শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

জ্ঞানভাপীর রায়ের পর এবার নজর শাহী মসজিদ ও কুতুবমিনারে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম: ভারতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মামলা চলার পর সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেওয়ার পর একের পর এক মুসলিম স্থাপত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সোমবার জ্ঞানভাপীর মসজিদে রায় হাওয়ার পর মথুরার শ্রীকৃষ্ণজন্মভূমিতে অবস্থিত শাহী মসজিদ নিয়ে আদালতে মামলা হওয়ার পর এবার ফোকাস রাজধানীর বিখ্য়াত ইসলামিক স্থাপত্য কুতুব মিনারের উপর।

জ্ঞানভাপীর পর এবার নজরে শ্রীকৃষ্ণ-জন্মভূমি-শাহী মসজিদ ইদগাহ এবং কুতুবমিনার। জ্ঞানভাপী-শৃঙ্গার গৌরী মামলায় বারাণসীর জেলা আদালতে সোমবার বিচারক একে বিশ্বেশের একক বেঞ্চ জানিয়ে দেয় হিন্দুপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে মামলা চলবে।

মুসলিম পক্ষ ইন্তেজামিয়া কমিটির আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। এই রায়ে উৎসাহিত হিন্দুপক্ষের মামলাকারী মহিলারা নৃত্য প্রদর্শনও করেন। অন্যদিকে, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড আদালতের এই সিদ্ধান্তকে হতাশাজনক বলে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের দাবি এই মামলায় ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

অন্যদিকে, আজ আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হতে চলেছে। শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি-শাহী মসজিদ ঈদগাহ বিরোধ সংক্রান্ত রিভিউ পিটিশনের শুনানি ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছিল আদালত।

এই মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী রাজেন্দ্র মহেশ্বরী ও মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জানান, সোমবার ঈদগাহ আয়োজক কমিটির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট তনভীর আহমেদ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি ট্রাস্ট ও জন্মস্থান সেবা সংস্থার প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মুকেশ খাণ্ডেলওয়াল ও বিজয় বাহাদুর সিং উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে নোটিশ না দেওয়ার কারণে তাদের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ফলে শুনানি হতে পারেনি।

হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অযোধ্যায় যেমন রাম, মথুরায় তেমনই জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই স্থান হলো কাটরা স্তূপ। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানসংলগ্ন শাহি ঈদগাহ মসজিদ। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের মতো শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানও মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ধ্বংস করা হয়। গড়ে তোলা হয় ঈদগাহ মসজিদ। গত বছর মথুরা দেওয়ানি আদালতে আইনজীবী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী ও আরও ছয়জন মসজিদের মালিকানা দাবি করে মামলা করেছিলেন। এ ছাড়া ওই মামলা ১৯৯১ সালের তৈরি ধর্মস্থান আইনের পরিপন্থী।

এবার মামলা হয়েছে জেলা আদালতে। মন্দির-মসজিদের আওতায় থাকা মোট ১৩ দশমিক ৩৭ একর জমির পূর্ণ মালিকানা দাবি করে বলা হয়েছে, অতীতে মন্দির ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে যে বোঝাপড়া হয়েছিল, তা ছিল বেআইনি। তাই জমির পূর্ণ মালিকানা মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কৃষ্ণের জন্মস্থানের আওতায় আছে ১১ একর জমি, মসজিদের অধীনে ২ দশমিক ৩৭ একর।

অন্যদিকে, মঙ্গলবারই দিল্লিতে কুতুবমিনার পরিসরে পূজার অনুমতির দাবি সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে দিল্লির সাকেত আদালতে। এর আগে মহেন্দ্র ধোয়াজা প্রসাদ সিংয়ের আইনজীবীরা শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত না থাকার কারণে শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছিল।

তবে মঙ্গলবার সেই আবেদনের উপর শুনানি হবে যেখানে এক ব্যক্তি আগ্রা থেকে মেরঠ পর্যন্ত সমস্ত জমিকে পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন, সুতরাং কুতুব মিনারেরও ওপরও তাঁর অধিকার আছে বলে আদালতে হলফনামা দাখিল করেছিলেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ করা হয়েছে বারোশো শতাব্দীতে যে কুতুবুদ্দিন আইবক, দিল্লিতে সুলতানশাহি স্থাপনের আগে সেখানে জৈন তীর্থঙ্কর ভগবান ঋষভ দেব-এর উপাসনাস্থল-সহ ভগবান বিষ্ণু, গণেশ, শিব, সূর্য, হনুমান দেবী গৌরী-সহ মোট ২৭ টি মন্দির ছিল। সেইসব মন্দির ভেঙে কুতুবুদ্দিন আইবক এই মিনারটি তৈরি করেছিলেন।

সেইসব দেবদেবীদের সেখানে পুনঃস্থাপন এবং তাদের যথাযথ আচার-অনুষ্ঠান সঙ্গে পূজা করার অধিকার চাওয়া হয়েছে মামলায়। সেইসঙ্গে ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট অ্যাক্ট অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকারকে কুতুব মিনার কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত মন্দির কমপ্লেক্সের পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য একটি ট্রাস্ট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হোক, এমনও বলা হয়েছে মমলার আবেদনে।

আনুমানিক ১১৯৯ সালে কুতুব মিনার তৈরি কর শুরু হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীর এই কাঠামোটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর অন্তর্গত। ইতিহাস বলছে, এই স্মৃতিসৌধটি সুলতানশাহি প্রতিষ্ঠার আগের দিল্লি বা ধিলিকা (দিল্লির আগের নাম)-র লাল কোট দুর্গের ধ্বংসাবশেষের উপরে নির্মান করা হয়েছিল। ৭২.৫ মিটার দীর্ঘ এই মিনারটি বিশ্বের দীর্ঘতম ইট-নির্মিত মিনার।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ