|| হাসান আল মাহমুদ ||
কওমি মাদরাসাগুলোতে চাকুরিবিধি, পদায়ন, পদোন্নতি-পদাবনতি, নিয়োগ-বদলির নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম কানুন না থাকায় নতুন মুহাদ্দিস বা উপরস্থ মুদাররিস তৈরী হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলেম, মুহাদ্দিস, গবেষক মাওলানা লিয়াকত আলী।
তিনি বলেন, ‘কওমি মাদরাসাগুলোতে চাকুরিবিধি নাই। পদায়ন, পদোন্নতি-পদাবনতি, নিয়োগ-বদলির নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম কানুন নেই। সেই কারণে মুহাদ্দিস তৈরী হয় না বা উপরস্থ মুদাররিস তৈরী হয় না।’
মাওলানা লিয়াকত আলী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘একাধিক মাদরাসায় যারা পড়ান, এটাতো পার্ট টাইম। কিন্তু যারা আবাসিক থেকে পড়াচ্ছেন, তারা তো ফুল টাইমে সময় দিচ্ছেন, তাদের কেন পদোন্নতি হচ্ছে না?’
‘কোন্ প্রক্রিয়ায় একজন উস্তাদের পদোন্নতি হবে, এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম মাদরাসাগুলোতে নেই। তাই মাদরাসাগুলোতে নতুন শাইখুল হাদিস তৈরী হচ্ছে না। এ না হওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের মাদরাসাগুলোতে কোনো চাকুরিবিধি নেই। পদোন্নতির কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন নেই।’ যুক্ত করেন তিনি।
১৬ জুন ২০২৪ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় মিরপুরে দারুর রাশাদ মাদরাসায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে মাওলানা লিয়াকত আলী এই কথা বলেন।
এসময় তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষায় আছে একজন শিক্ষক ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক, তারপর সিনিয়র প্রভাষক হন। তারপর সহকারি অধ্যাপক হবেন। এরপর সহযোগি অধ্যাপক হবেন। তারপর অধ্যাপক, সিনিয়র অধ্যাপক হবেন। এর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। আমাদের কওমি মাদরাসাগুলোতে এসব নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই নেই। সেই কারণে নতুন মুহাদ্দিস বা শাইখুল হাদিস তৈরী হচ্ছে না।’
‘এর জন্য যারা একাধিক মাদরাসায় পড়াচ্ছেন, তারা দায়ি নয়।’- মন্তব্য করেন তিনি।
তরুণ মুহাদ্দিস তৈরী হয়েছে তার তথ্য তুলে ধরে তাদের প্রশংসা করে মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী জানান, ‘মুহাদ্দিস যে তৈরী হচ্ছে না এটাও ঠিক না। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কওমি মাদরাসাগুলোতে এমন এমন তরুণ মুহাদ্দিস তৈরী হয়েছেন, যাদের ইলম-যোগ্যতার ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। বিশেষ করে উলুম হাদিস তাখাচ্ছুছ বিভাগ খোলার কারণে নতুন এমন তরুণ মুহাদ্দিস তৈরী হয়েছেন, আল্লাহর রহমতে তাদের ইস্তেদাদ, ইলমে হাদিসে তাদের যে অধ্যয়ন, চর্চা, খবরাখবর, জানাশোনা প্রশংসনীয়। আমি তাদের প্রশংসা করি।’
তিনি বলেন, ‘পুরনো মুহাদ্দিস কমে যাচ্ছে, মাজুর হবার কারণে বা মৃত্যুবরণ করার কারণে। নতুনরা হাল ধরবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যোগ্যতা অনুযায়ি পদায়ন করা প্রত্যেক মাদরাসার জন্য জরুরি। দেখা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে নিচের ক্লাসেই পড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু চাকরিবিধি না থাকায় তার কোনো পদোন্নতি হচ্ছে না।’
হাআমা/