শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মূল: সাইয়্যেদ হুসাইন আল-মুসাওয়ি
ভাষন্তর: মাহদি হাসান কাসেমি

শিয়া ফকিহ ও মুজতাহিদদের মত ও তাদের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি গভীরভাবে অধ্যায়নের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যায় যে, শিয়াদের কেবল একটাই শত্রু। আর তা হলো আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত। এই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে শিয়ারা কয়েকটি নামেই অভিহিত করে থাকে। তার মধ্যে দুটো হলো আম্মা আর নাওয়াসিব। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত বংশগতভাবেই অপদস্ত ও অপবিত্র—শিয়াদের আকিদার মধ্য এটাও অন্যতম। এ কারণেই তারা যখন পরস্পরকে গালি দেয়, বলে: (غطم سني فى قبر ابيك) তোর বাপের কবরে সুন্নী অনুপ্রবেশ করুক।

শিয়াদের দৃষ্টিতে একজন সুন্নী এ পরিমাণ নাপাক যে, সে যদি হাজার বারও গোসল করে, তবে না সে পাক হবে না তার নাপাকি দূর হবে!
আমার সর্বদাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের একটি ঘটনা মনে পড়ে। আমার পিতা সর্বদাই নেক কাজ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। একবার তিনি বাজারে গেলেন এবং একজন মুসাফির পেলেন। নেকি কামানোর অধিক আগ্রহে তিনি তার রাতের অবস্থান ও থাকার জন্য আমাদের গৃহে নিয়ে এলেন। রাতের খাবারের পর কথাবার্তার মাধ্যমে তার সুন্নী হওয়ার কথা জানতে পারলেন। যিনি কোনো এক কাজের তাগিদে নাজফে এসেছেন আবার সকাল হতেই চলে যাবেন। যথারীত রাত্রি যাপন করলেন। সকালে যখন নাস্তা খেয়ে তিনি রওনা হওয়ার ইচ্ছে করলেন, বাবা তার পাথেয়স্বরূপ কিছু টাকাও হাদিয়া দিলেন। মেহমানও আমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে গেলেন। তার গৃহ থেকে বের হওয়ামাত্রই বাবা তার রাত্রিযাপনের বিছানা পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তার খাবারের জন্য প্রদানকৃত পাত্রও খুব ভালোভাবে ধৌত করতে বললেন। কারণ তাদের আকিদাই হলো—সুন্নী নাপাক।

ঘটনাটা আমি উদাহরণস্বরূপই উল্লেখ করলাম। কারণ প্রতিটা শিয়া, তাদের মুজতাহিদ উলামায়ে কিরাম এবং ফুকাহাদের আকিদাই হলো সুন্নী—কাফির, মুশরিক ও শুকুরের মতোই নাপাক।

আহলুসু সুন্নাত সম্পর্কে শিয়াদের কতক আকিদা নিম্মে উল্লেখ করা হলো:
সুন্নীদের সঙ্গে মতবিরোধ করা ওয়াজিব:
১. ক. সুদুক আলি ইবনু আসবাত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার ইমাম রেযা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলেন: আমি যদি কোনো মাসআলার সম্মুখীন হই, আর সে শহরে কোনো শিয়া না থাকে, তবে আমার করণীয় কি? তিনি বললেন: সে শহরের আহলুস সুন্নাহের বড় ফকিহের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, সে যে ফতোয়া দিবে, তার বিপরীত আমল করবে। কারণ এটাই হক। (উয়ুনু আখবারির রিযা—১/২৭৫)

খ. হুসাইন ইবনু খালিদ ইমাম রেযা থেকে বর্ণনা করেন, তারাই আমাদের (শিয়া) অনুসারী, যারা আমাদের নির্দেশ মান্য করে এবং আমাদের মত গ্রহণ করত: আমাদের শত্রু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিরোধীতা করে। যারা এমনটা না করবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২০)

গ. মুফাদ্দল ইবনু আমর বর্ণনা করেন, সে ব্যক্তির দাবি মথ্যিা, যে বলে সে শিয়া অথচ সমর্থন করে সুন্নী। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২০)

পর্ব-২. আহলুস সুন্নাহর কৃতকাজের অনুসরণ করা অবৈধ
যে কাজ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্যতা রাখে, শিয়াদের কাছে সে কাজ করাই অবৈধ। —এ সম্পর্কে হারমালী ‘ওসায়েলুস শিয়া’ গ্রন্থে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ই লিপিবদ্ধ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন যে, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধীতা করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সুতরাং ইমাম সাদিক বলেন: যখন দুটো হাদিসের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হবে, তখন হাদিসদ্বয়কে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের হাদিসের সঙ্গে মিলিয়ে নিবে। সুতরাং যে হাদিস তাদের হাদিস অনুযায়ী হবে, তাকে পরিত্যাগ করবে আর যেটা তাদের বিরোধী হবে, গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন: মতভেদপূর্ণ দুটো হাদিসের ক্ষেত্রে যেটা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিপরীত হয়, তার ওপরই আমল করো।
তিনি আরো বলেন: বিরোধপূর্ণ হাদিসের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধী হাদিসই গ্রহণ করো। কেননা হক তাদের বিপরীতই থাকে।

তিনি এটাও বলেন: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত যে আকিদা ও আমলের ওপর অবস্থান করে, আল্লাহর কসম! সেটা তোমাদের আকিদা ও আমল না। কাজেই তোমরা তাদের বিরোধীতা করো। কেননা তাদের কাছে বাস্তবিক কিছুই নেই।

ইমাম সাদিক আরো বলেন: আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি আমাদের বিরোধী তথা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করে, তার মধ্যে কল্যাণ বলতে কিছুই নেই। তবে যারা আমাদের পথে চলবে, তাদের অবশ্যই আমাদের শত্রুদের বিরোধীতা করতে হবে। কিন্তু যারা (শিয়া হয়েও) আমাদের শত্রুদের কথা বা কাজকে সমর্থন করবে, তাদের সঙ্গে আমাদের না কোনো সম্পর্ক আছে না আমরা তার কোনো কল্যাণের জিম্মাদার।

তিনি এটাও বলেন যে, বিরোধপূর্ণ দু রেওয়ায়েত থেকে তাদের বিরোধী মতকে গ্রহণ করো আর সমর্থক মতকে পরিত্যাগ করো।
ইমাম রিযা বলেন: যখন বিরোধপূর্ণ দুটো হাদিসের সম্মুখীন হবে, তখন আহলুস সুন্নাহর বিরোধীটা গ্রহণ করবে আর সম অর্থের হাদিস পরিত্যাগ করো।

ইমাম সাদিক বলেন: আল্লাহর শপথ! ইস্তিকবালে কিবলার মাসআলা ব্যতীত আহলুস সুন্নাতের কাছে কোনো হকই নেই। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২৫, ২২৬)

হারমালি বলেন: এই প্রকার রেওয়ায়েত এতো বেশি বর্ণিত হয়েছে যে, তার সীমা মুতাওয়াতিরের সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ মুতাআখখিরিনে শিয়াগণ ধারণা করেন, শিয়াদের সমস্ত দলিলই খবরে ওয়াহিদ নির্ভর। সত্যিই তাদের ওপর বিস্ময়। কাজেই তাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, এ সব মুতাওয়াতির রেওয়ায়েত দ্বারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কিতাবে বিদ্যমান সব উসূল এবং নিয়মাবলী প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—৩২)

শিয়ারা সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈনদের অত্যাধিক পরিমাণ গালি ও অভিসম্পাত করে থাকে। বিশেষত হযরত আবু বকর, হযরত উমার ও হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং হযরত আয়শা ও হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ক্রোধ ও অভিসম্পাতের স্বীকার বানায়।

শিয়াদের মধ্য প্রচালিত একটি বদদোয়া রয়েছে: হে আল্লাহ! আপনি কোরাইশ বংশের দুই ভূত আবু বকর ও উমার এবং তাদের দুই তাগূতকন্যা আয়শা ও হাফসার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করুন।

এই বদদোয়া শিয়াদের সব নির্ভরযোগ্য গ্রন্থেই রয়েছে। বিশেষত ইমাম খমিনি প্রতিদিন বাদ ফজর এ বদদোয়া করতেন।

হামযা বিন মুহাম্মদ তাইয়্যার বলে: আমরা আবু আবদুল্লাহর কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন: আল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আবু বকরের ওপর রহমাত বর্ষণ করুক। একবার সে আমীরুল মুমিনীন আলি আলাইহিস সালামকে বলেছিলো: আপনি হাত বাড়ান, আমি আপনার হাতে বায়াত গ্রহণ করবো। তখন তিনি বললেন: এটা কি বাস্তব? সে বললো: কেনো নয়? যখন তিনি হাত বাড়ালেন, তখন মুহাম্মদ ইবনু আবু বকর বললো: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনিই সে ইমাম যার আনুগত্য ফরয। আমার পিতা আবু বকর তো জাহান্নামি। (রিজালে কাশশি—৬১)

এ কথা সবারই জানা থাকা প্রয়োজন যে, ইরানের কাশান শহরে বাগি মেইনরোডের পাশে আলি গরার আল জুনদির একটি মাকবার রয়েছে। যেখানে নামহীন একটি কবরও আছে। আমার ধারণা এটাই দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার রদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতকারী অগ্নিপুজোক আবু লু’লু’ ফাইরুযের কবর। যে কবরখানা বাবা সুজাউদ্দিনের দরবার নামে প্রসিদ্ধ।

চিন্তে করুন: উমার রদিয়াল্লাহু আনহু এর হত্যাকারীকে শিয়ারা কি উপাধী দিয়ে রেখেছে? যে কবরের দেয়ালে লেখা রয়েছে: মরগ বর আবু বকর, মরগ বর উমার, মরগ বর উসমান বা আবু বকর, উমার ও উসমানের উপর মৃত্যু হোক।

এটা এমন একটা কবর—ইরানবাসী যা অত্যাধীক যিয়ারত করে থাক। এবং ঢের ধন সম্পদ দিয়ে থাকে। আমি স্বয়ং সে কবর দেখেছি। ইরানের মন্ত্রীপরিষদের পক্ষ থেকে তার সংস্কারও করা হয়েছে। সে সঙ্গে সেখানে কবরাকৃতির একটি প্রেসও নির্মাণ করেছে। যেখান থেকে সংবাদ পত্র ও কিতাবাদী প্রচারের কাজ করা হয়।

কুলায়নি আবু জাফর থেকে বর্ণনা করে: আবু বকর ও উমার যখন মৃত্যু বরণ করেছিলো, তখন তারা না তাওবা করেছিলো না আমিরুল মুমিনের সঙ্গে কৃত কর্ম স্মরণ করেছিলো! তাদের ওপর আল্লাহ, ফিরিশতা এবং সমস্ত মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক। (রওযাতুল কাফি—৮/৩৪৬)

আলি ইবনু ইউনুস আল বায়াযি বর্ণনা করে: উসমান নংপুষ ছিলো, যার সঙ্গে লোকজন উপহাস করতো। (আস সিরাতুল মুসতাকিম—২/৩০)

ইবনে রজব আল বারাসি বলে: আয়শা খিয়ানত করে চল্লিশ দিনার জমা করে রেখেছিলো। (মাশারিকু আনওয়ারিল ইয়াকিন—৮৬)

এ কারণেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, যদি খোলাফায়ে রাশিদিনদের মধ্যেই এ বদ অভ্যাস থেকে থাকে, তবে আমিরুল মুমিনিন আলি কেনো তাদের হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন? কেনো এতদীর্ঘদিন তাদের রাজত্ব সহ্য করেছেন? তবে কি আলি তাদের ভয় পেতেন?

সাইয়্যেদ জাযায়িরির উক্তিমতে যদি উমার ফারুক রদিয়াল্লাহু আনহুর পিঠে এমন কোনো অসুস্থতাই থাকতো, যার কোনো চিকিৎসা নেই, তবে আমিরুল মুমিনীন কেনো তার মেয়ে উম্মে কুলসুমকে তার সঙ্গে বিয়ে দিলেন? সে অসুস্থতা সত্ত্বেও কি তিনি তার সঙ্গে সহবাস করতে সক্ষম ছিলেন? উমার রদিয়াল্লাহু আনহুর অসুস্থতা আমিরুল মুমিন জানলেন না, অথচ জাযায়িরি সাহেব জেনে গেলেন! বড় বিস্ময়কর কথা এটা! এ সম্পর্কে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সাহস নেই আমার।

কুলায়নি বলে: শিয়ারা ছাড়া সমস্ত মানুষই যিনাকারী পুরুষ ও যিনাকারিনী মহিলার সন্তান। (রওযাতুল কাফি—৮/১৩৫)

এ কারণেই তাদের কাছে আহলুস সুন্নাতের অনুসারীদের হত্যা করা এবং তাদের ধনসম্পদ লুট করা জায়েয আছে।

দাউদ বিন ফারকাদ বলে: আমি আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম, আহলুস সুন্নাতের অনুসারীদের হত্যা করার ব্যপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন: তাদের হত্যা করা জায়েজ। বরং তোমরা এ প্রচেষ্টা করবে যে, তাদের দেয়ালের নিচে চাপা দিয়ে কিংবা পানিতে চুবিয়ে হত্যা করতে। যেন কোনো সাক্ষি না থাকে। (ওসায়েলুশ শিয়া—১৮/৪৬৩, বিহারুল আনওয়ার—২৭/২৩১)

এ রেওয়াতের হাশিয়ায় খমিনি লেখে যে, যদি সম্ভব হয়, তবে তাদের সম্পদ লুট করে আমাদের খুমুস বা এক পঞ্চমাংশ দান করবে।

সাইয়্যেদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি বলে: আলি ইবনু ইয়াকতিন নামক এক বুদ্ধিমান মন্ত্রী একবার আহলুস সুন্নাতের অনুসারী প্রায় পাঁচশ লোকের একটি দলকে জেলে বন্দি করে। অতঃপর তার দাসদের নির্দেশ দিয়ে সে জেলের সাদ ভেঙে ফেলে। ফলে তারা সকলেই মারা যায়। (আল আনওয়ারুন নুমানিয়্যাহ—৩/৩০৮)

আহলুস সুন্নাহের সঙ্গে ঐক্য অসম্ভব

সাইয়্যেদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি বলেন: আহলুস সুন্নাহর সঙ্গে আমরা কোনোদিক থেকেই একমত নই। না তাদের রবের ওপর, না নবি না ইমামের ওপর। কেননা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের রব তিনি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার নবি আর আবু বকর তার খলিফা। তবে রব ও নবি সম্পর্কে আমরা এমনটা বলি না। বরং বলি নবির খলিফার ব্যপারে। কেননা নবির খলিফাই রব। আর আবু বকর না আমাদের রব না তার নবি আমাদের নবি ন। (আল আনওয়ার—২/২৭৮)

সাইয়্যেদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি স্বীয় কিতাবে এ সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় কায়েম করেন। যেখানে তিনি ইমামিয়্যাহকে দ্বীনের হাকিকত বলে উল্লেখ করে আহলুস সুন্নাহর সঙ্গে বিরোধীতা ওয়াজিব হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।

কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে, আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নবি আর আবু বকর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা। যখন এ কথার প্রমাণিকতা হয়ে গেছে, তখন বুঝা যায় যে নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি বড় ভুলের মধ্যে ছিলেন। কেননা তিনি এই রব ও তার রাসুলকে অস্বীকার করেন। আমি সায়্যিদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরির নাম কিংবা কোনো কিতাবের হাওয়ালা উল্লেখ ব্যতীতই ইমাম খোয়ির কাছে (আবুল কাসেম খোয়ি) এমন আকিদা পোষণকারী সম্পর্কে মাসআলা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তখন বললেন: এমন ব্যক্তি আল্লাহ, তার রাসুল ও আহলে বাইতকে অস্বীকারকারী।

ইমাম সুদুক স্বীয় গ্রন্থ ‘আসালুশ শারায়ে’ এর মধ্যে এ সম্পর্কে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন। আইম্মায়ে কিরাম যাকে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমন আবু ইসহাক আরজানি থেকে মারফু সুত্রে একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন: আবু আবদুল্লাহ বলেছেন: আপনি কি জানেন আমরা কেনো আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধী মতকে গ্রহণ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করি? আমি বললাম: না। তিনি বললেন: আলি আল্লাহ তাআলার প্রকৃত দ্বীনকে এ কারণে প্রকাশ করেন নি, যেন মানুষ এ সত্য দ্বীনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করে। কারণ তখন সবাই এ দ্বীনের বিপরীত আমল নিমগ্ন ছিলো। কাজেই লোকজন যখন আলির কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করতো আর তিনি তাদের বিপরীত ফতোয়া দিতেন, তখন জনসাধারণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যেতো।

এ কিচ্ছা পড়তেই তাৎক্ষণিক কতক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। কোনো মাসআলার ক্ষেত্রে যদি অত্যবশ্যকীয়ভাবে জানা যায় যে, আহলুস সুন্নাত সত্যের পথে আছে, তখন কি আমাদের জন্য তাদের বিরোধীতা করা ওয়াজিব? এ প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মাদ বাকির আসসদর আমাকে বলেছিলেন, হ্যাঁ, তখনো তাদের বিরোধীতা করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। যদিও এক্ষেত্রে তাদের বিরোধীতা করা ভুল, কিন্তু তাদের সমর্থন করা এরচেয়েও বড় ভুল।

শিয়াদের এ অপছন্দের ধারা আজ থেকে শুরু হয় নি। আবার এ ব্যপারে তাদের কখনো শীথিলতা করারও সম্ভাবনা নেই। বরং এটা এমন এক ঘৃণাবৃক্ষ, যার শিকড় প্রথম যুগ থেকেই এত গভীরে সমহিত হয়েছে যে, তার গোড়ার নাগাল পাওয়া অসম্ভব।

এ কথার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো: মিকদাদ, সালমান ফারসি ও আবু যর গিফারি রদিয়াল্লাহু আনহুম ব্যতীত সমস্ত সাহাবীদের সঙ্গেই রয়েছে তাদের শত্রুতা। সুতরাং কুলায়নি আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন: রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর তিন সাহাবা ব্যতীত সমস্ত সাহাবাই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলো। তারা হলো আবু যর, মিকদাদ ও সালমান। (রওযাতুল কাফি—৮/২৪৬)
অথচ ইহুদিদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কারা? তাদের উত্তর হবে: মুসার (আ.) আসহাবগণ। যদি খ্রিস্টানদের জিজ্ঞেস করা হয়, মাসিহের উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জামাআত কোনটি? তাদের উত্তর হবে ঈসার (আ.) হাওয়ারিগণ। কিন্তু শিয়াদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের আকিদামতে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি কারা? তারা বলবে মুহাম্মাদের সঙ্গীগণ।

আমরা ইতিহাস পাঠ করলে হালাকু খানের কথা জানতে পারি। যে বাগদাদে এ পরিমাণে মুসলমান হত্যা করেছিলো যে, দজলা নদিতে পানির বদলে রক্ত প্রবাহিত হওয়া আরম্ভ হয়েছিলো। এ পরিমাণই বিভিন্ন ফনের কিতাব সমুদ্র নিক্ষেপ করে নষ্ট করে দিয়েছিলো। এ সব হত্যা ও নিকৃষ্টতম কাণ্ড কায়সার তুসি এবং মুহাম্মদ বিন আলকামি এর পরামর্শে হয়েছিলো। যারা উভয়ে শিয়া এবং আব্বাসীয় খলিফার মন্ত্রী ছিলো। রাজ দরবারে তাদের যথেষ্ঠ প্রভাব ছিলো। কিন্তু আহলুস সুন্নাতের অনুসারীরা এ শাসনস্ত হওয়ার তাদের এ খিলাফত পছন্দ ছিলো না। তাই তারা হালাকু খানের সঙ্গে গোপনে চিঠি আদানপ্রদান করতো। ফলে সে বাগদাদ প্রবেশ করে আব্বাসীয় খিলাফতকে ধুলিস্ম্যাত করে দিয়েছিলো। এ শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটার পরই তারা দুজন হালাকু খানের মন্ত্রী হয়েছিলো। অথচ হালাকু খান ছিলো একজন বেদ্বীন। কাফির।

এ কারণেই ইমাম খমিনি কায়সার তুসি ও মুহাম্মদ বিন আলকামির ওপর সন্তুষ্ট ছিলো। তাদের এই নিকৃষ্ট কর্মকে দ্বীন ইসলামের বড় খিদমত বলে অবহিত করেছিলো। আমরা এ অধ্যায়টাকে নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরির কথা দ্বারাই শেষ করবো। যিনি আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীদের সঙ্গে তাদের অবস্থানের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন:

–শিয়া ইমামিয়াগণ এ কথার ওপর ঐক্যমত যে, আহলুস সুন্নাত কাফির। এমনকি তারা ইহুদি খ্রিস্টানদের থেকেও নিকৃষ্টতম। আর নাসিবি (আহলুস সুন্নাত) হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত হলো আলির ইমামতের ওপর অন্যকারো ইমামতকে প্রাধান্য দেওয়া। (আল আনওয়ারুন নুমানিয়্যাহ—৩০৬)

মোটকথা: শিয়াদের কাছে সুন্নীরা কাফির এবং নাপাক। এমনকি ইহুদি খ্রিস্টানদের থেকেও নিকৃষ্ট। যাদের কোনো আকিদা, আমল কিংবা কথা—কোনোটারই সমর্থক হওয়া সম্ভব নয়। না প্রভুর ক্ষেত্রে, না নবি না ইমাম। সে সঙ্গে সাহাবায়ে কিরামদের ওপর অভিসম্পত ও তিরস্কারের অগ্নিবর্ষণ করা একান্ত কর্তব্য। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে তাদের প্রশংসা করেছেন। তারা দাওয়াত কিংবা জিহাদ—সর্বক্ষেত্রেই রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। রাসুলের সঙ্গে কাফিরকতৃক সর্বদাই পরীক্ষিত হয়েছেন। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমদের গজওয়া কিংবা সারিয়্যায় শরিক হওয়াই তাদের ঈমান ও মুজাহাদার এত বড় দলিল যে, তার বিপরীতে তাদের ঈমানহীনতার ব্যপারে কোনো ফকিহের কোনো প্রমাণই গ্রহনযোগ্য হবে না।

ইরানে যখন রিযা শাহ পাহলভিকে ক্ষমতাচ্যুত করে খমিনি অধিষ্ঠিত হলো, তখন শিয়া ফকিহদের ফতোয়া মোতাবেক প্রত্যেক শিয়া আলিমের জন্য খমিনির যিয়ারতে ইরান হাজির হওয়া অত্যাবশ্যক ছিলো। কারণ তার প্রচেষ্টায়ই এ যুগে প্রথম শিয়ারাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইমাম খমিনির সঙ্গে যেহেতু আমার আত্মিক পরিচয় ছিলো, তাই ফরযের মাত্র আমার ওপর একটু বেশিই ছিলো।

ইমাম খমিনির তেহরান আগমনের পর আমি এক-দেড়মাস অন্তর কম বেশি তেহরান চক্কর লাগিয়েছি। ইরাক থেকে উলামাদের যে দল খমিনির সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলো, আমার সাক্ষাত তাদের থেকে আলাদাই ছিলো। সুতরাং বিশেষ এক মজলিসে আমি খমিনির কাছে বসা ছিলাম। তখন সাইয়্যেদ হুসাইন আমাকে বললো: আমাদের ইমামদের অসিয়াত মোতাবেক নাসিবিদের (আহলুস সুন্নাত) রক্ত প্রবাহিত করার সময় এখন চলে এসেছে। তাদের বাচ্চাদের হত্যা করতে হবে আর মহিলাদের জীবিত রাখতে হবে। তাদের ধনসম্পদও শিয়াদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। মক্কা এবং মদিনা ভূমিকে আমাদের নিঃশেষ করতে হবে—কেননা এটা বর্তমান ওহাবিদের আস্তানা বনে গেছে—পরিবর্তে কারবালাকে পূণ্যভূমিরূপে স্বীকৃতি দিতে হবে। নামাজের জন্যও এটাকে কিবলা বানাতে হবে। আমাদের ইমামদের প্রজ্ঞা দ্বারা এ কাজ অতিতাড়াতাড়িই সমাপ্ত করতে হবে। যে ক্ষমতা অর্জনের জন্য বছর বছর আমরা অপেক্ষা করে এসেছি—তা আজ পূর্ণতা লাভ করেছে। কাজেই অপূর্ণ কাজগুলোই আমাদের পূর্ণতায় রূপ দিতে হবে। -লেখাটি সংকলন থেকে নেয়া।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ