শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা নারী সাহাবি রুফাইদা রা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাঈয়েদা হাবিবা: করোনা মহামারির প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যখাতে কাজ করা মানুষগুলো এ সময়ে হয়ে উঠেছেন প্রথম সারির দায়িত্ব পালনকারী বা যোদ্ধা। মানুষের সেবা করতে করতেই অনেকে চলে যাচ্ছেন পরপারে। এই সময়ে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা এই শব্দগুলি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে ইবনে সিনা, আল-বেরুনি, আত-তাবারি, আল-রাজি, ইবনে রুশদ, আলী আল মাউসুলি প্রমুখের নাম ইতিহাসের পাতায় বিমুগ্ধ খুশবু ছড়াচ্ছে। তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের কীর্তিমান মহাপুরুষ। তাদের হাতেই চিকিৎসাশাস্ত্রের সূচনা ও জয় হয়েছে। আর তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের ধারণা ও অনুপ্রেরণা নিয়েছেন কোরআন ও হাদিস থেকেই।

গ্রিকদেরকে ঔষধের আবিষ্কর্তা বা প্রবর্তক হিসেবে কৃতিত্ব দেয়া হয়। অথচ তাদের কোন হাসপাতাল ছিল না। চিকিৎসকরা বাড়িতে রোগীদের চিকিৎসা করতেন। শত শত বছর ধরে চলে এসেছে এই প্রচরণ। “হাসপাতাল” শব্দটি প্রথম রোমানরা আবিষ্কার করলেও এটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে।

রুফাইদা আল আসলামিয়া (রা.) একজন মহীয়সী নারী। তিনি ছিলেন এক আনসারী সাহাবিয়া। খাযরাজের শাখাগোত্র আসলামের এক উজ্জ্বল প্রদীপ। সারাজীবন তিনি অন্যের ঘরে আলো জ্বেলেছেন। প্রদীপ-হাতে ঘুরে বেরিয়েছেন। যেখানেই প্রয়োজন-ছুটে গিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের ইতিহাসে মদিনায় প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় স্থাপন করা হয়েছিল প্রথম এই হাসপাতাল। সপ্তম শতকের দিকে এসে তা আরো বিস্তৃতি লাভ করে। মুসলিমরা ব্যাপকভাবে নার্সিং বা স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার ও ওষুধের বিস্তৃতি নিয়ে কাজ করেন। এই সবকিছুর অগ্রভাগে উদাহরণ হিসাবে ছিলেন রুফাইদা আল আসলামিয়া। একজন অনবদ্য মুসলিমা। তিনি ইসলামের প্রথম দিকে বিজ্ঞান আর চিকিৎসার মাঝে অবিসংবাদিত সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।

রুফাইদা (রা.) এর মত আরো অনেক নারী সাহাবী জিহাদের কঠিন মুহূর্তে আহতদের সেবা করতেন। বিশেষত আসলাম গোত্রের নারীরা। এই গোত্রেরই আরেক নারী হলেন উম্মে সিনান আসলামী। নবী (সা.) এর কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন; আহতদের ঘায়ে মলম, পিপাসার্তের মুখে পানি- এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য। নবীজী অনুমতি দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর বরকত নিয়ে বের হও। তোমার কওমের আরো অনেক নারী আছে, আমি যাদেরকে অনুমতি দিয়েছি, তুমি চাইলে তাদের সাথে থাকতে পার। যুদ্ধ ছাড়াও সাধারণ সময়েও মানুষের কাছে তার তাঁবু ছিল বাতিঘরের মত। অসুস্থ মানুষের আস্থার ঠিকানা। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিলো ‘খাইমাতু রুফাইদা’র নাম।

ইতিহাসে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল কে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক হিসেবে ঘোষণা করার প্রায় ১২শ বছর পূর্বে প্রথম মুসলিম নারী নার্স হিসেবে বিবেচনা করে ইতিহাস। ইবনে ইসহাক (রাহ.) বলেন, রুফাইদা (রা.) আহতদের সেবা করতেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অসহায় মুসলমানদের সেবা করতেন। তার মানবসেবা ছিল কোনোরূপ বিনিময় ছাড়া। পার্থিব কোনো স্বার্থ ছাড়া। পরম লক্ষ্য ছিল শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি।

মদিনায় প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম একজন আসলামিয়া। তিনি নবী (সা.) এর আগমানের সময় স্বাগত জানিয়েছেন। তার বাবা একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন করেন তার বাবার কাছ থেকেই। যুদ্ধের ময়দানে সবার অগ্রভাগে দেখা যেতো তাকে। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক এবং অন্যান্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে বেশি আহত ব্যক্তিকে আসলামিয়ার তাবুতে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর পর তিনি জটিল ও কঠিন রোগগুলোকে সহজভাবে চিকিৎসা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতেন। দরিদ্র ও এতমিদের সাহায্য করতেন। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলোও অন্যদের শিক্ষাও দিতেন।

পাকিস্তানের আগাখান বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৮০ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং ভবনটির নামকরণ করা হয় রুফাইদা আল আসলামিয়ার নাম অনুসারে। বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নার্সিংয়ের জন্য বার্ষিক রুফাইদা আল-আসলামিয়া পুরস্কার চালু করেছে। আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস গুলো হতে পারে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ