শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

খেলাধুলার শরয়ী সীমারেখা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আহমাদ রাফি জাকির: ইসলামী শরীয়া'হর মূলনীতি ও বিধি-বিধান আল্লাহ তা'আলা মানুষের জন্য উপযোগি ও কল্যাণকর বানিয়েই সাজিয়েছেন। ইসলাম মানব জিবনের লক্ষ্যস্হির রেখে আনন্দ-ফূর্তি ও প্রফুল্লতাকে পুরো সমর্থন করে। তাই শরয়ী বিধি-বিধান পালনে সংকীর্ণমনা ও মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে আমাল করার বিপরীতে আনন্দ-ফূর্তি ও প্রফুল্ল মনে আমাল করাকেই ইসলাম অধিক পছন্দ করে। এই মূলনীতির আলোকে খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রেও শরীয়ত সমর্থিত আনন্দ-উল্লাস ও বিনোদনকে ইসলামে পুরোপুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সুনানে ইবনে মাজাহ'র হাদিসে এসেছে, তিনটি খেলা ছাড়া মানুষের জন্য অন্যান্য খেলা অনর্থক ও বেকার।
[১] তীরন্দাজ করা [২] ঘোড়া প্রশিক্ষণ দেয়া [৩] আপন স্ত্রীর সাথে খেলা করা।

জামে সগীরে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনটি খেলার স্থানে চারটি খেলা বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। [১]আপন স্ত্রীর সঙ্গে আনন্দ-ফূর্তি ও খেলাধুলা করা। [২] নিজ ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া [৩] দু'টি নিশানার মাঝে চলা [তীর চালানো] [৪] সাঁতার শেখানো।

ইসলামের পছন্দনীয় খেলাসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে তীর চালানো। রাসুল সা. এই খেলা শেখাকে সাওয়াব ও পূর্ণের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্ব বরেণ্য মুফতি আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,"তীর নিক্ষেপ" শব্দটি ব্যাপক। তীর নিক্ষেপ শব্দের মধ্যে অন্যান্য নিক্ষেপের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।

যেমন: লক্ষ্য নির্ধারণ করে গুলি ছুঁড়া, রকেট,মিসাইল, বোমা নিক্ষেপ ইত্যাদি। এগুলোর প্রশিক্ষণ শারীরিক-মানসিক ব্যায়ামের পাশাপাশি পূর্ণ ও ছাওয়াবের কাজ। বিশেষত: কাফির-পরাশক্তির সাথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফলপ্রসূ।

আর অশ্ব পরিচালনা করা ইসলামে অতি পছন্দনীয় খেলা। এই খেলা শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে দক্ষতা,সাহসীকতা,দূরদর্শিতা এবং মনের বিশালতার মত উঁচু গুনাবলির সমন্বয় ঘটায়। তৃতীয় পছন্দসই খেলা হলো স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে আমোদ-প্রমোদ ও আনন্দ-ফূর্তি করা। দাম্পত্য জীবনের হিকমাতের দিকে খেয়াল করলে তা শুধু জায়েজই নয় বরং অনেক পূর্ণ ও ছাওয়াবের কাজও বটে।

এছাড়াও সাঁতারের অনুশীলন,দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি খেলা ইত্যাদি হাদিস ও আসার সমূহের দ্বারা প্রমাণিত বৈধ খেলার অন্তর্ভুক্ত। শরয়ী বিধানের আলোকে এই খেলাগুলো জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর যেসব খেলা কোন গুনাহের কাজ সমর্থিত বা সহায়ক তা একেবারেই নাজায়েয।

যেমন: যে খেলাগুলোতে ইসলামি শরীয়া'হর খেলাফ কাজ হয় বা শরয়ি বিধি-বিধান লঙ্গন করা হয়, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা থাকে,গান-বাজনা-বাদ্যযন্ত্রের ছড়াছড়ি সহ আরও যেসব খেলাধুলা ইসলামি বিধি-বিধান পালনে তথা নামাজ, রোজা, ইবাদত-বন্দেগী আদায়ে গাফিল করে তোলে বা যে খেলা উদ্দেশ্যহীন,শুধু সময় কাটানোর জন্য হয় তাও নাজায়েজের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সম্প্রতি আলোচিত ক্রিকেট খেলা:

বর্তমান সময়ে খেলাধুলার কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বে যার বিশাল জনপ্রিয়তা। সারা দুনিয়ার খেলার আশিকরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্রিকেট কান্সারে আক্রান্ত। সম্প্রতি তা মহামারী আকার ধারণ করেছে। চলমান সময়ে দৈনিক নিউজ প্রতিটাতেই ক্রিকেট সংবাদের ছড়াছড়ি। দর্শকরা আপন সমর্থিত দলের প্রতি ভক্তি দেখানোর প্রয়োজনে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হচ্ছে। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সমর্থিত বেফানা আবেগিদের ব্যানারে ব্যানারে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো শহর-বন্দর,হাট-বাজার।

টিভি-সিনেমার পর্দায় হাজারো দর্শক দিন-রাত ক্রিকেট খেলা দেখায় লিপ্ত। নামাজ, রোজা, এবাদত, বন্দেগি পালনের কোন তোয়াক্কাই করছে না। এতে মানুষের গাফিলতি সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। মানুষ দিবারাত্রি ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত। আর ক্রিকেট খেলায় পুরুষ-মহিলা, যুবক-যুবতীদের অবাধ অংশগ্রহণ, এতে গণমানুষ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রচুর অর্থ ব্যয় ও ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, যা পুরো জাতির জন্য বিরাট ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। মুফতি তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,

এসব বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান সময়ে ক্রিকেট খেলাকে বৈধ বলার আর সুযোগ নেই। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ইসলামি বিধি-বিধান পুরোপুরি বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক:
মুহাদ্দিস: জামেয়া আবুহুরায়রা রা. আল-ইসলামিয়া, এয়ারপোর্ট, সিলেট।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ