শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

ওলামায়ে কেরামের মর্যাদা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল কাইয়ুম শেখ।।

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও কুরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞানে বিশেষজ্ঞ আলেম-ওলামাদেরকে আল্লাহ তাআলা ইহ ও পরকালে অনন্য মর্যাদায় ভূষিত করবেন।

কুরআন শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও যারা প্রজ্ঞাবান আলেম আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১) মহান আল্লাহ ইহকালেও আলেম-ওলামাগণকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন এবং পরকালেও তাদেরকে সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করবেন।

আল্লাহ তাআলা আলেম-ওলামাগণকে দোজখের শাস্তি প্রদান করবেন না। তিনি পরকালে তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন ও জান্নাত দান করবেন। ‘হজরত আবু মুসা আশআরি রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বান্দাদেরকে উত্থিত করবেন।

এরপর ওলামায়ে কেরামকে সম্মান দিয়ে বলবেন, হে আলেম সম্প্রদায়! আমি তোমাদের মধ্যে আমার ইলম এ জন্য রাখি নি যে, তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করব। তোমরা যাও। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম।’ (মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪২৬৪)

বিভিন্ন হাদিসে ওলামায়ে কেরামের মাহাত্ম্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হাদিসে ওলামা সম্প্রদায়কে মোমবাতির মত কল্যাণকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোমবাতি যেমনিভাবে নিজে জ্বলতে জ্বলতে অন্যকে আলো দান করে ঠিক তেমনি ভাবে ওলামায়ে কেরাম চেষ্টা, পরিশ্রম ও মুজাহাদার মাধ্যমে উম্মতের লোকদেরকে ইসলামের নির্দেশনা অবহিত করে তাদেরকে সঠিক পথে আনয়ন করার চেষ্টা করেন।

তাদের উদাহরণ কল্যাণকর প্রদীপ তুল্য। প্রদীপ যেমন অন্যদেরকে আলো দান করে ঠিক তেমনিভাবে ওলামায়ে কেরাম অন্যদেরকে ইসলামের আলো প্রদান করেন। হজরত জুনদুব রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন আলেম ব্যক্তি যে মানুষকে কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দেয় এবং নিজের কথা ভুলে যায় তার উদাহরণ হল এমন প্রদীপের মতো যে নিজে জ্বলতে জ্বলতে অন্যকে আলো দান করে।’ (মুজামে কাবির-তাবারানি, হাদিস : ১৬৮১)

অন্য আরেকটি হাদিসে আলেম-ওলামাগণকে এমন উপকারী বৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে ঘাস-পাতা, তরু-লতা, ফুল ও ফল উৎপন্ন হয়। হজরত আবু মুসা রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে যে হেদায়েত ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হলো জমিনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে।

আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে।

এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৯)

সাধারণ মানুষও ইবাদত-বন্দেগি করে এবং আলেম-ওলামাগণও ইবাদত-বন্দেগি করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের চেয়ে ওলামায়ে কেরামের মর্যাদা বেশি। কেননা সাধারণ মানুষ যখন ইবাদত করেন তখন তাদের ভুলভ্রান্তি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কেননা তারা অনেকটা অজ্ঞাতে ও অজান্তে ইবাদত-বন্দেগি করে।

পক্ষান্তরে ওলামায়েকেরাম কুরআন-হাদিসের বিধান জেনে সে অনুযায়ী ইবাদত-বন্দেগি করেন। তাদের ইবাদতে সাধারণ মানুষের তুলনায় ভুলভ্রান্তি হওয়ার আশঙ্কা নিতান্ত কম থাকে। তাই আলেম-ওলামাগণের মর্যাদা সাধারণ ইবাদত গুজার সাধক ব্যক্তির চেয়ে বেশি। ওলামায়ে কেরামের সম্মান ও মর্যাদা এত অধিক যে, তাদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতামণ্ডলি, আসমান-জমিনের অধিবাসী, গর্তের পিপীলিকা ও পানির মাছ পর্যন্ত কল্যাণের দোয়া করে।

হজরত আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন, দু’জন লোকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আলোচনা করা হল। তাদের একজন আবেদ এবং অন্যজন আলেম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার মর্যাদা যতখানি, ঠিক তেমনিভাবে একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের উপর ততখানি।

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ এবং আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দু’আ করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ২৬৮৫) ওলামায়ে কেরাম ইলমে দ্বীন অন্বেষণ করেন। তারা ইলমে দ্বীনের আহরণে রত থাকেন।

আর যেসব লোক কুরআন হাদিসের জ্ঞান অন্বেষণে রত থাকে তাদের জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যায়। তাদের জন্য আসমান-জমিনের অধিবাসী এমনকি গভীর সমুদ্রের মাছও দোয়া করে। হজরত আবু দারদা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্য হতে কোন একটি পথে পৌঁছে দেন।

ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দুআ প্রার্থনা করে, এমনকি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। সাধারণ ইবাদাতগুজার ব্যক্তির উপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা।

আলেমগণ হলেন নবিদের উত্তরসূরি। নবিগণ কোন দিনার বা দিরহাম উত্তরাধিকাররূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইল্‌ম। সুতরাং যে ইল্‌ম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১)

সমাজে ওলামায়ে কেরামের উপস্থিতি নেয়ামত তুল্য। আলেম-ওলামাগণ যদি না থাকেন, তাহলে জাতি দিকভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট ও সত্যচ্যুত হয়ে যাবে।

হক্কানি উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে বিদ্যমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত বাতিল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। বাতিলের বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরাম সদা সোচ্চার থাকবেন এবং তাদেরকে রুখে দাঁড়াবেন। তারা সত্য কথা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। ফলে মানুষ কল্যাণকর বিষয় জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে সক্ষম হবে।

তারা মূর্খদের মূর্খতার কারণে ভ্রান্ত ও বিচ্যুত হবে না। সঠিক পথের উপর অটল অবিচল থাকার জ্ঞান লাভ করতে পারবে। ওলামায়ে কেরামের দিক নির্দেশনার আলোকে তারা সরল সঠিক পথে চলতে সক্ষম হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. বলেন, আমি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে ইল্‌ম দান করেছেন, তা হঠাৎ ছিনিয়ে নেবেন না বরং উলামাগণকে তাদের ইল্‌মসহ ক্রমশ তুলে নেয়ার মাধ্যমে তা ছিনিয়ে নেবেন। তখন কেবল মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে।

তাদের কাছে ফাত্‌ওয়া চাওয়া হবে। তারা মনগড়া ফাত্‌ওয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৭৩০৭) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উলামায়ে কেরামকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছেন। তাই আসুন! আমরাও তাদের কে সমুন্নত মর্যাদায় সমাসীন করি।

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ