বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: মুফতী ফয়জুল করীম আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পাসের ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৪৯ দিনে কোরআন হিফজ করা বিস্ময় শিশু হাবিবুরকে ছাত্র মজলিসের সংবর্ধনা কাল বাংলাদেশে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, জেনে নিন সফরসূচি আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকার: মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতে ইসলাম পিরোজপুর জেলা শাখা কমিটি গঠিত বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আশ্বাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত: ড. ইউনূস সাতকাছেমিয়া মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী সম্মেলন আগামীকাল থেকে শুরু

তাদাব্বুরে কুরআন: পুনরুত্থান সত্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু সাঈদ: অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, মৃত্যুর পর আমি তো পঁচে গলে শেষ হয়ে যাবো। আমার অস্তিত্ব‌ হয়ে যাবে লীন। তবে আমাকে পুনরুত্থিত করা কীভাবে সম্ভব? মক্কার কাফেরদের মনেও এমন প্রশ্ন জেগেছিল। তাদের মনের প্রশ্নটি কত সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে কুরআন শরীফে!

أإذا متنا وكنا ترابا وعظاما أإنا لمبعوثون আমরা যখন মারা যাবো, পরিণত হবো মাটিতে, অবশিষ্ট থাকবো অস্থিমূলে, তখন আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে?! (সূরা ওয়াকিয়া)

মক্কার মানুষগুলো আজ না থাকলেও তাদের প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে আজো। অনেকের হৃদয়ে আজো সেই সুর বাজে। প্রশ্নগুলো তখন স্বাভাবিক ছিল। তারা বিজ্ঞানের এত জয়-জয়কার দেখেনি।

দেখা পায়নি আবিষ্কারের এত সব উন্নত প্রযুক্তির। তাদের সরল মনের এসব গরল প্রশ্ন তাই সহনীয়। আল্লাহ তাআলা সহজ-সরল উদাহরণ টেনে তাদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন। কখনো বলেছেন, والله الذي أرسل الرياح فتثير سحابا فسقناه إلى بلد ميت فأحيينا به الأرض بعد موتها كذلك النشور
আল্লাহ তাআলা ঐ মহান সত্তা, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। আমি তা অনুর্বর ও মৃত ভূমিতে নিয়ে যাই। মৃত ও অনুর্বর ভূমিকে তা দ্বারা উর্বর ও সঞ্জীবিত করি। পুনরুত্থানও আমি এভাবেই করব। (সূরা ফাতির-৯)

জমিন যখন তার প্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলে, পানি সিঞ্চিত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে সঞ্জীবনী শক্তি ফিরিয়ে দেন। মৃত মানুষকেও সেভাবে সঞ্জীবনী শক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলা পুনরুজ্জীবিত করে তুলবেন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?!

অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فانظر إلى آثار رحمة الله كيف يحيي الأرض بعد موتها إن ذلك لمحيي الموتى وهو على كل شيء قدير
আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি কুশলতা নিয়ে চিন্তা করো, কিভাবে তিনি জমিনকে প্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলার পর সঞ্জীবনী শক্তি দিয়ে জীবিত করেন?! এভাবেই আল্লাহ তাআলা প্রাণশক্তিহীনকে সঞ্জীবনী শক্তি দান করবেন। আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা রুম-৫০)

হ্যাঁ, আমরা যখন আল্লাহ তাআলার কুদরত নিয়ে ফিকির করব, প্রাণশক্তিহীন জমিনের সঞ্জীবন অবলোকন করবো, শিক্ষার দৃষ্টিতে দেখবো ঊষর মরুর বুকে সবুজের হাসি, নিশ্চিত আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হবো, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন।
আচ্ছা! একজন বিজ্ঞানী নতুন একটি জিনিস আবিষ্কার করলেন। তাকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিয়ে জনসম্মুখে আনলেন। অতপর জিনিসটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো। বিজ্ঞানী কি দ্বিতীয়বার সে জিনিসটি তৈরি করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। তবে আল্লাহ তাআলা একবার মানুষ সৃষ্টি করলেন। দ্বিতীয়বার কেন তাকে সৃষ্টি করতে পারবেন না?!

যে বিজ্ঞানী মোবাইল আবিষ্কার করলেন, তার সামনে যদি মোবাইলের প্রতিটি অংশ বিক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়, তিনি কি আবার প্রতিটি জিনিসকে আপন জায়গায় সেট করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। তবে আল্লাহ তাআলা কেন বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলে, সেটা জোড়া লাগিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন না?

অবশ্যই পারবেন। তবে পুনরুত্থানের জন্য আর কি বাকি আছে, যা অসম্ভব?! তবে কেন আমরা স্বীকার করবো না, আল্লাহ তা'আলা পুনরুত্থিত করতে সক্ষম?! আল্লাহ তাআলার সাধারণ এক সৃষ্টি- বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টি স্বীকার করি, আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে কেন তা স্বীকার করি না?

শয়তানের কুমন্ত্রণা অপনোদন করার জন্য আমরা এভাবে ফিকির করতে পারি। তবে একসময় আমাদের মন প্রশান্ত হবে পুনরুত্থান বিশ্বাসে।
কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা এভাবেও চিন্তা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
قال من يحيي العظام وهي رميم قل يحييها الذي أنشاها أول مرة وهو بكل خلق عليم
তার মনে প্রশ্ন জাগে, (সে বলে) জীর্ণশীর্ণ অস্থিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে? আপনি বলে দিন, সেই মহান সত্তা এ অস্থিতে প্রাণসঞ্চার করবেন, যিনি প্রথমবার তাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সুরা ইয়াসিন-৭৯-৮০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,قل كونوا حجاره أو حديدا أو خلقا مما يكبر في صدوركم فسيقولون من يعيدنا قل الذي فطركم أول مرة
বলুন, তোমরা পাথর কিংবা লোহা হয়ে যাও। অথবা অন্যকিছু যা তোমাদের দৃষ্টিতে খুবই কঠিন। অতঃপর তারা জিজ্ঞেস করবে, কে আমাদেরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে? আপনি বলুন, যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন (তিনি তোমাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন।) (সূরা বনী ইসরাঈল-৫১)

বিষয়টি আরো দৃঢ়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে সূরা ইয়াসীনে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أو ليس الذي خلق السماوات والأرض بقادر على أن يخلق مثلهم بلى وهو الخلاق العليم إنما أمره إذا أراد شيئا أن يقول له كن فيكون
যে মহান সত্তা আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তার অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? অবশ্যই (তিনি সক্ষম)। তিনি তো মহাস্রষ্টা ও সর্বজ্ঞ। তার সক্ষমতা এত উঁচু স্তরের, যখন কোন কিছুর ইচ্ছে করেন, বলেন, হয়ে যাও। তৎক্ষণাৎ তার সৃজন সম্পন্ন হয়ে যায়। (সুরা ইয়াসিন-৮১-৮২)

হ্যাঁ, তিনি এতটাই শক্তিমান। আমাদেরকে যখন পুনরুত্থিত করতে চাইবেন, আলাদা কোন সময়ের প্রয়োজন হবে না। বলবেন, ওঠো। আমরা পুনরুত্থিত হয়ে যাবো।

মোটকথা, আমরা যত ফিকির করব, আমাদের সামনে তত উদ্ভাসিত হবে পুনরুত্থান সত্য। অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পুনরুত্থিত করতে সক্ষম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরনের সন্দেহ-সংশয় থেকে মুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ