মুফতি আবুল কালাম আনছারী
আলেম ও শিক্ষক
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কল্যাণ ও পরোপকার তার লালিত স্বপ্ন। তাই তো ইসলামি সভ্যতা আর প্রাচ্য-প্রতীচ্যের অন্য যে কোনো সভ্যতার তুলনা হয় না। ইসলামি সভ্যতা সৃষ্টির কল্যাণে এক সার্বজনীন সুমহান সভ্যতা। এর মূলে রয়েছে আল্লাহর প্রেরিত জীবন-বিধান আর রাসুলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ।
প্রতীচ্যের সভ্যতা যেখানে দেখায় অত্যাচার, অপশাসন আর বেপরোয়া শোষণের নীতি, ইসলাম সেখানে নির্দেশ করে ন্যায়-নিষ্ঠা, সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন। ইসলাম কখনো লাগামহীন ভোগবাদ কিংবা আত্মকেন্দ্রিক বৈরাগ্যবাদে সমর্থন দেয় না। দায়িত্ববোধ ও আধ্যাত্মিকতায় ইসলামের বাণী সামঞ্জস্যশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ। যৌক্তিকভাবেই বিশ্বময় এর আবেদন অপরাপর সভ্যতার কাছে ঈর্ষণীয়।
খাওয়া-পরা, শোয়া-বসা, আচার-আচরণ সব ক্ষেত্রেই ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। অথচ আমাদের নতুন প্রজন্ম এ ব্যাপারে অবগত নয়। এমতাবস্থায় পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য মেকি রূপ উন্মোচন ও ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা, তাহযিব-তামাদ্দুন স্পষ্ট করে তুলে ধরা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে।
সত্যিকার ওলামায়ে কেরাম এই কর্তব্য উপেক্ষা করতে পারেন না। ব্যক্তি-উদ্যোগ, সংস্থা, আন্দোলন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন। দাওয়াতুল হক সেই ধারাবাহিক মিশনেরই এক অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
প্রতিষ্ঠা-প্রেক্ষাপট
দাওয়াতুল হককে পুরোপুরি বুঝতে হলে সংশ্লিষ্ট সমাজের তৎকালীন ধর্মীয় অবস্থা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনা দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এর লক্ষ্য ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানাও অপরিহার্য। এছাড়া কোনো আন্দোলন, সংস্কারের যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। বৃটিশ ঔপেনেবিশিক শাসনামলে ভারতীয় মুসলিম সমাজকে বেশ কয়েকটি প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। মোটা দাগে তার চারটি অবস্থাকে চিহ্নিত করা যায়।
এক. বৃটিশ কালচারাল আগ্রাসন। এর শিকার শুধু মুসলিম সমাজই নয়, নিখিল ভারতের সব ধর্মই এর অন্তর্গত। হিন্দু সমাজের জন্য তা আশীর্বাদ হতে পারে। কিন্তু মুসলিম সমাজের জন্য তা ছিল ন্যাক্কারজনক।
দুই. আনুষঙ্গিকভাবেই ইসলামি শিক্ষাকে তখন ধরে রাখা সম্ভব ছিলো না। ফলশ্রুতিতে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ-মূর্খ মুসলমানরা নানা প্রকার বিদয়াত, কু-সংস্কারের প্রতি ঝুঁকতে থাকে। মুসলিম তরুণ-প্রজন্ম পাশ্চাত্য শিক্ষায় আকৃষ্ট হয়।
তিন. একদল সুবিধাভোগী, স্বার্থান্বেষী মহল ইসলামের বেশ ধরে আবির্ভূত হয় যাদের প্রচার প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে সাধারণ মানুষ আলেমদের সংশ্রব থেকে দূরে সরতে থাকে। দীনের সঠিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়। রেজভি, কাদিয়ানি, চকড়ালভি প্রভৃতি এদেরই সুগঠিত রূপ।
চার. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটিশ শাসনামলের শেষের দিকে চতুর্থ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যার সাথে সম্পর্কিত ছিল মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত গোটা মুসলিম এলাকা। সমাজতন্ত্রের বেপরোয়া দাপট আর গোলামি আদর্শে স্বল্পপ্রাণ ঈমানের অধিকারী মুসলমানদের পা তখন টলটলায়মান। শুরু হয় ধর্মবিদ্বেষ আর নাস্তিক্যের সয়লাব।
মুসলমানদের মধ্যে ঈমানি শক্তির অভাবে মুসলিম ঐতিহ্যবাহী বড় বড় ভূখন্ড (বুখারা-সমরকন্দ প্রভৃতি) সোভিয়েত রাশিয়ার করতলগত হয়; আর চির সুমহান ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষুধা-সর্বস্ব কৃত্রিম জীবনে নিপতিত হয়ে নিস্তেজ হতে থাকে।
জাতির এহেন ক্রান্তিকালে রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠা, উম্মাহর অধঃপতন রোধ, কাঙ্খিত উন্নতি ও বিদয়াত-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় দাওয়াতুল হক। তাই উপমহাদেশের ধর্মতাত্ত্বিক আন্দোলনে দাওয়াতুল হক-এর গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়।
দাওয়াতুল হক গতানুগতিক কোনো সংগঠন নয়। এটি একটি সংস্কার-মূলক কার্যক্রম। ইসলামকে নির্মল, নিষ্কলুষ ও মূলানুগ রাখতে সংস্কারের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিরোধানের পর ইসলামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হকপন্থী আলেমদের ওপর বর্তায়।
ইতিহাস রোমন্থন করলে দেখা যায়, সাহাবিদের যুগ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম চিন্তাশীল ইসলামের ধারক-বাহকের ভূমিকা পালন করে আসছেন। মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি ভূখন্ডেরই অল্প-বিস্তর সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের পর গোটা মুসলিম-বিশ্বে সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা যৌক্তিক অর্থেই প্রকট হয়ে ওঠে।
ভারত উপমহাদেশেও সংস্কার আন্দোলন কম হয়নি। সর্বপ্রথম উল্লেখ করা যেতে পারে দীনে এলাহি বিরোধী আন্দোলন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট আকবর নিজ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার স্বার্থে দীনে এলাহি নামে নতুন ধর্মের চর্চা শুরু করে। পাঞ্জাবের শায়েখ আহমদ সেরহিন্দ রহ. এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে তা ইসলামি সভ্যতায় আমূল সংস্কার সাধন করে। শায়খ আহমদ সেরহিন্দ রহ. মুজাদ্দিদে আলফে সানি উপাধী লাভ করেন।
ফরায়েজী আন্দোলনের কথা অল্পবিস্তর সবাই জানেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ. এর ভাবধারায় তারই সুযোগ্য সন্তান শাহ আব্দুল আজিজ রহ. এর অনুপ্রেরণায় শরীয়তপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ. উক্ত আন্দোলন পরিচালনা করেন। বৃটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার শুরুলগ্নে ইসলামের সিংহপুরুষ শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ. ভারতবর্ষকে দারুল হরব (শত্রু কবলিত রাষ্ট্র) আখ্যা দেন এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন।
পাশাপাশি মুসলিম জাতির সর্বস্তরে ইসলামি জ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে তিনি এক বিশেষ ধরনের আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের ক্রিয়া বৈপ্লবিক আকারে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ. উপমহাদেশের মুসলমানদের তাত্ত্বিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক অধঃপতনের প্রকৃত কারণ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্যই তিনি উপমহাদেশের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিরলসভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
একই পথপরিক্রমায় ১৩৫৮ হিজরীতে হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর দূরদর্শী চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দাওয়াতুল হক। উম্মাহর অধঃপতন রোধ, সমাজের সর্বস্তরে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা এবং বিদয়াত-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এর প্রধান লক্ষ্য। একটি আত্মমর্যাদাশীল স্বাধীন, স্বতন্ত্র্য জাতিসত্তার বিকাশে দাওয়াতুল হক সত্যিকারার্থেই মোক্ষম ও সময়য়োপযোগী পদক্ষেপ।
প্রজ্জ্বলিত তিন নক্ষত্র
প্রধান নক্ষত্র : প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনার কালজয়ীগ্রন্থ বেহেশতী জেওর দিয়ে উপমহাদেশের প্রতিটি ঘরে যিনি স্থান করে নিয়েছেন, যার আবেদন আজও ব্যাপক বিস্তৃত তিনিই দাওয়াতুল হক-এর প্রধান নক্ষত্র, হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.।
ভারতের থানাভবন এলাকায় ১২৮০ হিজরিতে জন্ম নেয়া এ মহান বুযুর্গ যে একদিন মদিনার মশাল হাতে বৃটিশ অন্ধকার দূর করবেন তা কে-ই বা ভাবতে পেরেছিলো। তাই তো তিনি শ্রদ্ধাভরে হাকিমুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তার কলম-কণ্ঠ উভয়টিই ছিল গতিময় ।
পৃথিবীকে উপহার দিয়ে গেছেন অকল্পনীয় এক বিশাল কিতাব-ভান্ডার। ছোট-বড় মিলিয়ে যার সংখ্যা সহস্রাধিক।অবশেষে ঘটনাবহুল ও কর্মমুখর এই মহামনীষী ১৬ রজব ১৩৬২ হিজরি সনে ইহলোক ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান।
দ্বিতীয় নক্ষত্র : মাত্র ২৩ বছর বয়সে যিনি বিশ্ববিখ্যাত আলেম হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর খেলাফতপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, অচিরেই আরেক থানভীর আবির্ভাব ঘটছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মুফতিয়ে আযম (পাকিস্তান) আল্লামা শফী সাহেব রহ. বলে উঠলেন, ‘উনি তো থানভী সাহেবেরই প্রতিচ্ছবি।’ তখন থেকেই আলেম সমাজের দৃষ্টি কাড়েন এই মহান বুযুর্গ। আল্লামা শাহ আবরারুল হক রহ.। সারা বিশ্বে হারদুঈ হযরত নামেই যিনি সমধিক পরিচিত।
ভারতের হারদুঈতে ২০ ডিসেম্বর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা এ মনীষী একদিন দাওয়াতুল হকের হাল ধরেন। দেশ-দেশান্তর সুন্নাতের মিশন নিয়ে সফর করেন। নক্ষত্রের মতো পথহারাদের পথ দেখান। বলা যায় আমাদের বাংলাদেশে আজকের দাওয়াতুল হক তারই মেহনতের ফসল। ১৭ মে ২০০৫ ইং মঙ্গলবার রাত আটটায় তিনিও প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।
বর্তমান নক্ষত্র : পাকিস্তান কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাক’ থেকে রেকর্ড করা ছাত্রটি যখন বাংলাদেশে আসেন তখনও তেমন পরিচিত হয়ে উঠেননি। তাই বলে রত্ন চিনতে ভুল করেননি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ হারদুঈ হযরত। ভুল করেননি দাওয়াতুল হক এর গুরুদায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। তিনিই আজকের মহান নক্ষত্র মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান (দামাত বারাকাতুহুম)।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুলাই জন্ম নেয়া এ মহান ব্যক্তি মোমেনশাহীর চরখড়িচায় বেড়ে ওঠেন। কৈশরে মা-বাবা হারানো দুরন্ত ছেলেটাই যে একদিন বাংলাদেশের গর্ব হবে কেউ কি তা ভাবতে পেরেছিল। বাবা জনাব গালিমুদ্দীন ও মা ফাতিমা রমযানী হয়তো এমনটিই স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, তাদের ঘরেই প্রস্ফূটিত হবে মদিনার সুবাসিত ফুল।
এ মহামনীষীও পৃথিবীকে উপহার দিয়ে যাচ্ছেন একে একে মহামূল্যবান সব গ্রন্থ। তার আরবি ভাষায় রচিত ‘আর-রদ্দুল জামিল’ গ্রন্থটি আরববিশ্বে সবচেয়ে সাড়া জাগানো কিতাব। এছাড়াও দাওয়াতুল হক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তার স্বলিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশত পেরিয়ে গেছে। তার মধ্যে তাফসিরে বুরহানুল কোরআন, নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসা, হায়াতে উসমান, জান্নাতি দশ যুবক প্রভৃতিউল্লেখযোগ্য।
কলম থেমে নেই। অবিরাম চলছে তার ক্ষুরধার লিখনি। লেখালেখি, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা এবং সুন্নাতের তালিম দেয়াকেই তিনি নিজের সবচেয়ে বড় মিশন মনে করেন। তার অদম্য স্পৃহা ও অক্লান্ত পরিশ্রমেই আজকের দাওয়াতুল হক-এর এই বিশাল আয়োজন। আমরা তার কর্মমুখর দীর্ঘ হায়াত ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম: উম্মাহর অধঃপতন রোধ, কাঙ্খিত উন্নতি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে দাওয়াতুল হক-এর রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি। সেসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই সে তার নানা রকম কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছে।
যেমন ক. পেশাব-পায়খানা, ওজু-গোসল, আজান-ইকামত, দোয়া-নামাজ, পানাহার ইত্যাদির সুন্নাত তরিকার বাস্তব প্রশিক্ষণ।
খ. শিশু শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা ও মহিলাদের ধর্মীয় শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
গ. পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত মাশক, দোয়া-দরুদ এবং জরুরি মাসয়ালা-মাসাইল শিক্ষাদান।
ঘ. এক মিনিটের মাদরাসার তালিমের মাধ্যমে মানুষকে নেক আমলের প্রতি আগ্রহী ও গুনাহর কাজের প্রতি ঘৃণাবোধ তৈরি এবং নিত্য দিনের আত্যাবশ্যকীয় মাসয়ালা-মাসাইল শিক্ষাদান।
ঙ. বিদয়াত-কুসংস্কার অপসারণের লক্ষ্যে ওয়াজ-নসিহত অব্যাহত রাখা এবং একাজের জন্য সতন্ত্র জামাত তৈরি করা ইত্যাদি।
দাওয়াতুল হকের ব্যবস্থাপনা : দাওয়াতুল হকের কর্মসূচি ও কার্যক্রমে ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে মজলিসুল উমারা, থানা ভিত্তিক হালকা, মজলিসে আম, কর্মী মজলিস, গাশতি মজলিস, ইসলাহী মজলিস, মজলিসুল ইফতা, মজলিসুল উলামা ওয়াল আইম্মা, তারবিয়াতুল মুয়াল্লিমিন ইত্যাদি বাস্তবায়িত রয়েছে।
মজলিসুল উমারা : মজলিসুল উমারা হলো, দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরামর্শ মজলিস। তার যাবতীয় কার্যক্রম এই মজলিসের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হয়। ঢাকার বিভিন্ন থানার আমির ও নায়েবে আমিরদের সমন্বয়ে এই মজলিস গঠিত। প্রয়োজনে মজলিসুল উমারার পরামর্শে নতুন এজাজি সদস্য নিয়োগেরও অবকাশ রয়েছে।
মজলিসুল উমারার কার্যক্রম : মজলিসটি প্রতি আরবি মাসের ১ম শুক্রবার সকাল ৮টায় দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের মারকাজে অনুষ্ঠিত হয়। এর কার্যক্রম নিম্নরূপ :
ক. মালফুযাত ও আল্লাহ ওয়ালাদের জীবনী পঠন, খ. আজান-ইকামত, সুরা-কিরাত ও নামাজের সুন্নাত তরিকার বাস্তব প্রশিক্ষণ, গ. বিভিন্ন হালকার পেশকৃত রিপোর্ট সংগ্রহ ও পর্যালোচনা, ঘ. প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসাইল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর, ঙ. বিগত মজলিসের কার্যাবলি পঠন ও অনুমোদন, চ. দাওয়াতুল হকের কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরামর্শ ও নির্দেশনা দান ইত্যাদি।
মজলিসে আম : স্থানীয় হালকার তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে অন্তত দুটি মজলিসে আম অনুষ্ঠিত হয়। এ মজলিসের লক্ষ্য হলো, মসজিদ-মাদরাসা ও বিভিন্ন স্থানে হালকার কর্মীদের সহযোগিতায় মুসলমানদের মধ্যে দীনি চেতনা সৃষ্টি এবং দাওয়াতুল হকের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকা।
কর্মী মজলিস : প্রতি মাসে অন্তত দুটি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। এর অন্যতম লক্ষ্য হলো, কর্মসূচি বাস্তবায়নে হালকার কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ দান, জরুরি দিক নির্দেশনা ও কর্মী বৃদ্ধির প্রচেষ্টা।
ইসলাহী মজলিস : এ মজলিস প্রতি মাসে কমপক্ষে ১বার অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষের বাহ্যিক ও আত্মীক পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে সবগুজারি, দোয়া-দরুদ, জিকির-ইস্তেগফার, অজিফা পাঠ ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও সুন্নাতের বাস্তবিক অনুশীলনে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়।
মজলিসুল ইফতা : এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মজলিস। ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসার বিশিষ্ট মুফতি সাহেবদের সমন্বয়ে প্রতি মাসে অন্তত ১বার অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত মুফতিয়ানে কেরাম উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা করে সঠিক ফতওয়া প্রদান করেন।
এছাড়াও মজলিসুল উলামার প্রশ্নগুলোরও উত্তর প্রদান করা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা মাসিক আল জামিয়ায় প্রকাশ ও সংরক্ষণ করা হয়।
বার্ষিক ইজতেমা : দাওয়াতুল হকের কর্মসূচির বাস্তব প্রশিক্ষণ ও প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর কেন্দ্রীয়ভাবে বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওলামায়ে কেরাম, ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ইজতেমা উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং তার কার্যক্রম দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও দাওয়াতুল হকের বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, আগামী ৯ মার্চ ২০১৯। শনিবার। সভাপতিত্ব করবেন মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান সাহেব (দামাত বারাকাতুহুম)। আল্লাহ তায়ালা ইজতেমাকে কামিয়াব করুন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য তাকে মুক্তির উসিলা হিসেবে কবুল করুন।
লেখক : মুফতি ও উস্তাদ, ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ
জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
-এএ