|| কাউসার লাবীব ||
শূরা কমিটির বৈঠক ডেকেও স্থগিত করে দিয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া।
গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) জামিয়া পটিয়া বৈঠকটি হওয়ার তথ্য জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির সদরুল মুদাররিস হাফেজ মুফতি আহমাদুল্লাহ ও সহকারী মহাপরিচালক আবু তাহের নদভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি থেকে।
জানা যায়, শূরা বৈঠকের চিঠি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’র সভাপতি, জামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষক আল্লামা সুলতান যওক নদভীর কাছে পৌছলে তিনি ফিরতি চিঠিতে বৈঠক স্থগিতের আহ্বান জানান।
হাফেজ মুফতি আহমদ উল্লাহ ও মাওলানা আবু তাহের নদভীকে সম্বোধন করে লেখা আল্লামা নদভীর চিঠিতে বলা হয়, এই শূরা বেঠক স্থগিত করে জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ’র কর্তৃক যেন বৈঠক ডাকা হয়।
সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা আবু তাহের নদভী স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে শূরা আহ্বানের কারণ সম্পর্কে বলা হয়, দুই দিন আগে জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার পক্ষে-বিপক্ষে জামিয়ার উস্তাদগণের মধ্যে উদ্ভূত নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা বিষয়টির সমাধানের জন্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাকে মজলিসে শুরা আহ্বানের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি হঠাৎ দেশের বাইরে চলে গেলেন। তাই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বিষয়ে আমি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও জামিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেবের সাথে পরামর্শ করি। যেহেতু ইত্তেহাদ-এর প্রধান আল্লামা সুলতান যওক নদভী সাহেব জটিল শারীরিক অসুস্থতায় ভোগছেন, তাই আমরা উভয়ে পরামর্শক্রমে মজলিসে শুরা আহ্বান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং যওক সাহেব হুজুরের (দা.বা.) সাথেও যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জন্য দোয়া করেন এবং আমাদেরকে সুচিন্তিতভাবে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ফরমায়েশ দেন।
এদিকে শূরা বৈঠক স্থগিতের বিষয়ে সদরুল মুদাররিস হাফেজ মুফতি আহমাদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি আমাদের হাতে আসে। যেখানে লেখা ছিল, আপনারা সবাই জানেন অত্র জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজার বিভিন্ন কার্যকলাপে ছাত্র এবং শিক্ষক উভয় মহলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এবং যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে অত্র মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকগণ উনার উপর অনাস্থা প্রকাশ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা ওনার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে একটি প্রস্তাবনায় মাদ্রাসার শিক্ষকদের থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করেন। যা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর, লজ্জাজনক এবং সম্মানহানিকর। এহেন পরিস্থিতিতে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভী অসুস্থ বিধায় আমি মজলিসে শুরার আহবান করি। এবং সবাই উপস্থিত থাকার জন্য শুরার সকল সদস্যগণকে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে অবগত করি। কিন্তু গত দশই অক্টোবর ওবায়দুল্লাহ হামজা কে শুরার বৈঠকে উপস্থিতির জন্য কল করলে মোবাইল বন্ধ পাই।
চিঠিতে আরো বলা হয়, পরবর্তীতে মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা জনাব আবু তাহের নাদভী সাহেবকে আমি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভী সাহেবের কাছে বৈঠকের দাওয়াত নামা নিয়ে প্রেরণ করি। জনাব আবু তাহের নাদভী সাহেব মাওলান যওক সাহেবকে তার দাওয়াত নামা পেশ করেন এবং আমিও মোবাইলে ওনার সাথে সরাসরি কথা বলি । উনি অসুস্থতার কারণে আসার ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবং আমাকে সালামও পৌঁছান কিন্তু পরে হয়তো কারো প্ররোচনায় বাধ্য হয়ে এর কিছুক্ষণ পর অত্র মজলিসে শুরার বৈঠক মুলতবি করে একটি চিঠি লিখেন এবং চিঠিটি ফেসবুকে প্রচার করেন। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্মানহানিকর।
চিঠিতে শেষে বলা হয়, এহেন পরিস্থিতিতে শুরার সদস্যগনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ এবং আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভীর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্থানীয় অভিভাবক জনাব আলহাজ্ব সামসুল হক চৌধুরীর পরামর্শক্রমে আজকের শুরা মুলতবি করা হলো।’
এদিকে গতকালের শূরা বৈঠক স্থগিত হওয়ার পর জামিয়া পটিয়া ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খুব শীঘ্রই আরেকটি শূরা বৈঠক ডাকা হবে জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে।
কেএল/