শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ কওমি সনদ বাস্তবায়ন সেমিনার থেকে ১৩ দফা প্রস্তাবনা ও ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন চান মুফতী ফয়জুল করীম কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতি সকল বৈষম্যের অবসান হোক: সেমিনারে বক্তারা ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন’ হবিগঞ্জে মহানবী সা.কে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

শবে বরাতের অস্তিত্ব ও আমল কী? যা জানালেন শীর্ষ দুই মুফতি


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের শীর্ষ দুই মুফতি

|| হাসান আল মাহমুদ ||

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ‘শবে বরাত’ নামে ইবাদতের একটি রজনী পালন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এই রজনীতে নফল ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে বিশেষ প্রার্থনা করে সবাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন তুরস্কে ‘বিরাত কান্দিলি,  ইরান ও আফগানিস্তানে ‘নিম শাবান’ এবং আরব দেশগুলোতে ‘নিসফু শাবান’ নামে এই রজনীটি পরিচিত। মহিমাময় এই রজনীর অস্তিত্ব ও আমল প্রসঙ্গে আলোচনা হয় বাংলাদেশের প্রখ্যাত ও শীর্ষস্থানীয় দুজন মুফতির সঙ্গে।

মিরপুর আকবর কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক দেশের শীর্ষ মুফতি ও আলেম মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন জানান, ‘হাদিস শরিফে এ রজনীর নির্দিষ্ট কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ রাতের আমলের ব্যাপারে সহিহ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। হাদিসের ভাষায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানা’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, ‘আরবি শাবান মাসের পঞ্চদশ রাত।’ এ মর্মে তিনি কয়েকটি হাদিস তুলে ধরেন।

এক. হজরত মুয়ায বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ শাবানের পঞ্চদশ রাতে তাঁর বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মুশরিক ও পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (কিতাবুসসুন্নাহ : ১/২২৪; সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫; আত-তারগিব : ২/২৪১)।

দুই. ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘শাবানের মধ্যরাতে (১৫ শাবান) আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং প্রতিটি (মুমিন) বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। তবে পরশ্রীকাতর এবং তাঁর সঙ্গে শিরিককারীদের ক্ষমা করেন না।’ (শোয়াবুল ঈমান : ২৮২৭)।

এসব হাদিসের আলোকে তিনি বলেন, শবে বরাতের সমার্থবোধক শব্দ হাদিসে যদি নাও পাওয়া যায় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। কারণ ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ মুক্তি, ভাগ্য। যেহেতু এ রাতে অগণিত মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং বহু জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, এজন্যই এ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য রেখে ‘শবে বরাত’ নামটির প্রসিদ্ধি ঘটেছে আমাদের উপমহাদেশে।

অতএব, এ রাতের অস্তিত্ব ও আমলের ব্যাপারে যারা নানা উক্তি করেন, তাদের উক্তি নিছক ভ্রান্ত, অযৌক্তিক ও অবাস্তব

তিনি আরও বলেন, এ রাতের অস্তিত্ব নিয়ে আরও অনেক হাদিস রয়েছে, যেগুলোর সনদ ও মানের ব্যাপারে কোনো কালাম বা বিতর্ক নেই। ‘শবে বরাতের তত্ত্বকথা’ নামে আমার একটি গবেষণামূলক বই রয়েছে, তাতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’

শবে বরাতের মাহাত্ম্য এবং এ রাতে আমল-ইবাদত সওয়াব ও প্রতিদান সম্পর্কে কথা হয় ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া মোহাম্মদ ঢাকা’র প্রধান মুফতি ও বিশিষ্ট লেখক মুফতি হিফজুর রহমান-এর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘উম্মতে মোহাম্মাদির জীবন খুব অল্প সময়ের। এ অল্প সময়েই যেন উম্মত বেশি বেশি নেকি অর্জন করতে পারে, সেজন্য আল্লাহ বিশেষ কিছু রাত দিয়েছেন। যে রাতগুলোয় ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম রাত হলো ‘শবে বরাত’। এ ছাড়াও শবে কদর, জুমার রাত এবং দুই ঈদের রাতও বিশেষ গুরুত্ব রাখে। সওয়াব বৃদ্ধি ও গুনাহ মাফের এই রাতগুলো উম্মতে মোহাম্মদির জন্য আল্লাহ তায়ালার বিশেষ উপহার।

এ রাতের আমল-ইবাদতের ফজিলত প্রসঙ্গে তিনি কয়েকটি হাদিস তুলে ধরেন।

এক. হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কাছে শাবানের মধ্যরাত (শবে বরাত) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সে রাতটি জাগ্রত থাক (নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে, তাসবিহ পড়ে, জিকির করে, দোয়া করে) এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কারণ এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরিফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন, আছে কি এমন কোনো ব্যক্তি, যে তার গুনাহ মাফের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব। আছে কি এমন কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেব। আছে কি এমন কোনো বিপদগ্রস্ত, যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে সারারাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের ওপর রহমত বৃষ্টির মতো নাজিল হতে থাকে,’-(ইবনেমাজা : ১৩৮৮)।

দুই. হজরত আলা ইবনে হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা বা হে হুমায়রা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মারা গেছেন কি না! নবীজি (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন। রাসুল (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (বায়হাকি : ৩/১৪০)

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ