শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

‘দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানার উপর পরিচালিত হয়ে আসছে বাবুনগর মাদরাসা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া। নিম্নে বাণীটি হুবহু উপস্থাপন করা হলো]

“নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মাবাদ। উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও শীর্ষস্থানীয় ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দের উসূলে হাশতেগানা তথা অষ্ট মূলনীতি, আদর্শ ও চেতনাবোধকে ভিত্তি ধরে এই মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠাতালগ্ন থেকেই। বাংলাদেশের প্রাচীন ও বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই যুগ পরেই ১৩৪৫ হিজরী মোতাবেক ১৯২৪ ঈসায়ী সনে জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই প্রতিষ্ঠানটি ভূ-অবস্থানগত দিক থেকেই শুধু দারুল উলূম হাটহাজারীর কাছাকাছি নয়, বরং এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা আলহাজ্ব শাহ সুফী আযীযুর রহমান সাহেব (রহ.)এর সুযোগ্য সাহেবজাদা পীরে কামেল আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (রহ.)।

তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে পড়াশোনা শেষে ফারেগ হয়েছিলেন। এছাড়া বর্তমান মুহতামিম পীরে কামেল হযরত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (দা.বা.) দারুল উলূম হাটহাজারীর মজলিসে শূরার অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বী। এই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) পরবর্তীতে জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীতে আমৃত্যু বহুমুখী খেদমত করে গেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হযরত মাওলানা কবীর আহমদ (দা.বা.) বর্তমানে দারুল উলূম হাটহাজারীর নাযেমে তালিমাত ও মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রতিষ্ঠিতি হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আক্বিদার আন্দোলনের সূচনা থেকেই জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের বর্তমান মুহতামিম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছেন এবং বর্তমানে আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উম্মুল মাদারিস জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর সাথে জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে আসায় প্রতিষ্ঠানটির আজ সফলতার শতবর্ষ ফূর্তি উদযাপনের এই গৌরবের আমরাও সমান অংশিদার।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রটি ১০০ বছর পর্যন্ত মোত্তাকী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের আন্তরিক সহযোগিতায় অত্যন্ত সুচারুরূপে নিষ্ঠার সহিত ইসলামী শিক্ষার বিস্তারসহ দ্বীনের বহুমুখী খিদমত সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকার জন্য দোয়া করি।

জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের নেসাব, শিক্ষাক্রম পরিচালনায় কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণতা, তোলাবাদের প্রতি মেধাবী উস্তাদগণের সতর্ক নজরদারী, ঐকান্তিক নিষ্ঠা, দেওবন্দী মাসলাকের উপর দৃঢ়তা ও স্বকীয়তাবোধ বজায় রাখায় অবিচলতা সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের তা’লীম, তরবিয়ত, তায্কিয়া ও হিক্মত এবং শিক্ষক-ছাত্রদের আমল-আখলাক ও বহুমুখী দ্বীনি খিদমত পরিচালনা বর্তমানে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

বিশেষ করে বর্তমান মুহতামিম পীরে কামেল হযরত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (দা.বা.)এর মতো শীর্ষ মুরুব্বী আলেম, দরবেশ-ই-খোদামস্ত ও মুত্তাক্বী মুরুব্বী কর্তৃক আজিজুল উলূম বাবুনগরের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ব পালনের ফলে প্রতিষ্ঠানটির গুণগত মান, সামগ্রিক মর্যাদা ও খ্যাতির ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে এক নবতর মাত্রা।

আজিজুল উলূম বাবুনগরের ব্যতিক্রমধর্মী ও দৃশ্যমান বিশেষত্ব হচ্ছে, হানাফী মাযহাবের অনুসরণ, সালফ-ই-সালিহীনের অনুকরণ এবং কঠোরতার সাথে সুন্নাত-ই-নববীর সংরক্ষণ এবং দেওবন্দী আদর্শ ও স্বকীয়তাবোধ বজায় রাখার উপর প্রতিষ্ঠানটির দৃঢ় অবিচলতা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজিজুল উলূম বাবুনগর যুগে যুগে জাতিকে উপহার দিয়েছে এক ঝাঁক মেধাবী আলেম, প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস, বিজ্ঞ মুফ্তি, বিদগ্ধ লেখক, তুখোড় বক্তা, আত্মত্যাগী দায়ী এবং নিঃস্বার্থ সমাজ সংস্কারক।

বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের বহু দেশে আজিজুল উলূমের ফারিগীনগণ ইক্বামত-ই-দ্বীন, খিদমত-ই-দ্বীন ও ইত্বাআত-ই-দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে খেদমত করে এসেছেন এবং করে যাচ্ছেন। মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে র্শিক-বিদ্আতের ব্যাপকতার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুহতামিম, শিক্ষক ও ছাত্ররা সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। যে কারণে জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর গতানুগতিকতায় পরিচালিত কেবল মাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি আন্দোলন, একটি বিপ্লব এবং সত্যিকার মানুষ গড়ার একটি প্রবাহমান প্রক্রিয়া।

বহুল প্রচলিত উক্তি ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ একথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় না জাতির মেরুদন্ড সোজা আছে। বরং অবক্ষয়, সন্ত্রাস ও অনৈতিকতার ক্যান্সার শিক্ষার মেরুদন্ডকে গিলে খেয়ে ফোকলা করে দিয়েছে। বর্তমানে জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা, সততা ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এতই অধোগতি হয়েছে যে, যা ভাষায় বর্ণনা করতেও লজ্জা লাগে। খুন-খারাবি, ব্যভিচার, ধর্ষণ ও দুর্নীতি থেকে শুরু করে হেন অপরাধ নেই, যা হচ্ছে না। কুরআন-হাদীস ও বিশুদ্ধ আক্বীদা বিবর্জিত ধর্মবিমুখ শিক্ষা ব্যবস্থাই এ নৈরাজ্য ও দুরাবস্থার মূল কারণ।

আধুনিক শিক্ষার নামে পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণায় লালিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটাদাগে চরিত্রবান ও আলোকিত মানুষ তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে শোচনীয়ভাবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা যে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের জন্ম দেয়, তাক্বওয়ার উন্মেষ ঘটায়, শুচিতার তীব্র অনুভূতি জাগ্রত করে, মাদ্রাসায় শিক্ষিত ছাত্ররা তার প্রকৃত প্রমাণ। দেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনাৎকার নেই, পাপের অবাধ মহড়া নেই, দলীয় রাজনীতির নির্লজ্জ অভিশাপ নেই। আছে কেবল ওহীয়ে ইলাহী ও ইল্মে নববীর পঠন-পাঠন, আছে এক অনির্বচনীয় জ্যোতির্ময় পরিবেশ, আছে উস্তাদ-শাগরিদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক। উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারী, আজিজুল উলূম বাবুনগরসহ দেশের কওমী মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাক্রম পরিচালনা থেকে দেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারক ও পরিচালকদের অনেক কিছু শেখার আছে।

পরিশেষে বহুমুখী বিশেষত্বের অধিকারী ঐতিহ্যবাহী আজিজুল উলূম বাবুনগরী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের এই গৌরবে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (দা.বা.)সহ সকল আসাতেজায়ে কেরাম ও তুলাবাদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানটির সাথে উম্মুল মাদারিসের বহুমুখী দ্বীনি দায়িত্বপালনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করি।

আমি জোর আশাবাদি, ইলমে-দ্বীনের অব্যাহত চর্চা, গবেষণা ও আধ্যাত্মিতার মধ্যে সমন্বয় বিধান, বিশুদ্ধ আক্বীদার অব্যাহত লালন, আকাবিরে দ্বীনের প্রায়োগিক অনুসরণে এবং সর্বোপরি ইসলামকে বিজয়ী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করার প্রাণান্তকর প্রয়াসে জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর গৌরবদীপ্ত অবদানের ধারা অব্যাহত রাখবে, ইনশাআল্লাহ। কালের আবর্তনে আজিজুল উলূম বাবুনগর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাদীস চর্চা ও দ্বীনি গবেষণার অন্যতম কেন্দ্ররূপে পরিণত হোক- এটাই এ মুহূর্তে বড় কামনা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম, আমাদের সকলের মুরুব্বী, পীরে কামেল হযরত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (দা.বা.)এর সুস্থতা, বরকতময় হায়াত এবং প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের সার্বিক কামিয়াবীর জন্য দোয়া করছি।

মুহতাজে দোয়া- (হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া)। মহাপরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।”

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ