শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ: কয়েকটি প্রশ্ন ও প্রস্তাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লুৎফে রাব্বি আফফান।। সৌদি আরবে গত সপ্তাহে যে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে মোট ৫ ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশী প্রতিযোগী হাফেজ তাকরিম চতুর্থ ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। তা হচ্ছে: ‘তাজভীদ ও সুন্দর সুরের মাধ্যমে ধারাবাহিক পনেরো পারা মুখস্থ’ বিভাগ।

এর পুর্বে তৃতীয় ক্যাটাগরি হচ্ছেঃ "তাজভীদ ও সুন্দর সুরের মাধ্যমে পূর্ণ কুরআন মুখস্থ" বিভাগ। পৃথিবীর যে দেশের প্রতিযোগিতাই হোক সাধারণত বাংলাদেশের হাফেজগণ এই দুই বিভাগেই অংশ নিয়ে থাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগে তাজভীদ ও সুরের পাশাপাশি ইলমুল কিরাআত ও তাফসিরের কথাও যুক্ত রয়েছে। এসকল বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানা যায়না।

আমরা যদি প্রতিযোগিতার নামের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব, এর পূর্ণ নাম হচ্ছেঃ কিং আব্দুল আজিজ কুরআনের হিফজ, তেলাওয়াত ও তাফসীরের প্রতিযোগিতা। চলতি বছর এর ৪২তম আসর সমাপ্ত হল। তারমানে প্রায় চার দশক ধরে এই প্রতিযোগিতা চলছে এবং ২/৩ দশক থেকে বাংলাদেশী প্রতিযোগীরাও অংশ নিয়ে পুরস্কার অর্জন করছেন।

প্রথম প্রশ্ন হল, এই দীর্ঘ সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগে কেন বাংলাদেশী হাফেজদের অংশগ্রহণ নেই?

এর একমাত্র কারণ বলা যায়, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইলমুল ক্বিরাআতের চর্চা নেই। প্রতিযোগিতার প্রথম ক্যাটাগরিতে যে "শাতিবিয়্যাহ" কিতাবের নাম ও ত্বরিক বলা হয়েছে তা কি ও কেন তাও অধিকাংশ হাফেজগণ জানেন না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, বাংলাদেশের সাধারণ মহলে ইলমুল ক্বিরাআতের পরিচিতি না থাকলেও এসকল প্রতিযোগিতার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা কেন এই বিষয়ে উদ্যোগী হলেন না?

প্রায় দুই দশকেরও অধিক সময় যাবৎ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ছাত্ররা যাচ্ছে, পুরস্কার পাচ্ছে। কিন্তু তারা শুধু হিফজের সবচেয়ে সহজ ক্যাটাগরি নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে। তাদের দায়িত্বশীল শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানও তাদের সেদিকে আগ্রহী করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের দেশে ক্বিরাআত বলতে এখনো 'কানে হাত দিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চোখ বুঁজে গলা ফাটিয়ে' তেলাওয়াতকেই বুঝে মানুষ। তাদের এই অবস্থার পরিবর্তনে কী ভূমিকা রেখেছেন এসব বিশ্বজয়ী হাফেজ বা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো?? নাকি শুধু স্রোতে গা ভাসিয়ে আখেরে পকেট ভারিই করে গেছেন?
উদাহরণস্বরূপ বলি...

হাফেজ তাকরিম নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সম্পদ। সে ইতিপূর্বেও দুই দেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে এসেছে। তারপরও কেন সৌদি আরবের প্রতিযোগিতায় তাকে চতুর্থ বিভাগে অংশ নিতে হল? কেন এতদিনেও তাকে ইলমুল ক্বিরাআতের বিশেষজ্ঞ কারো মাধ্যমে (অনলাইনে হলেও) প্রস্তুত করা হলনা?

কেউ হয়তো বলবেন, অল্প বয়সের বাচ্চা তাই। কিন্তু যে বাচ্চা ছেলে এটুকু বয়সে এত বড় অর্জন করতে পারে তাকে সঠিক পরিচর্যা দিলে অবশ্যই পারত, যেমনটা আরব বাচ্চাদের দেয়া হয়ে থাকে।

আমরা শুধু তাদের দেখেই যাই, আর সবচেয়ে সহজ বিভাগে অংশ নিয়ে বিশ্বজয়ের আত্মতৃপ্তিতে ভুগি।

তৃতীয় প্রশ্ন, হিফজ - হুফফাজদের নামে যে অজস্র সংগঠন আছে, শাস্ত্রীয়ভাবে ইলমুত তাজভীদ ও ইলমুল ক্বিরাআত চর্চায় তাদের ভূমিকা কী?
দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নানারকম অনুষ্ঠান তারা আয়োজন করেন। তাদের অনেকে এসব পদ - পদবী নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নায়ক - গায়কদের সাথে কুরআনের অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। কিন্তু "উলুমুল কুরআন" (তাজভীদ - ক্বিরাআত - তাফসীর) বিষয়ে তাদের জ্ঞানচর্চা কতটুকু??

বরং দুঃখজনক কথা হল, যারা বাংলাদেশে ইলমুল ক্বিরাআত চর্চার উদ্যোগ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তারা পদেপদে এসব সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত বা আশাহত হয়েছেন।

শেষকথা কুরআন চর্চা ও কুরআনের প্রতি ভালবাসার যে জোয়ার উঠেছে, সময় এসেছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইলমুল ক্বিরাআতকে শেখা ও শেখানোর। শুধু মাকামাতি সুর নয়; শাস্ত্রীয়ভাবে

দশ ক্বিরাআতকে শেখা জানা ও পড়ার প্রয়োজন এখন। সস্তা জনপ্রিয়তা ও দুটো পয়সা কামানোর মোহে বিশ্বজয়ী হাফিজদের না খাটিয়ে তাদের এই পথে মেহনত করানো হোক।

কারী আব্দুল বাসেত, মাহমুদ খলিল হুসারি, মিনশাভী বা সুদাইস, শুরাইম, মাহের উকাইলির সুর শুনিয়ে হিফজখানা চালানোর পরিবর্তে তাদের সনদে ইলমুল ক্বিরাআতের চর্চা করা হোক। হিফজ ও হুফফাজ সংশ্লিষ্ট সকলে এই বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিবেন বলেই আশা রাখি।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ