মাওলানা তারিক জামিল
দাঈ ও মুসলিম স্কলার, পাকিস্তান
হিজরতের দ্বিতীয় বছর শাবানের দুই তারিখ রোজা ফরজ হওয়ার আয়াত নাযিল হয়। দয়াবান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যাতে তোমরা মুত্তাকি-সংযমী হতে পারো।-(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
জীবদশ্মায় রাসুল সা. ৯টি রমজান পেয়েছেন। আর তাঁর সকল রমজান গ্রীষ্মকালে এসেছে, শীতকালে কোনো রমজান আসেনি। তবে তিনি শীতকালেও রোজা রেখেছেন। আর রমজানের প্রস্তুতি রজব থেকে শুরু করেছেন। ফরজ রোজা কখনো শীতের মৌসুমে রাখেননি।
যখন রজবের চাঁদ দেখতেন এই দোয়া পড়তেন।
اللهم بارك لنا فى رجب وشعبان . وبلغنا رمضان .
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।
শাবানের চাঁদ স্বয়ং নিজে দেখার চেষ্টা করতেন। যদি দেখতেন রোজা রাখতেন অন্যথায় রাখতেন না।
নবী করিম সা. সাহাবাদের কাছে রমজানের এলান দিয়েছেন এভাবে- রাসুল সা. মসজিদে নববির মিম্বারে এসে বললেন, ওটা কে আসছে? পরপর তিনবার বললেন। এরপর হযরত ওমর রা. দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোনো ওহি এসেছে, নাকি কোনো দুশমন?
তখন নবী করীম সা. বললেন, রমজান এসে গেছে। যে রমজানে নফলকে ফরজের সমপর্যায়ের করা হয়েছে। আমলের সাওয়াব ৭০ ভাগ বেড়ে গেছে।
রমজানের মতো ইসলামের অন্য কোনো আমল যেমন, নামাজ, হজ, যাকাত কোনটিই ঘোষণা করেননি।
তখন রমজান ছিলো গরমের মৌসুমে। আর শুরু জামানায় নিয়ম ছিল, মাগরিবের পর যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়তো তাহলে তার জন্য আগামী রোজা শুরু হয়ে যেতো।
একবার এক সাহাবি রমজানের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন। স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, খাবারের কিছু আছে? স্ত্রী বললো- না! কিছুই নেই। পরক্ষণেই স্ত্রী বললো, একটু বসো, আমি তোমার জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করছি।
স্ত্রী ইফতার তৈরি করতে গেলেন। আর সাহাবী ছিলেন ক্লান্ত। সে একটু মাটিতে পিঠ লাগাতেই ঘুমিয়ে গেলেন। পরে যখন তার ঘুম ভাঙলে হতচকিয়ে প্রশ্ন করলেন, হে ইবনে সালিমা! ইফতার কিভাবে করবো? আগামী রোজা তো শুরু হয়ে গেলো।
সাহাবি না খেয়েই রোজার নিয়ত করলেন। প্রচণ্ড গরমের দিন। সূর্যের প্রখর তাপ। এমন দিনে কিছু না খেয়ে রোজা শুরু করলেন। এরপর পরের দিন দুপুরের সময় খিদায় বেহুশ হয়ে পড়লেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে তো বেহুশ হয়ে গেছে।
এ কথা রাসুল সা. এর কাছে পৌঁছালে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি আসে যে, আপনার উম্মতের জন্য সেহরি খাওয়ার পরে রোজা শুরু হবে। কিন্তু এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতকে তারাবি নামাজ দিয়েছেন।
আগের যুগে তারাবি ছিল না। কুরআনের পাঠ ছিল না। আগের যুগে নামাজে তাসবিহ পড়া হতো। কিন্তু এখন কুরআন পড়া হয়। আগের যুগের কুরআনের হাফেজ ছিল না। কিন্তু এখন কুরআনের হাফেজের অভাব নেই।
সাহাবায়ে কেরাম গরমকালে রোজা হওয়ার পরও খুব বেশি ইবাদাত-বন্দেগী করেছেন। বড় দিন থাকে এ সময়। এই বড় দিনের কদর করেছেন তারা। বেশি সময় রোজা রাখতে পেরে তারা গর্ববোধ করতেন।
তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে রমজানের প্রতিটি আহকাম পালন করতেন। আমাদেরও একইভাবে গরমকালে রমজানের কদর করতে হবে। মনে করতে হবে, গরমকালে রোজা রাখাটাও একটা সুন্নত। যেহেতু এ সময়ে নবীজি রোজা রেখেছেন।
(উর্দু থেকে অনুবাদ)