শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

কওমি মাদরাসা আসলে কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলিল ।।

কওমি মাদরাসা হল একটি বিপ্লবের নাম। একটি চেতনার নাম। হেরার মশালবাহী মকতবে ফিকরের নাম। হক ও হক্কানিয়্যাতের মজবুত দুর্গের নাম। ইকামতে দীনের পতাকাবাহী নিবেদিতপ্রাণ একদল মর্দে মুজাহিদ তৈরি করার কারখানার নাম। এই পৃথিবী নামক গ্রহে যত ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্য সম্পন্ন হলো কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা। সবচেয়ে নির্ভুল ও সফল ঐতিহ্যের পতাকাবাহী আমাদের এসব কওমি মাদরাসা।

আমাদের এসব কওমি মাদরাসা নতুন কিছু নয়; বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন তারই বর্তমান রূপ হলো আমাদের এসব কওমি মাদরাসা।

যার সূচনা আল্লাহ তাআলার ওহীর মাধ্যমে হয়েছিল। যার শুরু হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে। আর তা পূর্ণতা লাভ করেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। যে শিক্ষা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে মক্কার "দ্বারে আরকামে" ও মদিনার "সুফফায়" দিয়েছিলেন।

যে ইলম "কিতাবুল্লাহ" ও "রিজালুল্লাহ" এর সোনালী সূত্রে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, বুযুর্গানে দ্বীন তথা উলামায়ে হক্কানির মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। কারণ বর্তমানের উলামায়ে কেরাম হলো পূর্ববর্তী নবীগণের উত্তরাধিকার বা প্রতিনিধি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অবশ্যই আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকার। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি; বরং তারা রেখে গেছেন মিরাস হিসেবে 'ইলম'। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।" (সুনানের ইবনে মাজাহ, হাদিস ২২৩)

এসব কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য অনেক গভীরে। তার শিকড়ের মূলে রয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। এবং তার ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বব্যাপী। এসব কওমি মাদরাসায় যে ইলম শিক্ষা দেওয়া হয় তা নিছক কোন ইলম নয়; বরং তা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকামী ইলম।
সাহাবায়ে কেরামের পরিচয় দিতে গিয়ে রোমান গুপ্তচর বলেছিলেন, "তারা হলো রাতের আঁধারে প্রভুর দরবারে কান্নারত। আর দিনের বেলায় অস্বারোহী সৈনিক।" মূলত এর প্রতিকৃতি হল আমাদের এসব কওমি মাদরাসা।

কালের বিবর্তনে, সময়ের সিঁড়ি বেয়ে একসময় ভারতের দেওবন্দে সেই সুফফার আদর্শ ও চেতনাকে লালন করে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দারুল উলূম নামে একটি কওমি মাদরাসা। এই দারুল উলূম দেওবন্দই সেই মক্কার "দ্বারে আরকাম" ও মদিনার "সুফফার" বর্তমান রূপকে লালন করে। এই দারুল উলূম থেকে ইলমে নববীর সুধা পানে পরিতৃপ্ত হচ্ছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

কওমি মাদরাসার অবদান: অল্প কথায় যদি কওমি মাদরাসার অবদানের কথা বলি, তাহলে বলবো: রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে যারা সবচেয়ে বেশি সফল ভূমিকা রাখে এবং রেখেছে তারা হলো কওমি মাদরাসার সন্তান। যদি প্রশ্ন করা হয় মানবিকতা, সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা, উদারতা, কল্যাণকামিতা, সততা ও নিষ্ঠা বাকি রয়েছে তা কাদের অবদানের ফসল? বদর,ওহুদের চেতনাকে বুকে লালন করে কারা? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিধানের সামনে কারো কথার প্রতি কর্ণপাত করে না কারা?

বালাকোটের ময়দানে রক্ত দিয়েছিল কারা? রেশমি রুমাল আন্দোলন করেছিল কারা? ১৮৫৭ এর সিপাহী বিপ্লবের নায়ক ছিল কারা? শ্যামলী প্রান্তরে কাদের রক্ত ঝরেছিল? ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের অগ্রভাগে কারা ছিল? তাহলে এসব প্রশ্নের উত্তরে বলবো, এসব সংগ্রাম কাদের নেতৃত্বে এবং অবদানে হয়েছিল তা আমাদের ভালো করেই জানা আছে। সামাজিক স্মৃতিশীলতা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কওমি মাদরাসার অবদান অতুলনীয়।

আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তারা আজীবন সংগ্রাম করে যায়। কারণ কখনো একথা কেউ বলতে পারেনি, ১ টাকা বাস ভাড়া নিয়ে মারামারি করে ১০০ টা গাড়ি ভাঙচুর অথবা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবচেয়ে বড় অবদান কওমি মাদরাসার। কারণ এখানে ছাত্রদেরকে এই মানসিকতায় গড়ে তোলা হয় যে, "দ্বীনের বিষয়ে জবরদস্তি নেই। হেদায়েতের পথ গোমরাহি থেকে পৃথকরূপে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

এরপর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল। যা ভেঙ্গে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন।" (সূরা বাকারার, আয়াত: ২৫৬) দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসার অবদান সবচেয়ে বেশি।

কারণ এখানে ছাত্রদেরকে গড়ে তোলা হয় এই মানসিকতায় যে, "তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করো না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে মামলা রুজু করোনা যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোন অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে।" (সুরা বাকারার, আয়াত: ১৮৮) অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের কল্যাণে কওমি মাদরাসার অবদান সবার চেয়ে বেশি।

কারণ এসব মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শুধু আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশি করার জন্য। দুনিয়ার কোন স্বার্থে না। তাই এখানে শিক্ষা নিয়ে কোন বাণিজ্য হয় না। বরং এসব কওমি মাদসায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের পাশাপাশি নিঃস্ব ও অসহায় ছাত্রদেরকে বিনা বেতনে ও আন্তরিক খাটনি দিয়ে সত্যিকারের ও আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে তোলা হয়।

এমন শিক্ষাব্যবস্থা মক্কার "দ্বারে আরকাম" ও মদিনার "সুফফার" চেতনাকে লালন করে গড়ে ওঠা কওমি মাদরাসা ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে খুঁজে পাওয়া বড়ই মুশকিল।

শিক্ষক: মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ