শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইসলামে বিজয়ের তাৎপর্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।।

১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যমন্ডিত। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, লাখো শহীদের আত্নদান আর কোটি কোটি মানুষের অশ্রুর বিনিময়ে বাঙালী জাতি সেদিন এ বিজয় অর্জন করেছিল। ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম তথা স্বভাব ধর্ম। আর মানুষের স্বভাব হলো সে স্বাধীন থাকবে।

কোনো অন্যায় ও আগ্রাসী শক্তির কাছে নতি স্বীকার করবে না। যখন তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হবে, তখনই সে প্রতিবাদী হয়ে জ¦লে উঠবে। ইসলাম আমাদের এ শিক্ষাই দেয় যে, একমাত্র নিঃশর্ত আত্নসর্ম্পন হবে আল্লাহ তায়ালার সমীপে। কোন জালিম অপশক্তির সামনে মাথানত করা যাবে না।

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, যদি হাত দ্বারা বন্ধ করার শক্তি রাখে তবে উহাকে হাত দ্বারা বন্ধ করে দিবে। যদি এই পরিমান শক্তি না রাখে তবে জবান দ্বারা উহার প্রতিবাদ করবে।

আর যদি এতটুকু শক্তিও না থাকে তাহলে অন্তর দিয়ে উহাকে খারাপ মনে করবে। আর এটা ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। (মুসলিম) বুঝা যাচ্ছে, অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। হক্কানী উলামায়ে কেরাম সর্বকালেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ছিলেন আর তারা জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড়াঁবার শিক্ষা দিয়েছেন।

ইরশাদ হচ্ছে, “খোদাভীরুদের মধ্যে দুই ব্যক্তি বলল, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন, তোমরা তাদের উপর আক্রমন করে দরজায় প্রবেশ কর। অতঃপর তোমরা যখন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তোমরাই জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ^াসী হও”। (সূরা মায়েদা, আয়াত ২৩)

এ কথাগুলো বলেছিলেন সে জাতির দুইজন পরহেজগার আলেম। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকদের অন্যায়-নির্যাতন, বৈষম্য ও প্রতারণার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলমত নির্বিশেষে এ দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন হক্কানী উলাময়ে কেরাম।

বিশেষ করে উলাময়ে দেওবন্দের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এক মহা নিয়ামত। পক্ষান্তরে পরাধীনতা আল্লাহর লা’নত। ইসলামে স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, তারা এমন লোক যাদেরকে আমি শক্তি-সামর্থ (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা) দান করলে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত (সূরা হজ্জ, আয়াত ৪১)।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের যে সংগ্রাম ছিল, তা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই মুক্তিযুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন তাদের কাছে আমরা চির ঋণী।

কেননা তাদের কুরবানীর বদৌলতে আমরা জালেমের কাছ থেকে পেয়েছি মুক্তি। বিজয়ের আনন্দে কি আমল করা উচিত? ইসলাম বলে, (১) আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করা।

কেননা পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে বহু জাতি পরাধীনতার গ্লানি নিয়ে ধুকে ধুকে মরেছে। কোন কলাকৌশল, বিদ্যা-বুদ্ধি তাদেরকে মুক্ত করতে পারেনি যতক্ষন না আল্লাহ তায়ালা দয়া-অনুগ্রহ করেছেন। (২) মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন তাদেরকে যথাযথ সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। (৩) মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে দোয়া ও ইস্তেগফার তথা ঈসালে সওয়াবের মাধ্যমে স্বরণ করা।

পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ হচ্ছে, যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চই তিনি ক্ষমাকারী। (সূরাঃ নছর) অর্থাৎ বিজয় অর্জিত হওয়ার পর কোন সংঘাত সংঘর্ষ নয় বরং সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি অর্জনে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

রাসূল সা. মক্কা বিজয়ের দিন অত্যাচারী কাফের-মুশরিকদের সাথে যে আচরণ করেছিলেন, তা আমাদের জন্য শিক্ষাণীয়। তিনি প্রতিশোধের বদলে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমি তোমাদের তাই বলবো, যা ইউছুফ আ. তার ভাইদেরকে বলেছিলেন, “আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, যাও তোমরা সবাই মুক্ত”। এভাবে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার জয়-পরাজয় ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাতের বিজয় হলো আসল বিজয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করা হবে, সেই হলো প্রকৃত বিজয়ী। (সূরাঃ ইমরান, আয়াত ১৮৫) বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গিকার হোক অনাবিল শান্তি ও চিরন্তন বিজয়ের একমাত্র জায়গা জান্নাত অর্জনে ব্রতী হওয়া। (শব্দঃ ৫৯৮)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ