আবদুল্লাহ তামিম।। কুমিল্লার এক মাহফিলে আমন্ত্রিত আলোচক মুফতি মুস্তাকুন্নবী। ওই মাহফিলে তাকে বসিয়ে রেখে গজল পরিবেশন করতে গেলে তিনি রাগান্বিত হোন। এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক।
জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে চলতি মাসের ১৫ তারিখে কুমিল্লার লালমাই গোসাই পুস্করিণী খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসা কিছু আলোচনা আওয়ার ইসলাম পাঠকের জন্য তুলে ধরছি-
বিষয়টি সামনে এনে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা গাজী ইয়াকুব বলেন, মুফতি মুশতাকুন্নাবী দেশ-জাতি তথা উম্মাহর সম্পদ। ওনার ভিডিও চিত্রটির সাথে আমি হাজারবার সহমত। ছয়ঘন্টা জার্নি করে আসার পরে ওনাকে স্টেজে বসিয়ে রেখে শিল্পীকে মাইক দেওয়া কতটা শিষ্টাচার? ইসলামি সঙ্গিত আমরাও শুনি তা-ই বলে সময়টাতো বুঝতে হবে। একটি মুবাহ বিষয় নিয়ে হাক্কানি আলেমকে হেয় করা অনুচিত।
মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী লিখেন, ওয়াজ মাহফিলে হামদ-নাত-গজল গাওয়া দূষণীয় নয়; তবে আলোচককে বসিয়ে এসব করা উচিত না। অনেক জায়গায় আলোচককে বসিয়ে অমুক-তমুককে ভাষণ দিতে দেওয়া হয়। এগুলোও বন্ধ করা উচিত। মাও. মুশতাকুন্নবী যা করেছেন তা ভালোই করেছেন। দোষের কিছু দেখি না।
মারকাযুল ফুরকার আইডিয়াল স্কুল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশাররফ হুসাইন মাহমুদ ঘটনায় প্রিয় ভাই মুহরাতাম মুফতি মোস্তাকুন্নবী কাসেমি- এর সমালোচনায় মুখোর হয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বিশেষত ইসলামী সংগীতের শিল্পীবৃন্দ। ইতোমধ্যে অনেকের মন্তব্য দেখে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি। যাদেরকে ভালোবাসার নজরে দেখতাম, তাদেরকে দেখে এখন লজ্জা হচ্ছে। আফসোস, এই মাদরাসা পড়ুয়া কিংবা মাদরাসায় পড়ার ভান করায় অভ্যস্ত নষ্ট প্রজন্মকে নিয়ে। এরা শুধু বড়োদের আক্রমণই করতে শিখছে।
খতিব ও ক্বারি মাওলানা ওমর ফারুক মাসউদী বলেন, শায়খ মুফতী মুশতাকুন্নবী সাহেব হাফিজাহুল্লাহ স্টেইজে বসে গজল শুনছেন এবং মনোযোগ দিয়েই শুনছেন, এমন বেশ কিছু ভিডিও যেমন অনলাইনে আছে, তেমন আমি নিজেও অসংখ্য মাহফিলে এমন ঘটনার একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অনলাইনে ভাইরাল হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি স্থান-কাল পাত্র ভেদে মাহফিল কমিটির উপস্থাপনার ত্রুটি ও অসচেতনতার জন্যই হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
দাবানল শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক, মাওলানা কাউসার আহমদ সুহাইল বলেন, সমালোচনার মরু সাইমুম দিয়ে বক্তা আর শিল্পীদের মাঝে বাঁধ তৈরী করা কোনভাবেই কাম্য নয়। কাছে আসার গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে প্রিয় মানুষদের দূরে ঢেলে দিয়ে নিজেদের অপাংতেয় করার মাঝে কোন কল্যান নেই।
স্যোশালিশ্ট ওমরফারুক ফেরদৌস বলেন, দুই মিনিটের একটা ভিডিও ক্লিপ দেখে মানুষকে বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা চালু হয়েছে, এটা অত্যন্ত বিপদজনক। আমরা প্রত্যেকে মানুষ, কেউ খোদা বা ফেরেশতা না। কোনো দুর্বল মুহূর্তে একজন মানুষের কি একটু মেজাজ খারাপও হয়ে যেতে পারবে না? প্রতি বছর প্রায় একশত মাহফিলে তিনি ওয়াজ করেন, এ যাবত শত শত মাহফিলে তিনি গেছেন, ওয়াজ করেছেন, তার কোনো খারাপ বা অহংকারী আচরণ কি কেউ দেখেছেন?
এদিকে সেই মাহফিলে আমন্ত্রিত সংগঠন ছিলো রংধনু শিল্পীগোষ্ঠী, তারাই গজল পরিবেশন করছিলেন সেখানে। এ ঘটনা সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে রংধনু শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, আল্লামা মুশতাকুন্নবী আমার উস্তাদ ও মুরব্বি। দীর্ঘ ৬ঘন্টা জার্নি করে মঞ্চে এসে বসেছেন। এসময় পরিস্থিতি না বুঝে কতৃপক্ষের পক্ষে উপস্থাপক রংধনু শিল্পীগোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করায় হুজুর রেগে গেলে অনাকাঙ্খিত এই ঘটনা ঘটে। আমি আমার জীবনে যাদেরকে আইডল মনে করি তাদের অন্যতম আল্লামা মুশতাকুন্নবী হাফি.। আমাদরে টিম অসংখ্য মঞ্চে হুজুরের সামনে সংগীত পরিবেশন করে বাহবা পেয়েছে। কখন এমন ঘটনা ঘটেনি। পারিবারিকভাবেও হুজুরের সাথে আমাদের ভালো একটা সম্পর্ক। সবমিলিয়ে হুজুর আমাদের আজীবন মুরব্বী। হুজুর আমাদেরকে শাসন করার ক্ষমতা রাখেন , শুধু ধমক দিয়ে নয়, প্রয়োজনে বেত দিয়েও। এবং এই ধমককে আমরা রহমত হিসেবেই নিয়েছি। নিবোও।
আল্লামা মুশতাকুন্নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও এ বিষয়ে অন্য মাহফিলে তার মন্তব্য পাওয়া গেছে, তিনি বলেন, বয়ানে তিনি বলেন আমি গজলের বিরোধী নই। কথা হলো, আপনারা আলাদা সময় করে গজলের প্রোগ্রাম করুন। স্টেজে উলামায়ে কেরামকে বসিয়ে রাখবেন না।
-এটি