বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: মুফতী ফয়জুল করীম আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পাসের ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৪৯ দিনে কোরআন হিফজ করা বিস্ময় শিশু হাবিবুরকে ছাত্র মজলিসের সংবর্ধনা কাল বাংলাদেশে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, জেনে নিন সফরসূচি আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকার: মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতে ইসলাম পিরোজপুর জেলা শাখা কমিটি গঠিত বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আশ্বাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত: ড. ইউনূস সাতকাছেমিয়া মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী সম্মেলন আগামীকাল থেকে শুরু

মুমিন জীবনের মাকসাদ আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া: মুফতি তাকি উসমানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি।।
অনুবাদ: এনাম হাসান জুনাইদ

রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে। আল ফুরকান, আয়াত- ৬৩

এখানে ইবাদুর রহমান তথা রহমানের বান্দা বলার দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সকল মুসলমানের জীবনের মাকসাদ হওয়া উচিত রহমানের বান্দা হয়ে যাওয়া। মানুষ আল্লাহর বান্দা হয়ে যাবে, এটা ছাড়া তার আর কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকবে না- একজন মানুষের জীবনের লক্ষ এমন হওয়া উচিত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপারে কোরআনে কত গুণ বর্ণনা করা হয়েছে- শাহিদ (সাক্ষী), বাশীর (সুসংবাদ দানকারী), নাযীর (সতর্ককারী), সিরাজ (আলোকিত প্রদীপ) ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন আরও অনেক গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু যখন আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মেরাজে নিয়ে গেলেন তখন বান্দা শব্দ ব্যবহার করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, সেই সত্ত্বা কত পবিত্র যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গিয়েছেন। (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত ১) বোঝা গেল, মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় মেরাজ আল্লাহর বান্দা হওয়া।

বান্দা হওয়ার কি অর্থ

বান্দা হওয়ার কি অর্থ? বান্দা হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের ইচ্ছাকে মালিকের ইচ্ছার অনুগামী করে দেয়া। আমার মালিক যা চান আমি তাই করি। আমার মালিক যদি চান, আমি এখন নামাজ পড়বো তাহলে আমি এখন নামাজ পড়বো। তিনি যদি চান আমি এখন পরিবার পরিজনের সাথে মোলাকাত করব তাহলে আমি তাদের সাথে মোলাকাত করব।

একটা হল কর্মচারী, যা বিশেষ কোনো কাজের জন্য বা নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য হয়ে থাকে। যেমন বিশেষ কোনো কাজের জন্য একজন কর্মচারী রাখা হল। তাকে বলে দেয়া হল, এতটা থেকে এতটা পর্যন্ত এটি তোমার কাজ। তোমার আর কোন কাজ নেই। যেমন চৌকিদারি করা, পাহারাদারি করা। কাউকে এই কাজের জন্য রেখে দেয়া হল। তো ওই সময়ে তার আর কোনো কাজ থাকবে না।

অথবা এমনও হতে পারে যে কাউকে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য নিযুক্ত করা হল। তার আর কোন কাজ নেই। তার কাজ নির্দিষ্ট একটা সময় তোমার কাছে বসে থাকা। তাকে বলে দিলে, তুমি ১২ ঘন্টা আমার কাছে বসে থাকবে। আমি যে কাজ করতে বলব সেই কাজ করবে। ১২ ঘন্টা পর তুমি স্বাধীন। তাহলে বার ঘন্টা পর সে স্বাধীন। ওই সময়ের পর তার থেকে আর কোনো কাজ নেয়া যাবে না৷

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গোলাম হয়, মালিকের হুকুমেই তার সারা জীবন কাটাতে হয়। তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তার কোনো নির্দিষ্ট কাজও নেই। তাকে ২৪ ঘন্টা সকল কাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। যদি মালিক বলে পায়খানা পরিষ্কার করো তাহলে সে তা পরিষ্কার করবে। যদি মালিক বলে, আমি তোমাকে অমুক জায়গায় শাসক বানিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেখানে শাসন করো। তাহলে সে শাসন করবে। ইসলামের ইতিহাসে কত গোলাম অতিবাহিত হয়েছেন যারা দেশ শাসন করেছেন। মালিক দেশ শাসনের হুকুম করেছেন। গোলাম দেশ শাসন করেছেন।

বান্দা এমন হবে
বান্দা তো এমন হবে যে, যখন নামাজের হুকুম হবে, তখন সে নামাজ পড়বে। যখন হুকুম হবে, এখন নামাজ পড় না তখন সে নামাজ পড়বে না। সূর্য ওঠার পরপর নামাজ পড়া নিষেধ। তখন সে নামাজ পড়বে না। যখন হুকুম হবে, খাওয়া বন্ধ কর তখন সে খাওয়া পান করা বন্ধ রাখবে। যখন হুকুম হবে, ইফতার কর তখন জলদি জলদি ইফতার করবে। তখন দেরি করবে না। হাদীসে তা'জীল অর্থাৎ ইফতার তাড়াতাড়ি করার কথা এসেছে। (মুসলিম হাদিস ২৩৫৪)

ইলম অর্জন করা অনেক বড় ফজীলতের। কিন্তু বাড়িতে মা-বাবা অসুস্থ। তাদের খেদমত করা দরকার। তাদের পাশে খেদমত করার লোক নেই। এখন ফরজে আইন নয় এমন ইলম হাসিল করতে যাওয়া গোনাহ।

একবার এক সাহাবী রাসূূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলেন। সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, হিজরতের বাইয়াত নিতে এসেছি। এবং বাড়িতে মা বাবাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও, ঘরে ফিরে যাও। তাদের মুখে হাসি ফুটাও যেভাবে তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরিয়েছ। আবু দাউদ, হাদীস ২৫২৮

শখ পুরা করা বান্দার কাজ হতে পারে না
বন্দেগীর তাকাযা এটা নয় যে, মানুষ তার শখ পূরণ করবে। কারো শখ হল, মুফতি হওয়ার। আলেম হওয়ার । এই শখ পুরো করার নাম দ্বীন না। এই শখ পুরা করা বন্দেগী না। বন্দেগী হল, যে সময় যে নির্দেশ সে সময় সেটা পালন করা।

তাবলীগের শখ হল। তাবলীগে বের হওয়া অনেক বড় সওয়াবের কাজ। কিন্তু কারো হক নষ্ট করে তাবলীগে বের হওয়া গোনাহ। পরিবারের হক নষ্ট করে তাবলিগে বের হয়ে গেল। তাহলে ফায়দা হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতি হবে। সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ হবে। এখন তো মালিকের তাকাযা ছিল, মা-বাবার খেদমত করা। পরিবারকে সময় দেয়া। এখন এই তাকাযা পূরণ না করে তাবলিগের শখ পূরণ করতে যাওয়াটা গোনাহ হয়েছে।

মালিকের যখন যে নির্দেশ সেটা তখন পালন করার নাম বন্দেগী। মালিকের ইচ্ছার সামনে একজন বান্দার শখের কোনো হাকীকত নেই। মনিবের হুকুমের সামনে দাসের আবেগ ও জযবার কোনো মূল্য নেই।

আল্লাহ সব জায়গায় এই পরীক্ষা নিয়েছেন। নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। কিন্তু কিছু সময় নামাজ নিষেধ করে দিলেন। নামাজে যিকির হবে, তিলাওয়াত হবে, রুকু হবে, সেজদা হবে, কিন্তু তারপরও নামাজ কিছু সময় নিষিদ্ধ করে দিলেন। এর একটা রহস্য এটাও যে, আমাদের মনে যেন এ কথা না আসে, এই নামাজ নিজেনিজেই কোনো বড় মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত । আসল জিনিস হল আল্লাহর হুকুম। হুকুম মোতাবেক নামাজ পড়া হলে সেটা ইবাদত বলে গণ্য হবে। হুকুম মোতাবেক নামাজ পড়া না হলে সেটা ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। সেটা হবে নাফরমানি।

এ কথা রোযার বেলায়ও প্রযোজ্য। রোজা কত বড় ফজিলতের। কিন্তু তাই বলে কি ঈদের দিন রোযা রাখা যাবে? কেউ যদি ঈদের দিন রোজা রাখে, আল্লাহর জন্য খাওয়া পান করা ছেড়ে দেয়, তার তখন সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ হবে। কারণ এটা হারাম। ঈদের দিনের রোযার কোনো হাকীকত নেই। কারণ এখানে আল্লাহর হুকুম নেই।

যাকাত ও সাদাকার কত ফজিলত। কিন্তু এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা এই পরিমাণ সাদাকা দাও, যাতে তোমার স্ত্রীপুত্রের হক নষ্ট না হয়। যদি হক নষ্ট হয় তাহলে সেটা গোনাহ। সবকিছু সদাকা করে দিলেন আর নিজের স্ত্রী পুত্র উপোস। তাহলে এই সাদাকা হারাম। সাদাকা এই পরিমাণ দাও যে এরপর নিজের জরুরত পুরো করার মত কিছু থাকে। এভাবে আল্লাহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রে একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

হজ্বের ক্ষেত্রেও একই কথা। পুরো হজ এ কথার বাস্তব নমুনা যে কোনো জিনিসই সত্ত্বাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। হাজি সাহেব প্রতিদিন হারাম শরীফে নামাজ পড়তেন। তাওয়াফ করতেন। এক রাকাত নামাজে এক লক্ষ রাকাত নামাজের সাওয়াব পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু যখন যিলহজ্বের ৮ তারিখ হল তখন বলা হল, এখান থেকে যাও। মিনায় যাও। সেখানে কিছুই করতে হবে না। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়। এ হুকুমের একটা কারণ এটাও যে কারো মাথায় যেন এটা বসে না যায়, বায়তুল্লাহ শরীফে নামাজ পড়ার যে ফযীলত সেটা সত্ত্বাগতভাবেই বায়তুল্লাহর।

ফজিলত তো নিজে নিজে হয় না। ফজিলত হয় আল্লাহর হুকুমের কারণে। এখন যদি কেউ মনে করে, আমি মিনায় যাব না। মিনায় যাওয়া ফরজ ওয়াজিব কিছু না। এটা না হলে হজ্ব ভেঙ্গে যায় না। আমি বায়তুল্লায় নামাজ পড়ব এবং এক লাখ রাকাতের সাওয়াব অর্জন করব। তো তার এক লাখ রাকাত তো দূরে এক রাকাত নামাজেরও সওয়াব হবে না। কারণ সে নিজের মনগড়া মত এ কাজ করছে, যা আল্লাহর হুকুমের খেলাফ।

নিজের আকল খাটিয়ে চিন্তা করতে থাকা, যুক্তি তালাশ করতে থাকা এটা বন্দেগী বা দাসত্ব নয়। নিজের শখ পুরো করতে থাকার নাম বন্দেগি না। বন্দেগী হল আল্লাহ যখন যেটার হুকুম করেন তখন সেটা করতে থাকা। আল্লাহ দয়া করে এটা আমাদের অন্তরে বসিয়ে দেন। যখন যেটার তাকাযা, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তখন সেটা করার তাওফীক দান করেন। আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ