|| ইউসুফ লাবীদ ||
পবিত্র ধর্ম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দাওয়াত ও তাবলিগ। দাওয়াত আরবি শব্দ, অর্থ ডাকা বা আহ্বান করা। তাবলিগ শব্দটিও একই ভাষার। অর্থ পৌঁছে দেওয়া। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানবসমাজে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ চলে আসছে। নবী ও রাসুলদের তাবলিগের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে বলেন, ‘রাসুলের একমাত্র দায়িত্ব হলো (আল্লাহর দীন মানুষের মাঝে) প্রচার করা। আর তোমরা যা প্রকাশ করো আর যা গোপন করো সবই আল্লাহ জানেন।’-সুরা আল মায়িদা: ৯৯
হজরত মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে নবুওয়ত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটলেও তাবলিগে দীনের কাজ সমাপ্ত হয়নি, সেটা অব্যাহত থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। হজরত রাসুলুল্লাহ সা.-এর উম্মতকে দেওয়া হয়েছে দাঈর মহান দায়িত্ব। যেমন আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘বলো, এটাই আমার পথ; আমি সজ্ঞানে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করি আমি এবং আমার অনুসারীগণ।’-সূরা ইউসুফ: ১০৮
যেহেতু দীনের দাওয়াতের কাজ না থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে তাই রাসুলুল্লাহ সা. ইন্তেকালের আগে দাওয়াতের দায়িত্ব নিজ উম্মতের ওপর অর্পণ করে গেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবীজি বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে দীনের একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও।’ -সহিহ বুখারি: ৪৪১৮
যেহেতেু দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ অত্যন্ত মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু যে কেউ যেনতেনভাবে তা করতে পারে না। তাবলিগের জন্যে কিছু শর্ত রয়েছে এবং দাঈর জন্যে কিছু গুণেরও আবশ্যকতা রয়েছে। আমরা আজ একজন দাঈর পাঁচটি সিফাত বা গুণ নিয়ে আলোচনা করবো-
প্রজ্ঞা: দাঈকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্য প্রতিষ্ঠিত করার মতো প্রজ্ঞা এবং প্রমাণ ও যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনে বিজ্ঞ হতে হবে।
ইখলাস: দাঈকে পার্থিব মোহমুক্ত হতে হবে। সে মানুষকে দীনের দিকে আহ্বান করবে, দীনের কথা প্রচার করবে ইখলাসের সঙ্গে। কোনো প্রকার পার্থিব মোহ তার মধ্যে থাকবে না।
তাকওয়া: দাঈকে মুত্তাকি-পরহেজগার হতে হবে। পূর্ণমাত্রায় তাকওয়া তথা খোদাভীরুতা নিয়ে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। ফাসেক-ফুজ্জারকে অনুসরণ করা যাবে না।
সুভাষী: দীনের দাঈকে অবশ্যই সুন্দর ভাষা ও আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গির অধিকারী হতে হবে।
ধৈর্য: দাঈকে হতে হবে অত্যন্ত ধৈর্যশীল। বিরুদ্ধবাদীদের অবজ্ঞা-উপেক্ষা, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে দীন প্রচারের মহৎ কাজ চালিয়ে যেতে হবে নিঃসংকোচে। আল্লাহ তায়ালা আলোচ্য বিষয়ে নবী করিম সা.কে বলেছেন, ‘যদি তাদের উপেক্ষা তোমার কাছে দুর্বিসহ হয়, তাহলে পারলে জমিনে কোনো সুঢ়ঙ্গ খুঁজে নাও অথবা আকাশে কোনো সিঁড়ি, তারপর তাদের কাছে কোনো মুজিজা নিয়ে এসো। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই তাদের সবাইকে হেদায়েতের ওপর একত্রিত করতেন। সুতরাং তুমি জাহেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।’ -সূরা আল আনআম: ৩৫
আল্লাহ তায়ালা উম্মতের সবাইকে উন্নত গুণসম্পন্ন দাঈ হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
কেএল/