|| কাউসার লাবীব ||
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গীর তুরাগতীরে চলছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি। ঠান্ডা বাতাস আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রস্তুত করছেন ইজতেমা ময়দান।
প্রতি বছরের মত এবারো ১৬০ একর জায়গা বিস্তৃত ময়দানে বিশাল শামিয়ানা টানানোর কাজ চলছে। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অস্থায়ী সেতু তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন; যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল ময়দানে খিত্তা-ভিত্তিক মাইক বাঁধা এবং বাতি টানানোর জন্য চলছে বৈদ্যুতিক তার সংযোগের কাজ। পাকা দালানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেট ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওজু ও গোসলের হাউজগুলোও কয়েকদিনের মধ্যে পানিতে ভরে উঠবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক তুরাগ তীরে পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। ইজতেমা উপলক্ষে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন মুসল্লিরা। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র, আলেম-ওলামা, ইমাম-মুয়াজ্জিন, সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবি, শ্রমজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানের কাজ করছেন।
তুরাগ তীরের বিস্তৃত ময়দানে স্টেজ তৈরি, বাঁশ টানানো, মাটিকাটা, নিচু জমি ভরাট, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার, খুটি স্থাপন, সামিয়ানা তৈরি, চট বাধাই, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কার ও পয়োনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
ময়দান ঘুরে দেখার সময় কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আগত আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা এলাকা থেকে জামাত বন্দি হয়ে স্বেচ্চায় কাজ করছি, আমাদের সঙ্গে প্রায় ৪০ জনের মত সাথি ভাই এসেছেন। কেউ মাটি কাটছি, বাঁশ গাড়ছি, উঁচু-নিচু জায়গা সমান করছি, কেউবা আবার তাঁবু টানানোর ব্যবস্থা করছি।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আগত মোশারফ মিয়া বলেন, ব্যস্ততার মধ্যেই একটু সুযোগ পেয়ে আল্লাহকে খুশি করার জন্য ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে এসেছি।
এদিকে, আসন্ন ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবা দিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের একাধিক টিম প্রস্তুত করা হচ্ছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপদে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানিয়েছেন, ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, নৌ টহল, বিস্ফোরকদ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও বিশেষ টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. ইব্রাহিম খান গণমাধ্যমকে জানান, দেশ-বিদেশ থেকে বহু মুসল্লি ইজতেমায় আসবেন। তাদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
প্রসঙ্গত, প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে হযরতজি মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি রাহিমাহুল্লাহ’র হাত ধরে প্রচলিত দাওয়াত তাবলিগের সঙ্গে পরিচয় মুসলমানদের। সময়ের ব্যবধানে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পায় তাবলিগ। বাড়তে থাকে তাবলিগের সাথী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সংখ্যা। তাবলিগের ছোট ছোট জমায়েতগুলো রূপ নেয় ইজতেমায়। সেখান থেকে বিশ্ব ইজতেমা। ভাগ্যক্রমে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।
টঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়ে বিশ্বের প্রায় ১০২টি দেশের নাগরিকদের নিয়ে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫৬টি বিশ্ব ইজতেমা। এখন ৫৭ তম বিশ্ব ইজতেমার জন্য ময়দান প্রস্তত হচ্ছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে মহতি এই আয়োজন। একই দিন ১৬০ একর এই ময়দানে ওইদিন বৃহৎ জুমার নামাজও অনুষ্ঠিত হবে। জুমার নামাজে অংশ নেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মুসল্লি।
কেএল/