বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: মুফতী ফয়জুল করীম আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পাসের ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৪৯ দিনে কোরআন হিফজ করা বিস্ময় শিশু হাবিবুরকে ছাত্র মজলিসের সংবর্ধনা কাল বাংলাদেশে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, জেনে নিন সফরসূচি আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকার: মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতে ইসলাম পিরোজপুর জেলা শাখা কমিটি গঠিত বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আশ্বাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত: ড. ইউনূস সাতকাছেমিয়া মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী সম্মেলন আগামীকাল থেকে শুরু

ইমানের সঙ্গে মৃত্যুলাভের দশ আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি যুবাইর মাহমুদ রাহমানি

হাদিস শরিফে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের ভালো মন্দ পরিণাম তার শেষ আমল আমল অনুযায়ী হবে। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। কাজেই আলেমগণ কুরআন সুন্নাহর আলোকে এমন দশটি আমলের কথা বলেছেন, যা পালন করলে মৃত্যুকালে কালিমা নসিব হবে, ইনশাআল্লাহ। আমলগুলো নিচে তুলে ধরছি।

১. দৃষ্টির হেফাজত : মুসতাদরাকে হাকেমের হাদিসে এসেছে, দৃষ্টি হল ইবলিসের তীরসমূহের বিষাক্ত একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন ইমান দান করবেন, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে। (মুসতাদরাক; হাদিস নং ৭৮৭৫)

মোল্লা আলি কারি রহ. এক হাদিসের ব্যাখ্যায় লেখেন,
قد ورد أن حلاوة الإيمان إذا دخلت قلبا لا تخرج منه أبدا
فَفِيهِ إِشَارَةٌ إِلَى بِشَارَةِ حُسْنِ الْخَاتِمَةِ لَهُ،

ইমানের মিষ্টতা যখন কোন অন্তরে প্রবেশ করে, কস্মিনকালেও তা থেকে বের হয় না। এতে উত্তম মৃত্যুর প্রতি সুসংবাদের ঈঙ্গিত রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতিহ)

২. নিয়মিত মেসওয়াক: হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, কেউ যদি নিয়মিত পাবন্দির সঙ্গে মেসওয়াক করে, মৃত্যুকালে মালাকুল মওত শয়তানকে মৃতব্যক্তি থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা শামি রহ. লেখেন,
ومن منافعه تذكير الشهادة عند الموت
মেসওয়াকের সর্বোচ্চ উপকারিতা হচ্ছে, মৃত্যুর সময় কালিমায়ে শাহাদাত স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
(রদ্দুল মুহতার)

৩. আল্লাহর শোকর আদায় করা: পাক কুরআনে দয়ালু আল্লাহ বলেছেন, وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

যদি তোমরা শোকর আদায় কর, আমি তোমাদের নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। ( সুরা ইবরাহীম, আয়াত ০৭)

সুতরাং ইমানের নেয়ামতের ওপর শোকর আদায় করলে আল্লাহপাক ইমানের নেয়ামত বাড়িয়ে দেবেন। মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব করবেন।

৪. দান-সদকা: দান সদকা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করেন। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إن الصدقة لطفئ غضب الرب وتدفع ميتة السوء

নিঃসন্দেহে সদকা আল্লাহর ক্ষোভের আগুন নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। ( সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ৬৬৪)

উল্লেখ্য, সবচেয়ে খারাপ মৃত্যু হচ্ছে ইমানহারা হয়ে মারা যাওয়া। কাজেই দানকারী ব্যক্তির মৃত্যু হবে ইমানের সঙ্গে। আল্লাহ তাকে ইমানহারা হওয়া থেকে রক্ষা করবেন।

৫. আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য : আহলুল্লাহ বা আল্লাহওয়ালাগণের সাহচর্য মৃত্যুকালে ইমান নসিব হওয়ার কারণ। হাদিসে এসেছে,
هُمُ الجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُم

এরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের সাহচর্য লাভকারী ব্যক্তিরা বঞ্চিত হবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৪০৮)

এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্য লাভকারী ব্যক্তিগণ মাহরুম হবেন না। মৃত্যুর সময় তাদেরও ইমান নসিব হবে।

৬. আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ : যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসবে, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করবে, আল্লাহ কেয়ামত দিবসে তাকে দুশমনদের কাতারে রাখবেন না৷ ফকিহুন নফস মুফতি রশিদ আহমাদ গঙ্গুহি রহ. বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবনে একবার মহব্বতের সঙ্গে "আল্লাহ" বলে ডাকবে, তার এ ডাক কখনও না কখনও তার জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে।

৭. আল্লাহর ভয়ে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া : হাদিস শরিফে এসেছে, একজন অভিজাত ও সুন্দরী রমনী যদি কোন পুরুষকে আহ্বান করে, আর জবাবে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিকে আরশপাকের নিচে ছায়া দেবেন। ( মুসনাদে আহমাদ)
কাজেই আল্লাহর ভয়ে গুনাহ ছেড়ে দিলেও ইমানি মৃত্যু লাভ করবে।

৮. আজানের জবাব দেওয়া: নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি আজানের জবাব দেয় এবং দোয়ায়ে ওসিলা পাঠ করে, কেয়ামত দিবসে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।
(বুখারি শরিফ) সুতরাং আজানের জবাব দেওয়াও মৃত্যুকালে ইমান নসিব হওয়ার কারণ।

৯. বেশি বেশি কালিমা পাঠ করা: জীবদ্দশায় যে ব্যক্তি যে কাজ বেশি করে বা যে কথা বেশি বলে, মৃত্যুকালেও সে সেই কথা বেশি বলে। এটা অভিজ্ঞতার আলোকে সুপ্রমাণিত। কাজেই যে ব্যক্তি জীবনে বেশি বেশি কালিমা পাঠ করবে, মৃত্যুকালে তার জবানে কালিমা চালু হয়ে যাবে।

১০. ইমানের সঙ্গে মৃত্যুর জন্য দোয়া করা : ইমানের সঙ্গে মৃত্যুর জন্য দোয়া করা হচ্ছে দশম আমল। এজন্য সকাল বিকাল এ দোয়াটি পড়া যেতে পারে, أللهم بارك لنا فى الموت وفيما بعد الموت

এছাড়া, কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও পড়তে পারি, ربنا لا تزغ قلوبنا بعد اذ هديتنا وهب لنا من لدنك رحمة انك انت الوهاب

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন এবং মৃত্যুর সময় ইমান নসিব করুন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিআ হোসাইনিয়া মদিনাতুল উলুম, তজুমদ্দিন, ভোলা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ