শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

হালাল সম্পদ থেকে দান করা ইবাদত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দান-খয়রাত ও সদকা-জাকাত ইসলামের বিধিবদ্ধ ইবাদত। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে দানের কথাটি সালাতের মতোই অধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। ‘জাকাত’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ৩২ বার, সালাতের সাথে উল্লেখ আছে ২৬ বার; স্বতন্ত্রভাবে আছে চারবার; পবিত্রতা অর্থে রয়েছে দু’বার। জাকাত কখনো ‘সদাকাহ’ এবং কখনো ‘ইনফাক’ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইনফাক শব্দটি ব্যাপক দান, সদাকাহ শব্দটি সাধারণ দান ও জাকাত শব্দটি বিশেষ দানের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও হয়েছে, অর্থাৎ একটি অন্যটির অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

দানের গুরুত্ব :
দান করাকে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। কুরআন-হাদিসে এর অনেক ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে। তাই ইসলামের অপরাপর আমলের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটির জন্যও রয়েছে অনন্যসাধারণ কিছু নির্দেশনা ও নীতিমালা। যদি দানের ক্ষেত্রে সেগুলো রক্ষা করা হয় তাহলে এর যথাযথ প্রতিদানও পাওয়া যাবে। কাজেই সে নির্দেশনাগুলো আমাদের জানা দরকার। দানের গুরুত্ব বোঝাতে কুরআনে মহান রবের ইরশাদ- ‘হে মু’মিনরা, আমি যা তোমাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেই দিন আসার আগে, যেই দিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না এবং কাফিররাই জালিম।’ (সূরা বাকারা-২৫৪)

দানের গুরুত্বে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বাণী আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি ব্যয় করো, আমি তোমার ওপর ব্যয় করব।’ (বুখারি-৫৩৫২)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসে আল্লাহ প্রদত্ত অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায়, গরিব, অসহায়দের মধ্যে দান-সদকার বিষয়ে নির্দেশনা ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

দানের ক্ষেত্রে নিয়তের পরিশুদ্ধতা :
প্রত্যেক কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রে নিয়তের পরিশুদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। দানও এর বাইরে নয়। দানের ক্ষেত্রেও নিয়তের পরিশুদ্ধতা অপরিহার্য।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।’ (বুখারি-১)
অর্থাৎ দান-খয়রাত শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করতে হবে। তবেই এই দান পরকালে বর্ধিত হয়ে দাতার হাতে ফিরে আসবে।

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দান করবে তাদের জন্য মহান রবের ইরশাদ- ‘আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের (ঈমানের) দৃঢ়তা আনয়নের জন্য, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন কোনো টিলার উপর একটি বাগান রয়েছে, তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত হলো, ফলে তাতে দ্বিগুণ ফল জন্মাল। যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে শিশিরবিন্দুও (তার জন্য যথেষ্ট)। আর তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা অতি উত্তমরূপে দেখেন।’ (সূরা বাকারা-২৬৫)

কিন্তু নিয়ত যদি সহিহ ও শুদ্ধ না হয়, তখন হিতে বিপরীতও হয়ে যেতে পারে। হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন সম্পদশালী ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে ওই সব সম্পদ সম্পর্কে যা সে দুনিয়ায় দান করেছিল, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, যে অবস্থায় তার সমুদয় সম্পদ তার সামনে উপস্থিত করবেন। দেখে সে চিনেও ফেলবে। (তাকে বলা হবে) এগুলোতে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে- যেসব খাতে দান করা আপনি পছন্দ করেন এমন প্রতিটি খাতেই আমি আপনার জন্য খরচ করেছি। তখন তাকে ডেকে বলা হবে- ‘তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি খরচ করেছ যাতে তোমাকে দানশীল বলে এবং তা তো বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম-১৯০৫)

সুতরাং কথা একটাই, দান অল্প হোক আর বেশি হোক, আল্লাহর জন্যই হতে হবে। নিয়ত শুদ্ধ করে সামান্য দানও যদি করা যায়, সেটি মৃত্যুর পরে কাজে আসবে এবং পরকালে আমলনামায় যুক্ত হবে, যদিও তা একটি খেজুরও হয়।

দানের প্রকার ও দেয়ার পদ্ধতি :
মৌলিকভাবে দান দুই প্রকার- এক. ফরজ দান অর্থাৎ জাকাত, এটি প্রকাশ্যে দেয়া উত্তম এবং তার জন্য নির্ধারিত কিছু নীতিমালাও রয়েছে। দুই. নফল দান যা অপ্রকাশ্যে দেয়া উত্তম, তবে এটি নীতিমালার ক্ষেত্রে প্রথমটির মতো নয়।

মহাগ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে- ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সূরা বাকারা-২৭১)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে; তাদের জন্য তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোনো আশঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সূরা বাকারা-২৭৪)

উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের ভাষ্যমতে, দান ফরজ কিংবা নফল হোক- প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে উভয় পদ্ধতিতেই দেয়া যায়, তবে ফরজ দান প্রকাশ্যে দেয়া উত্তম, আর নফল দান গোপনে দেয়া উত্তম।

টিএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ