রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৫ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ঘূর্ণিঝড়ের সময় করণীয় আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী।।

বাংলাদেশের দিকেই দ্রুততার সঙ্গে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আজ সন্ধ্যায় এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ইতোমধ্যে সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার ভোর থেকেই ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বইছে। রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলায় এমন পরিস্থিতি।

আবহাওয়া অফিস আরো জানিয়েছে, সিত্রাং আরও ঘনীভূত উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মধ্যরাতের পর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক এমন দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।

পবিত্র কুরআনে মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিতে, তার নির্দেশে বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সুরা আল-বাকারা, আয়াত নং- ১৬৪)।

তবে মানুষের গুনাহ ও কৃতকর্মের কারণেই এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে থাকে। সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেশি আশঙ্কা থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'জল-স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল।' ( সুরা রুম, আয়াত নং- ৪১)।

তাই বিভিন্ন হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচলিত হয়ে পড়তেন।

আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করতেন এবং সাহাবাদের তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

এ জন্য ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আগমনে আমাদেরও এ আমলগুলোর প্রতি যত্মবান হওয়া কর্তব্য। বিশেষত অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন।

জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা।' অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামনাকরি। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।' (সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ্)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন- اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাবলা যা-লিকা।'

অর্থ: 'হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও।' (জামে তিরমিজি)।

ঝড় বা বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে- ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ
উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।'

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।' (সহিহ বুখারি)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন। আমিন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক, আলেম ও কলেজ শিক্ষক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ