বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: মুফতী ফয়জুল করীম আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পাসের ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৪৯ দিনে কোরআন হিফজ করা বিস্ময় শিশু হাবিবুরকে ছাত্র মজলিসের সংবর্ধনা কাল বাংলাদেশে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, জেনে নিন সফরসূচি আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকার: মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতে ইসলাম পিরোজপুর জেলা শাখা কমিটি গঠিত বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আশ্বাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত: ড. ইউনূস সাতকাছেমিয়া মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী সম্মেলন আগামীকাল থেকে শুরু

একুশে গ্রন্থমেলা : বই কেনার ক্ষেত্রে দুই গবেষক আলেমের পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

চলছে একুশে বইমেলা ২০২৩। বইমেলা শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা, সাংস্কৃতিক, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মেলায়। প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমে ওঠে বইপ্রেমীদের এই মিলনমেলা। আসেন লাখো পাঠক-ক্রেতা। কেনাবেচা হয় কোটি কোটি টাকার বই। বইমেলায় আগত ক্রেতাগণ বই কেনার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন? কেমন বই দিয়ে সাজাবেন নিজের গ্রন্থাগার? এ বিষয়ে কথা বলে ছিলাম দেশের দুই শিক্ষাবিদ আলেম ড. আফম খালিদ হোসেনমাওলানা শরীফ মুহাম্মদ এর সঙ্গে।

ড. আফম খালিদ হোসেনের মতে বইমেলায় আগত পাঠক-ক্রেতারা সীরাতে রাসুল সংগ্রহকে প্রাধান্য দিতে পারেন। কেননা রাসুলের সীরাতে রয়েছে জীবন গড়ার পাথেয়। এছাড়া মানসম্মত ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস সংগ্রহ করার পাশাপাশি যুবকদের চরিত্র নির্মাণ হয় যেসব বইয়ে সেসব বইও কেনা যেতে পারে।

‘বেশকিছু ইসলামী প্রকাশনা এবারের বইমেলায় স্টল পেয়েছে, তারা বিদেশি বিদগ্ধ গবেষকদের বইগুলো মানসম্মত অনুবাদ করে বইমেলায় আনছে। জীবন গঠনের জন্য এসব বইয়ের কোনো তুলনা হয় না। নজরুল, ফররুখ, কায়কোবাদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বইয়ের কথা তো আর বিশেষভাবে বলতে হয় না। তারা বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে বাস করছেন বহু যুগ ধরে।’ -যোগ করেন এই গবেষক আলেম।

তিনি পরামর্শ দেন, ইতিহাস নির্ভর বই কেনার ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদের বইকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ যারা আমাদের জাতিসত্তার নির্মাতা। এদের মধ্যে আছেন হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ তিতুমীর, দুদু মিয়া প্রমূখ।

গবেষক আলেম মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, বই কেনার ক্ষেত্রে বোধ, বিশ্বাস, জ্ঞান ও রুচিকে উন্নত করে এমনসব বই কেনা উচিৎ। অনেকেই মনে করেন, ‘ধর্মীয় বিষয় পালন করে চললে হয়তো আমাকে শুধু ইসলামের বিধানগত বইগুলোই পড়তে হবে। অন্য বই পড়া যাবে না।’ বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। ধর্মীয়ভাবে দৃষ্টিকটূ এমন বই ছাড়া সাহিত্যমানে উত্তীর্ণ বই কিন্তু সংগ্রহ করা যেতেই পারে। এছাড়া এমনকিছু বই আছে যেগুলো সরাসরি ধর্মীয় বই নয়, আবার ধর্ম বিরোধীও নয়। বলা যায় মাঝামাঝি। এর মধ্যে থাকতে পারে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ইত্যাদি। বৈধ বিনোদনের জন্য এসব বইও সংগ্রহ করা যেতে পারে।

‘তবে পাঠক তখনই ভাল মানের বই সংগ্রহ করতে পারবে যখন ভাল মানের বই সরবরাহ করা হবে। তাই রুচিশীল ভাল মানের বই সরবরাহ নিশ্চিত করা মেলা কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব। প্রকাশনীগুলো যেন ধর্মীয় এবং রুচিশীল বই সরবরাহ করে সেজন্য তাদেরকে প্রনোদনা ও উৎসাহ দেয়া উচিৎ। কেননা বইমেলায় অনেক জেনারেল শিক্ষিতরাও ধর্মীয় বই খোঁজে। কিন্তু পায় না।’ -বলেন, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ

আপনি কেন নিয়মিত বই পড়বেন

বই অবসরের বন্ধু। জ্ঞান অর্জনের প্রথম মাধ্যম। কিন্তু ভার্চুয়েল জগতের ছোঁয়ায় আমরা প্রায় বই পড়া ছাড়তেই বসেছি। অথচ নিয়মিত বই পাঠ আমাদের জন্য খুলে দিতে পারে সৌভাগ্যের দরজা। আসুন জেনে নিই তাহলে বই পড়ার উপকারিতা-

মনোযোগ বাড়ায়: ইন্টারনেটের এই যুগে প্রতিটা মানুষ এখন প্রতি মুহুর্তে হাজারো কাজে একসাথে ব্যস্ত থাকে। একসাথে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকতে হয়, সকলের সকল ঘটনার ব্যপারে একদম আপ-টু-ডেট থাকতে হয়। আবার নিজের কাজের খাতিরে ই-মেইল দেখা, কাজের খোঁজ রাখা ইত্যাদি একশ ধরণের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয় নিজেকে। সেখানে একটা বই পড়ার মতো কাজ অনেক ধৈর্যর ব্যাপারই বটে। ঘন্টার পর ঘন্টা তো বটেই, দিনের পর দিন একটা বই নিয়ে বসে থাকার ফলে যেমন আপনার সকল মনোযোগ একদিনে কেন্দ্রীভূত হয়, তেমনভাবেই যেকোন কাজের প্রতি মনোযোগটাও বৃদ্ধি পাবে আপনার।

স্মরণশক্তি বাড়ায়: একটা উপন্যাস পড়ার সময়ে আপনাকে উপন্যাসের অনেকগুলো চরিত্র, চরিত্রের ধরণ, চরিত্রের নাম, উপন্যাসের কাহিনী, উদ্দেশ্য, ইতিহাসসহ বিভিন্ন জিনিস মনে রাখতে হয় এবং এইভাবে মনে রেখেই আপনাকে উপন্যাসটি শেষ করতে হয়। যদিও এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তবুও আপনাকে উপন্যাসের গল্পটির বিভিন্ন বাঁক, এবং বিভিন্ন ঘটনা ও টুকিটাকি মনে রাখতে হয় বলে এক্ষেত্রে আপনার প্রচুর ব্রেইন ওয়ার্ক হয়। যে কারণে, বই পড়ার মাধম্যে আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধি হয়।

উদ্দীপনা তৈরি করে: গবেষণা থেকে প্রমাণ হয়েছে যে মানসিক উদ্দীপনা আলঝেইমার এবং ডেমেনশিয়ার মতো মানসিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। আপনার মস্তিষ্ক উদ্দীপনাময় এবং কর্মচঞ্চল থাকলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আপনার শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই, আপনার মস্তিষ্কের এক্সারসাইজের প্রয়োজন রয়েছে সুস্থ এবং সবল থাকার জন্য। পাজল মেলানো এবং দাবা খেলার মতো খেলাগুলো মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।

মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে: আপনার পছন্দের বিষয় এবং পছন্দের বই এবং পছন্দের লেখা পড়লে মানসিকভাবে আপনি অনেক বেশী শান্ত এবং প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন। গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, আধ্যাত্মিক মূলক বই পড়লে রক্তচাপ কমে যায় অনেকখানি!
এমনকি দেখা গেছে যে, হালকা মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রেও মানসিকশক্তি বৃদ্ধিমূলক বই পড়া খুব সাহায্য করে থাকে।

শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে: খুব স্বাভাবিকভাবেই, আপনি যত বেশী দেশী এবং বিদেশী ভাষার বই পড়বেন আপনার শব্দ ভান্ডার তত বেশী ভারী হবে। শুধুমাত্র পাঠ্যবই পড়ে আপনি কখনোই আপনার শব্দ জ্ঞান বাড়াতে পারবেন না। যত বেশী আপনার শব্দ ভান্ডার ভারী হবে, তত বেশী আপনার কথা বলার উপর অথবা লেখার উপর দখল আসবে। যে অনেক বেশী বই পড়েন, অনেক বেশী জানেন এবং সকলের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, চাকরী ক্ষেত্রে তার উন্নতি হয় খুব দ্রুত।

বিনোদিত করে: বই যে শুধুমাত্র জ্ঞান বাড়ানোর জন্য অথবা তথ্য আহরণের উপায় তা কিন্তু নয়! একটা দারুণ গল্পের বই বা উপন্যাসের বই আপনাকে হাসাতেও পারে আবার কাঁদাতেও পারে। মোট কথা, একটা চমৎকার বই আপনার অনুভূতিগুলো নিয়ে দারুনভাবে খেলা করতে পারে, যা কিনা আপনাকে দিতে পারে সময় কাটানোর জন্য চমৎকার বিনোদন।

বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: কখনো কি এমন হয়েছে, কোন একটা রহস্য উপন্যাস পড়ছেন, সেই উপন্যাসটি শেষ করার আগেই আপনি রহস্য ধরে ফেলতে পেরেছেন? যদি এমন করতে পেরে থাকেন তবে বুঝতে হবে যেকোন পরিস্থিতি এবং ঘটনাকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আপনার খুব দারুণ।
যেকোন সময়ে আপনার এই বিশ্লেষণ ধর্মী চিন্তাধারা আপনার বাস্তব জীবনের কাজের উপরেও প্রভাব ফেলবে এবং আপনাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকবে।

মানসিক চাপ কমায়: অফিসে কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যার চাপ অথবা ভালোবাসার সম্পর্কে চাপ যতোই থাকুক না কেনো, আপনি চাইলেই সবসময়ই এই সকল সমস্যা এবং চাপ থেকে নিজেক সরিয়ে রাখতে পারেন একটা ভালো গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে। খুব দারুণ কোন উপন্যাসের গল্প আপনাকে নিমিষেই আপনার বাস্তব জগতের সমস্যা থেকে অন্য একটা কাল্পনিক জগতে নিয়ে যেতে সাহায্য করে বলে আপনার মানসিক চাপ কমে যায় অনেকখানি।

লেখার দক্ষতা বেড়ে যাবে আপনার: বেশী বই পড়লে যেমন আপনার শব্দ ভান্ডারের ঝুলি ভারী হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে আপনার লেখালেখির উপর দক্ষতা চলে আসে। যত বেশী শব্দ জানেবেন আপনি, তত বেশী লেখার ক্ষেত্রে হাত ভালো হয়ে উঠবে আপনার।

জ্ঞান বৃদ্ধি করে: আপনি যত বেশী বই পড়বেন, তত বেশী আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি বইয়ে থাকে হাজারো রকমের তথ্য, যখন কোন একটা বই আপনি পড়বেন, হোক সেটি গল্পের বই কিংবা কল্পকাহিনী, আপনি বই পড়ার সাথে সাথে নানা ধরণের তথ্য নিজের ভেতরে গ্রহণ করে নিতে পারছেন। জ্ঞান সবসময় এবং সকল ক্ষেত্রেই একজন মানুষকে সমৃদ্ধ করে। সেক্ষেত্রে বই পড়ার জন্যে আপনি নিজেই নিজের উপকার করছেন।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ