আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।।
১লা মে ’আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। প্রতি বছর ১লা মে গোটা বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালিত হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব দৈহিক, মানসিক ও কৌশলগত শক্তি আছে।
এগুলো কাজে ব্যয় করার নামই শ্রম। মানুষ যতটুকু চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ততটুকু দান করবেন। ইরশাদ করেন, এবং মানুষ তা-ই পায়, যা সে চেষ্ট করে। (সূরাঃ নাজম, আয়াতঃ ৩৯) বেকারত্বকে ধিক্কার দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ তার পিঠে বহন করে কাঠের বোঝা এনে বিক্রি করা, কারো নিকট ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম। (বুখারী) মালিক-শ্রমিক উভয়কে মহানবী (সাঃ) পরস্পরের ভাই আখ্যা দিয়েছেন।
শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? নশ্বর এ পৃথিবীতে অবিনশ্বর কালাম আল কুরআন। মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবনের একমাত্র পথপ্রদর্শক। যেই কুরআনের সংস্পর্শ ছাড়া মানবজনম অর্থহীন, সেই কুরআনে শ্রম ও শ্রমিকের কথা সুষ্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। সম্পদ উপার্জনের হালাল একটি পন্থা হলো দৈহিক শ্রম।
হাদিসে বর্ণিত আছে, এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি, যিনি বকরি চরাননি। (বে: জেওর) যখন নবী-রাসূলগণ নিজ হাতে কাজ করেছেন তখন আমরা কিভাবে কাজ-কর্ম করাকে তুচ্ছ মনে করতে পারি? পরিশ্রম করে উপার্জন করার রেওয়াজ পয়গাম্বরদের মধ্যেও ছিল। হযরত মুসা (আ:) এর শ্রমের ঘটনা উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের (নারীদ্বয়ের) একজন বলল, আব্বাজী! আপনি তাকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোন কাজ দিন।
কেননা আপনার চাকর হিসেবে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (সূরা: কাসাস,আয়াত: ২৬) আলোচ্য আয়াতে ভালো শ্রমিকের দুটি গুণ তথা সামর্থবান ও বিশ্বস্ততার কথা বর্ণিত হয়েছে। সামনের আয়াতে গিয়ে কুরআন মালিকপক্ষের আচারণ শ্রমিকের সাথে কিরূপ হবে? তাও ব্যক্ত করেছে এভাবে, আমি তোমার উপর কোন কঠিন বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই না। (সূরা: কাসাস, আয়াত: ২৭)
অর্থাৎ নিয়োগকর্তার দায়িত্ব হলো তার অধীনস্তদের সামর্থ্যরে বাইরে কোন কাজ চাপিয়ে না দেওয়া। হাদীসে আছে, যদি তোমরা তাদেরকে কোন ভারি কাজ অর্পণ কর তাহলে তাতে তাদের সাহায্য করো। (বুখারী) অর্থাৎ যদি কখনো কর্মচারীদের ভারি কাজ দিতে হয় তাহলে যেন তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। হযরত মিকদাদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, কারো জন্য নিজ হাতের উপার্জন উপেক্ষা উত্তম খাদ্য আর নেই।
আল্লাহর নবী দাউদ (আ:) নিজ হাতের কামাই খেতেন। (বুখারী) অন্যত্র আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন প্রকার উপার্জন উত্তম? তিনি বললেন, মানুষের নিজ হাতের কামাই এবং প্রত্যেক হালাল ব্যবসা। (মিশকাত) ইসলামে দৈহিক শ্রমের মাধ্যমে হালাল সম্পদ অর্জনকে অত্যন্ত মর্যদা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বনবী (সা:) বলেন, শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনকারী আল্লাহর বন্ধু। (আবু দাউদ) দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে হলে শ্রম নিয়োগ করতে হবে। বিনাশ্রমে আল্লাহ তায়ালা রিযিক দেন না। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রুপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা: বালাদ,আয়াত: ৪) শ্রম দিতে কোন লজ্জা নেই।
আল্লাহর নবী আদম (আ:) কৃষি কাজ করেছেন। নূহ (আ:) কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছেন। ইবরাহীম (আ:) গৃহনির্মানের কাজ করেছেন। মুহাম্মদ (সা:) খাদিজা (রা:) এর ব্যবসায় শ্রম দিয়েছেন। শ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করার পর ভঙ্গ করেছে।
২. যে ব্যক্তি স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়েছে। ৩. যে ব্যক্তি শ্রমিকের দ্বারা পুরোপুরি কাজ করিয়ে নিয়ে তার মজুরি প্রদান করেনি। (বুখারী) অপর হাদীসে আছে, শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই আদায় করে দিবে। (ইবনে মাজাহ) মালিকপক্ষকে রাসূল (সা:) বলেন, তোমরা যাদেরকে চাকর বলো, আসলে তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন।
সুতরাং তোমরা যা খাবে, তাদেরকে তাই খেতে দিবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদের তা পরতে দিবে আর তাদের উপর এমন কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দিবে না যা কষ্টকর হয়। (মুসলিম) আর শ্রমিককে নির্দেশ দিয়েছেন, সে যেন চুক্তি মোতাবেক কাজ করে পূর্ণ শ্রম দেয়। ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় না নেয়। ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা অপরিসীম। শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে নবীজি (সা:) বলেন, হালাল রুযি উপার্জন করা অন্যান্য ফরজের পর একটি ফরজ (বায়হাকী) । ইসলাম মালিক-শ্রমিক সকলকে ইনসাফভিত্তিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে।
-এটি