শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

মোবাইল ফোনে বিয়ের শরিয়ত সম্মত উপায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু বকর ছিদ্দিক: বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে সহজ। পুরো পৃথিবীটা যেন ছোট্ট একটি ঘরের মতো। কিংবা হাতের মুঠোয় সবকিছু। আদিকালে মানুষ মাসের পর মাস ব্যয় করতো যে কাজে; তা এখন নিমিষেই করা সম্ভব। যেমন ধরুণ বিয়ে। মিয়া-বিবি রাজি থাকলে হাজার মাইল দূরে থেকেও বিয়ে করা সম্ভব। হচ্ছেও।

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। ভালোবাসার বিনিসূতোয় মালা গাঁথার অন্যতম মাধ্যম এটি। ইসলাম এ বিষয়ে বরাবরের মতোই উৎসাহ প্রদান করে। সময়ের প্রয়োজনে যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় যেহেতু এখন মোবাইলে বা বিভিন্ন মাধ্যমে ভিডিও কলে বিয়ে হচ্ছে, একে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। তবে যদি আমরা এ কাজটি ইসলামের বাতলানো নির্দেশনা মতো করি তাহলে কিন্তু কোনো জটিলতা থাকবে না। আর ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার মাঝে রয়েছে মানব জীবনের সবকিছুর সমাধান। ইসলাম আরো কোটি বছর পরেও আধুনিক থাকবে। এটাই মহান রবের ইচ্ছে।

মূলত, বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের সাংসারিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করার ইসলামিক চুক্তির নাম। ইসলামে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার  কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক হচ্ছে এক. বিয়ের সময় বরকনের অবস্থান একই স্থানে হওয়া। দুই. শরিয়ত সমর্থিত সাক্ষীর (দু’জন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ দু’জন নারী) সামনে ইজাব-কবুল সম্পাদন করা। এ দুটি বা কোন একটি শর্ত যদি পাওয়া না যায় তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না।

মোবাইল-টেলিফোনে অন্য দেশ থেকে কবুল বলা বা ভিডিও কলের ক্ষেত্রে উল্লিখিত দুটি শর্তের কোন একটিও পাওয়া যায় না। তাই উক্ত অবস্থায় বিয়ে শুদ্ধ হবে না বলে মত দেন ইসলামী ফিকহ বিশেষজ্ঞগণ।

এদিকে কেউ কেউ বলে থাকেন, উক্ত অবস্থায় শর্তদ্বয় পাওয়া যাচ্ছে। কেননা এক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর ছবি দেখা যাচ্ছে এবং কথাও শোনা যাচ্ছে।

আসলে তাদের ধারণা ভুল। বাস্তবতা সত্য হলো, কোনো ব্যক্তির ভিডিও বা কল রেকর্ড সংরক্ষণে রেখে সে মারা যাওয়ার পর উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা ভিডিও কলে বা সাধারণ কলে ব্যবহার করা সম্ভব। আর এর ফলে এর মধ্যে থেকে যায় প্রতারণার সম্ভাবনা; যা ইসলাম কখনও স্বীকৃতি দেয় না। তবে ফোন কল বা ভিডিও কলে বিয়ের রয়েছে শরিয়ত সম্মত বৈধ পন্থা। যেমন-

এক. ছেলে নিজে একজন উকিল নিযুক্ত করবে, অতঃপর মেয়ের দেশে সাধারণ বিয়েগুলোর মতো মজলিস বসিয়ে দুইজন সাক্ষী আর ছেলের নিযুক্ত উকিলের উপস্থিতিতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

উদাহরণ দিয়ে বলি, ‘খালেদ আমেরিকান প্রবাসী। বিয়ে করবে খাদিজাকে। খাদিজা থাকেন বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে খালেদ বাংলাদেশে বর্তমানে বসবাসরত কাউকে টেলিফোনে উকিল (প্রতিনিধি) নিযুক্ত করবে (উকিল আত্মিয়-অনাত্মিয় যেকেউ হতে পারে)। খাদিজার অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হবে। সাধারণ বিয়ের মতই হবে সবকিছু। তবে খালেদের বদলে তার নিযুক্ত উকিল  সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বলবে আমি খালেদের পক্ষ থেকে তার জন্য খাদিজাকে কবুল করছি।’ উক্ত পদ্ধতিতে উভয় শর্ত বিদ্যমান (এক. বিয়ের সময় বরকনের অবস্থান একই স্থানে হওয়া। দুই. শরিয়ত সমর্থিত সাক্ষীর সামনে ইজাব-কবুল সম্পাদন করা)। তাই বিয়ে শুদ্ধ। খাদিজা খালেদের স্ত্রী হয়ে যাবে। তাছাড়া খাদিজাও ইচ্ছে করলে আমেরিকায় নিজের কোনো উকিল বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করে একই পদ্ধতিতে বিয়ে সম্পাদন করতে পারবেন।

দুই. মেয়ের অনুমতি নিয়ে ছেলেকে টেলিফোনে বিয়ের অনুমতি দেওয়া। অতঃপর ছেলে তিনজন ব্যক্তিকে উপস্থিতি করে একজনকে মেয়ের উকিল বানিয়ে, অপর দুইজনকে সাক্ষী রেখে বিয়ে সম্পন্ন করতে পারবে। যার প্রমান হলো হযরত নাজ্জাশী হাবশাতে থেকেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উকিল হয়েছেন। উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবিবা রা. হাবশাতে থাকাকালীনই তাঁর ও নবী সা. এর বিয়ে সম্পন্ন হয়।

টেলিফোনে উকিল নিযুক্ত করতে কোন অসুবিধে নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবেঈদের যুগে চিঠি-পত্র বা ব্যক্তি পাঠিয়ে উকিল নিযুক্ত করা হতো; যা ছিল টেলিফোন থেকেও অনিশ্চিত।

তথ্যসূত্র: দুররে মুখতার ৪/৭৬, দুররে মুখতার ৪/৮৭, ফাতওয়ায়ে শামী ৮/১৩৬, ফাতওয়ায়ে শামী ৮/১৩৮, ফাতওয়ায়ে আলমগীর ৩/৬১০, আল বাহরুর রায়েক ৭/১২১

লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল ইফতা, শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ