাফি এবং সামগ্রিক পাঠযোগ্যতার ভুল শনাক্ত ও ঠিক করা হয়। সাধারণত এটি প্রকাশনার চূড়ান্ত ধাপে করা হয়, যাতে লেখা নিখুঁত ও নির্ভুল হয়।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একাডেমিক বই-পুস্তক, প্রকাশনা সংস্থা, অনুবাদ সংস্থা, মাকতাবা ও পত্র-পত্রিকা। বর্তমানে ই-পেপারও দারুণ চলছে। এগুলোতে প্রুফরিডিং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আর এ কারণে বর্তমানে প্রুফরিডিং একটি চাহিদা সম্পন্ন পেশায় পরিণত হয়েছে।
প্রুফরিডিং-এ ফর্মাভিত্তিক কাজের মাধ্যমে ভালোমানের আয় হয়। দক্ষতার সাথে কাজ করে মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকারও বেশি আয় সম্ভব। গবেষণাধর্মী বইগুলোর ক্ষেত্রে প্রুফরিডারদের আয় কিছুটা বেশি হয় সেগুলোর পৃষ্ঠা এবং তথ্য বেশি থাকার কারণে। তাছাড়া গবেষণাধর্মী বইয়ের প্রুফরিডিংয়ে পরিশ্রম বেশি ব্যয় হয়। এজন্য এর বাজেটও কিছুটা বেশি ধরা হয়।
প্রুফরিডিংয়ের জন্য একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। কিছু মৌলিক দক্ষতা এবং প্রুফরিডিংয়ের কিছু টিপস অনুসরণ করলে এই কাজে দক্ষ হয়ে ওঠা যায়। লেখার প্রতি যত্নশীল, বানান ও ব্যাকরণগত ভুল শনাক্ত করতে পারে এবং লেখার মান আরে ভালো করতে পারে, এমন মানুষদের জন্য প্রুফরিডিং এর পেশা হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার।
দক্ষ প্রুফরিডার হওয়ার কিছু মৌলিক কথা :
১. প্রুফরিডিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভাষার উপর ভালো দখলদারিত্ব থাকা।
২. ধৈর্যের সাথে লেখার প্রতিটি লাইন পড়া এবং প্রতিটি ভুলত্রুটি খুঁজে বের করা।
৩. লেখার মধ্যে থাকা বানান ও ব্যাকরণগত ভুল সংশোধন করা।
৪. বাক্যের গঠন ও স্পষ্টতা বাড়ানো। কোনো বাক্য অস্পষ্ট বা বিভ্রান্তিকর হলে সেটি পুনর্গঠন করা।
৫. বিরামচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। যেখানে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত সেখানে সঠিকভাবে বসানো।
৬. একটি নির্ভুল ও পঠনযোগ্য লেখা নিশ্চিত করা; লেখার সার্বিক মানোন্নয়ন করা এবং ভুলগুলো ম্পূর্ণরূপে দূর করা।
এই আধুনিক কালে অনলাইন অফলাইন সবক্ষেত্রে লেখক বাড়ছে, লেখার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে প্রুফরিডিং-এর চাহিদাও বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই পেশায় আরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে মাসিক ও চুক্তি ভিত্তিক প্রুফরিডার নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে কাজ পেতে সহজ হবে।
এমএইচ/