|| কাউসার লাবীব ||
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহকে একুশে পদক দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের আলেম সমাজ। নানা দুর্যোগে সমাজসেবার অনন্য নজির স্থাপন করায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ এই পদকে ভূষিত করার দাবি জানানো হয়।
তবে সম্প্রতি আলেম সমাজের অনেকেই এই দাবি জানালেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ প্রস্তাবটি প্রথম উত্থাপন করেন তরুণ আলেম ও সাংবাদিক মুফতি এনায়েতুল্লাহ।
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, স্বাধীনতা পদকসহ বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রদত্ত ১০টি জাতীয় পুরস্কার থাকার পরও তিনি শায়খ আহমাদুল্লাহকে শুধু একুশে পদক দেয়ার দাবি কেন জানিয়েছেন?
তিনি বলেন, চলতি বছরে স্বাধীনতা পদকের জন্য নাম প্রস্তাব করার প্রক্রিয়া আমার জানা মতে ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বছর চাইলেও আর সম্ভব না। একুশে পদকের সময়টা যেহেতু আছে তাই সে বিষয়ে বলা। এবারের একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন প্রস্তাব জমা দেয়ার সময়সীমা আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নাম প্রস্তাব করতে হয়, তাই একুশে পদকের জন্য আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও শায়খ আহমাদুল্লাহর নাম প্রস্তাবে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় আশা করি নতুন বাংলাদেশে আমরা সুন্দর কিছুর সূচনা দেখতে পাবো।
‘এদেশে অনেক আলেম ও তাদের সংগঠন মানবসেবায় কাজ করছে। আপনি শুধু আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও শায়খ আহমাদুল্লাহকে একুশে পদক পাওয়ার উপযুক্ত কেন মনে করলেন?’
এ প্রশ্নের জবাবে মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে যেসব আলেম মানবসেবায় কাজ করছে সবার কাজকেই আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও শায়খ আহমাদুল্লাহর নাম বলে অন্যদের কাজগুলোকে ছোট করছি- বিষয়টি এমন নয়। তার নাম বলার পেছনে বড় কারণ ছিল- সম্প্রতি বন্যায় তিনি যে অবদান রেখেছেন তা পুরো দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। সর্ব মহলে বিষয়টি আলোচিত। শায়খ আহমাদুল্লাহর বুদ্ধিবৃত্তিক এই মানবতার কাজকে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে। তাই তার নামটি যদি প্রস্তাব করা হয়, পদকের তালিকায় তিনি এগিয়ে থাকবেন বলে আমার মনে হয়েছে।
অন্য আলেমরাও কাজ করছেন। তবে শায়খ আহমাদুল্লাহর কাজটি যেহেতু বর্তমানে আলোচিত, তার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার রীতিটা চালু হোক। পরবর্তীতে আরো আলেম সে তালিকায় যুক্ত হবেন।
স্বাধীনতার পর থেকে আলেমদের সেবামূলক কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এতো কাজের পরও তারা কেন রাষ্ট্রীয় পদক পান না? আমরা আমাদের পাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখি- সেখানে আলেমরা নানা সময়ে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। এর কারণ কী?
মুফতি এনায়েতুল্লাহ এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আলেমরা যে কাজগুলো করছে ঠিক একই রকম কাজ করছে আঞ্জুমান মুফীদুল ইসলাম। তারা বেশ কিছু পদক পেয়েছে বলে আমি জানি। কিন্তু আলেমরা পাননি। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয়- আলেমদের নামগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে প্রস্তাব করা হয় না।
বলা যেতে পারে, আল-মারকাজুল ইসলামীর সেবা কিন্তু ঢাকার অনেকেই নিয়ে থাকেন। লাশ গোসল, দাফন, কাফনের কাজটি তারা যত্নের সঙ্গে করে থাকেন। কিন্তু যখন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রীয় পদকের নাম প্রস্তাব করা হয়; তখন আলেমদের এসব প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারিত হয় না। এটা আলেমদের সঙ্গে বৈষম্য। তারা বৈষম্যের শিকার। তাই আমি চাই শায়খ আহমাদুল্লাহর মাধ্যমে এই বৈষম্য দূর হোক। যথাযথভাবে তার নাম প্রস্তাব হোক।
উল্লেখ্য, শায়খ আহমাদুল্লাহ বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক। লেখালেখি, গবেষণা-আলোচনা, সভা-সেমিনারে লেকচার, নানামুখী দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা, উন্মুক্ত ইসলামিক প্রোগ্রাম ও প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং টিভি অনুষ্ঠানে সময় দেয়াসহ বহুমুখী সেবামূলক কাজে সপ্রতিভ গুণী ও স্বনামধন্য এই আলেমেদ্বীন।
কেএল/