মুহাম্মাদ জিয়াউল হক
মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মানব জাতির জীবন বিধান পবিত্র আল কুরআনে সময় অপচয় ও অনর্থক কাজে ব্যয় করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কি ধারণা করে নিয়েছে তাদের অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না? (সূরা আল-মুমিনুন : ১১৫)।
ইসলামে মানুষের অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কাজেই যখনই অবসর পাও ইবাদতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও। এবং নিজের রবের প্রতি মনোযোগ দাও।’ (সূরা ইনশিরাহ : ৭-৮)।
সুতরাং মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত অতীব দামি। প্রবাদ রয়েছে, ‘সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’। সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবহমাণ। একই জলপ্রবাহে যেমন দুবার ডুব দেওয়া যায় না, তেমনি একই সময়কে দুবার পাওয়া যায় না।
পৃথিবীর কোনো শক্তিই সময়ের গতিশীলতাকে রোধ করতে পারে না। সময় কখনো থামতে জানে না, সে আপন গতিতে সদা চলমান। সময় কখনো ক্লান্ত হয় না, তাই তার বিশ্রামেরও প্রয়োজন হয় না। সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল কুরআনে সময়ের শপথ করে বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সূরাআসর-১-৩)। সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি-২৩২৯,)।
পৃথিবীর সফল মানুষের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা সময়কে গুরুত্ব দিয়েছে, তাই আজ সফল। জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে এবং পরকালে আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক পা পর্যন্ত নড়তে পারবে না। প্রশ্নগুলো হলো-তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কিনা?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬)। আজ আমরা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পেছনে ছুটছি।
ভুলে গেছি একদিন আল্লাহতায়ালার দরবারে উপস্থিত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিগুলো দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে।
আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচীন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। পুনশ্চ! অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে প্রদত্ত সব নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা তাকাছুর, আয়াত : ১-৮)।
সময়কে কাজে লাগানোর অন্যতম উপায় হলো লক্ষ্য স্থির করা। লক্ষ্যহীন মানুষ সময়ের অপচয় করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন কর ও তার সদ্ব্যবহার কর। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে।’ (বায়হাকি-১০২৪৮,)।
নয়তো এ সময়ের জন্য আফসোস করতে হবে। কারণ উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করতে না পারলে, অসময়ে শত চেষ্টার পরও তা করা সম্ভব হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে রাসূল) যদি তুমি দেখতে! অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম এখন তুমি আমাদের পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করব। নিশ্চয়ই আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী (সূরা আস সাজদাহ : ১২)।
তাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় যতটুকু সময় পাওয়া যায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা উচিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১০-১১)।
মানুষকে এমনিতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আসুন আলস্য, উদাসীনতা ও দুনিয়ার মোহ পরিহার করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করি। তাহলেই আমরা আরোহণ করতে পারব উন্নতির উঁচ্চ শিখরে এবং উন্নত হবে আমাদের দেশ ও জাতি। মহান প্রভু আমাদের সবাইকে সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করেন।আমিন।
লেখক: আল মারকাজুল ইসলামী (এ এম আই)
-এটি