শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

কোরবানি কেন? এর উদ্দেশ্য কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহিব্বুর রহমান উসামা।।

আজহা শব্দটির অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আর কোরবান অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য। উল্লিখিত শব্দ এবং অর্থগুলো থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ত্যাগ বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের যে চেষ্টা করা হয় তাকেই ঈদুল আজহা বা কোরবানি বলা হয়।

প্রচলিত অর্থে কোরবানি হলো- পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবাই করা।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সূরা কাওসার, আয়াত-২)

কোরবানীর উদ্দেশ্য

কোরবানির হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। আদি পিতা আদম আ. এর যুগ থেকেই কোরবানির বিধান চালু হয়েছিল। আদম আ. এর দুই ছেলে হাবীল ও কাবীল দু’জনেই কোরবানি দিয়েছিলেন। তাদের একজনের কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে এবং অন্যজনের কোরবানি কবুল হয়নি। পৃথিবীতে কোরবানির ইতিহাস এখান থেকেই শুরু।

কোরআনে এসেছে- আদম আ. দু’পুত্রের একজনের কোরবানি কবুল হওয়ার পর কাবিল (যার কোরবানি কবুল হয়নি) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন হাবিল (যার কোরবানি কবুল হয়) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কুরবানি কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭-২৮)

এ আয়াত দ্বারা বোঝানো হয়েছে কুরবানি কবুল হওয়া ব্যক্তির ভাবাবেগ ও মানসিকতা সম্পর্কে। কেননা কোরবানি তাকওয়াবান লোকদের আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য নিদর্শন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে।’ (সূরা হজ, আয়াত ৩৪-৩৫)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুসলিমদের জন্য কোরবানিকে ইবাদতের একটি অংশ করা হয়েছে। আর জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু দেওয়া হয়েছে তা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টি চিত্তে সমর্পিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আজকের মুসলিম সমাজে যে কোরবানির প্রচলন রয়েছে তা মূলত জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ. এর দেখানো পথ থেকেই। হযরত ইব্রাহীম আ. এর শতবর্ষ বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যে সন্তান দান করেছিলেন, সেই কলিজার টুকরা হযরত ইসমাইল আ.কে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে কোরবানির সূত্র ধরে আজও সেই কোরবানি প্রচলিত আছে।

‘তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইলকে বললেন, ‘হে ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? সে (হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম) বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)

এর পরেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মনে রেখো, এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে সুযোগ দিলাম এক মহান কোরবানির। পুরো বিষয়টি স্মরণীয় করে রাখলাম প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ইব্রাহিমের প্রতি সালাম। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি।’ (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০৬-১১০)

আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম আ. এর পরীক্ষা নিয়েছেন ছেলেকে কোরবানীর আদেশ দিয়ে। যখন সেই পরীক্ষায় তিনি সফল হলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাইলের পরিবর্তে অন্য পশু জবেহ করে পুরস্কৃত করলেন ইবরাহীম আ. কে। আর এইভাবেই প্রতিটি সৎ কর্মীশীলদের পুরস্কৃত করে থাকেন মহান আল্লাহ।

আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের কোরবানীর আদেশ দিয়ে দেখেন, তিনি যা দিয়েছেন তা ত্যাগ স্বীকারে তার বান্দারা রাজি কি না? আবার কী নিয়তে তাঁর বান্দারা উৎসর্গ করছে তাও তিনি পর্যবেক্ষণ করেন।

রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, কোরবানির দিনে মানবসন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহ তায়ালার কাছে এত প্রিয় নয়, যত প্রিয় কোরবানি করা। আর কোরবানির পশুর শিং, পশম ও ক্ষুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) যুক্ত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (তিরমিজি)

অতএব, লোক দেখানো কোরবানি নয়, মুসলিম উম্মাহর কোরবানি হওয়া উচিত পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করা। আবার নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যমও হলো কোরবানি।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ