৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্বের দুইদিন আগেই লোকজন জমায়েত হয়ে গিয়েছেন মাঠে। মাঠে জায়গা না পেয়ে সামিয়ানা টানিয়েছেন রাস্তায়৷ প্রতিবার এমন সময় এসেও ময়দানে স্থান পান৷ এবারের ইজতেমায় পূর্বের রেকর্ড ভাঙা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগমে এবার ময়দানে স্থান পাননি৷ তাদের সাথে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আওয়ার ইসলামের ইজতেমা প্রতিনিধি, লেখক, আলেম মুযযাম্মিল হক উমায়ের।
তুরাগ নদির তীরে চলছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত৷ এবারের ধর্মপ্রাণ লোকজনের উপস্থিতি পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷ লোকজন দুই দিন আগে এসেও ময়দানে স্থান পাইনি৷ আশ্রয় পেয়েছেন ফুটপাতে৷ জানতে চেয়েছিলাম তাদের দিনকাল কেমন চলছে৷ কয়েকজনের অনুভূতি নিচে তুলে ধরছি৷
রনি ভাই রাজশাহী থেকে এসেছেন৷ এটিই তার ইজতেমায় প্রথম আসা৷ স্থান পেয়েছেন কামারপাড়া রোডের রাস্তায়৷ জানতে চেয়েছিলাম ময়দানে জাগা না পেয়ে তার কেমন লাগছে৷ বললো, আলহামদুলিল্লাহ৷ ইজতেমায় শরিক হতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন৷ শত কষ্ট হলেই সামনের ইজতেমাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ দোয়াও চেয়েছেন৷
কবির ভাই৷ আসছেন সিলেট কানাইঘান থানা থেকে৷ তিনিও জাগা পেয়েছেন রাস্তায়৷ উপরে কোনো সামিয়ানা নেই৷ জানতে চেয়েছিলাম অনুভূতিটা কেমন৷ তিনি জানালেন, রাস্তায় স্থান পাওয়াতে কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই৷ হাসি দিয়ে জানালেন, এখানে আসছিই কষ্ট করার জন্য৷ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য৷ আরাম করার জন্য আসিনি৷ তিনিও জানালেন, সামনের ইজতেমাতেও অংশগ্রহণ করবেন৷
ভাই আফসার আলি৷ আসছেন জামালপুর বকশিগঞ্জ থেকে৷ অন্যরা সাথীরা ময়দানে স্থান পেলেও তারা কয়েকজন স্থান পেয়েছে ফুটপাতে৷ তিনি ২০১৪ সাল থেকে এই ময়দানে আসেন৷ জানতে চেয়েছিলাম অন্য সাথীরা ভিতরে আপনারা রাস্তায় এই বিষয়টি কষ্ট দেয় কি না৷ তিনি জানালেন, মোটেও না৷ কারণ, উপরওয়ালা আমাদের থাকার জন্য এই স্থানকেই বরাদ্দ করেছেন৷ আল্লাহ তায়ালার ফায়সালাতে আমরা সন্তুষ্ট৷ যারা ভিতরে তাদের ফায়দার জন্য আল্লাহ তায়ালা ময়দানের ভিতরে থাকার ব্যবস্থা করেছেন৷
রাস্তাভর্তি লোকজজন চলাচল করছে৷ তারা সকলের সামনেই খেতে বসেছেন৷ জানতে চেয়েছিলাম, লোকজনের সামনে খাওয়াতে কোনো সংকুচতা কাজ করে কি না৷ তিনি জানালেন, না৷ ভালোই লাগে৷ কারণ, তিনি এতো বড়ো মজমাতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন মনে করেই অাল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ৷ সামনের ইজতেমাতেও আসবেন বলে মতামত দেন৷
ভাই মুহাম্মাদ ভাই৷ আসছেন শেরপুর থেকে৷ ইজতেমার মূল পর্বের দুইদিন আগে এসেছেন৷ কিন্তু স্থান পেয়েছেন রাস্তায়৷ প্রতিবার এমন সময় এসেও ময়দানে স্থান পান৷
এবারের ইজতেমায় পূর্বের রেকর্ড ভাঙা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগমে এবার ময়দানে স্থান পাননি৷ জানতে চেয়েছিলাম, ভিতরে স্থান না পাওয়াতে নিজের কাছে কেমন লাগছে৷ জানালেন, দিলের আশা তো ছিলো ময়দানের ভিতরেই থাকতে পারার৷ কিন্তু কি আর করার৷ সবকিছুর ফায়সালা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়৷ রাস্তায় থাকা, খাওয়া ও ঘুমানোতে কিছুটা কষ্ট অনুভব হলেও এতো বড় জমায়েতে অংশগ্রহণ করার আনন্দ সেগুলোকে ম্লান করে দেয়৷ আর এখানে তো কেউ আরাম করার জন্য আসেও না৷ মেহনত-মোজাহাদার জন্যই সকলে আসে বলে তিনি মতামত দেন৷ সামনের ইজতেমাও অংশগ্রহণ করার আশা ব্যক্ত করেন৷
ভাই মুহাম্মাদ সুলতান৷ আসছেন জামালপুর থেকে৷ স্থান পেয়েছেন কলম্পিয়া টেক্সটাইল ঘেঁসে রাস্তার দ্বারে৷ উপরে পলিথিন দিয়ে রাতে ঘুমান৷ নেই কোনো সামিয়ানা৷ জানতে চেয়েছিলাম তার অনুভূতির কথা৷
তিনি জানালেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এই কষ্ট ত্যাগ করেই বের হয়েছি৷ শুধু আমিই না বরং এখানে যারা আসছে আমি মনে করি সকলেই কষ্টকে কোরবানী করেই এসেছেন৷ এখানে কেউ আরামের জন্য আসার নিয়ত করে আসিনি৷ তার সাথে থাকা অন্য সাথীরাও জানালেন এতো বড় মজমায় অংশগ্রহণ করতে পারাটাই বড় চাওয়া-পাওয়া৷ সামনের ইজতেমাগুলোতেও শতভাগ নিশ্চিত দিয়ে বললেন তিনি আসবেন৷ যদি আল্লাহ তায়ালা হায়াতে বাঁচিয়ে রাখেন৷
-এটি